Advertisement
E-Paper

ক্যানসারে পা গেলেও লড়াই থামেনি

দুরারোগ্য ক্যানসার বাসা বেঁধেছে পায়ে। চিকিত্‌সকেরা উরুর কাছ থেকে পায়ের বাকি অংশ কেটে বাদ দিয়েছেন। তবুও অদম্য জেদে এগিয়ে চলেছেন বর্ধমানের কোড়ার গ্রামের বাসিন্দা, এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কা সামন্ত। প্রিয়াঙ্কার উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েছে স্থানীয় বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়ে।

রানা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০২:২৪
পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে প্রিয়াঙ্কা।— নিজস্ব চিত্র।

পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে প্রিয়াঙ্কা।— নিজস্ব চিত্র।

দুরারোগ্য ক্যানসার বাসা বেঁধেছে পায়ে। চিকিত্‌সকেরা উরুর কাছ থেকে পায়ের বাকি অংশ কেটে বাদ দিয়েছেন। তবুও অদম্য জেদে এগিয়ে চলেছেন বর্ধমানের কোড়ার গ্রামের বাসিন্দা, এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কা সামন্ত। প্রিয়াঙ্কার উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েছে স্থানীয় বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়ে।

পরিবারের সূত্রে জানা গেল, ২০১০ সালে কোড়ার হাইস্কুলের এক অনুষ্ঠানে বেঞ্চ সরাতে গিয়ে বাঁ পায়ে আঘাত পান প্রিয়াঙ্কা। প্রাথমিক ভাবে কিছু বোঝা না গেলেও কয়েকমাস পরেই শুরু হয় পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। মুম্বইতে টাটার ক্যানসার রিসার্চ কেন্দ্রে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্‌সকেরা জানান, পায়ে ক্যানসারের উপসর্গ ধরা পড়েছে। তারই পরিণতিতে উরুর কাছ থেকে বাঁ পায়ের বাকি অংশ বাদ দিতে হয়। তবুও হার মানেননি প্রিয়াঙ্কা। ওই অবস্থাতেও নকল পায়ে আর ক্রাচে ভর করে ২০১৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ভিটে হাইস্কুলে কলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। পড়ার চাপ সামলাতে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন টিউশনেও যেতে হয় প্রিয়াঙ্কাকে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভরসা শুধুই মা আর বাবা। আর শিক্ষক সৌরীন কোনার প্রিয়াঙ্কাকে সাধ্য মতো নোট জোগাড় করে দেন।

খেতমজুর পরিবারের মেয়ে প্রিয়াঙ্কার চিকিত্‌সা চালিয়ে যাওয়ার লড়াইটাও যে বেশ কঠিন তা বোঝা যায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে। বাবা সোমনাথ সামন্ত আশঙ্কা, “প্রতি তিন মাস অন্তর মুম্বইতে গিয়ে কেমো নিতে হয় প্রিয়াঙ্কাকে। তার জন্য ২৫ হাজার টাকা করে লাগে। জানি না আর কতদিন চিকিত্‌সা চালাতে পারব।” পরিবারটির অভিযোগ, মাধ্যমিক পাশ করার পরে কোনও অর্থ সাহায্য মেলেনি সরকারের তরফে। তবে পূর্বতন পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা একবার প্রিয়াঙ্কার হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন।

প্রিয়াঙ্কার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বাড়িটি বেহাল হয়ে পড়েছে। প্রিয়াঙ্কার ঠাকুমা লক্ষ্মীরানি দেবীর আক্ষেপ, “নাতনির চিকিত্‌সা করাব না বাড়ি সারাব।” ভোরবেলা থেকেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার লড়াই শুরু হয় প্রিয়াঙ্কার। মা ছন্দা সামন্ত বলেন, “কাকভোর থেকেই নজরে রাখতে হয় অপারেশন হওয়া জায়গায় ফের যাতে সংক্রমণ না ঘটে।”

এক সময় নাচ আর বাচিক শিল্পে পারদর্শী ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। বাড়ির তাকে সাজানো অজস্র পুরস্কার দেখাতে দেখাতেই প্রিয়াঙ্কার গলা ধরে আসে, “এই সব একটা সময়ে পেয়েছিলাম। এখন কেমন যেন গতজন্মের কথা বলে মনে হয়।” তবে হেরে যাওয়ার পাত্রী নন প্রিয়াঙ্কা। জানা গেল, গ্রামেরই একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ছোট ছেলেমেয়েদের দিয়ে অনুষ্ঠান করান তিনি। এই কাজে প্রিয়াঙ্কাকে সাহায্য করেন সোমনাথ গুপ্ত নামে হাটগোবিন্দপুরের এক শিক্ষক।

বুধবারের পরীক্ষা দিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রিয়াঙ্কা গলায় শেষ পর্যন্ত এক হাল না ছাড়ারই গল্প, “মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকও একটা পা নিয়েই পাশ করব। বাংলা নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হতে চাই। চাই ক্যানসার রোগীদের বিনামূল্যে চিকিত্‌সা করাতে।”

higher secondary exam priyanka samanta cancer patient rana sengupta burdwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy