রূপনারায়ণপুরে খেলার মাঠ ব্যবহার হচ্ছে অন্য অনুষ্ঠানের জন্য।
ঝকঝকে স্টেডিয়াম, সুদৃশ্য সাংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে আধুনিক পার্ক--- বিনোদনের জন্য হাজির সব রকম উপকরণ। চিত্তরঞ্জনে রেল শহরের বিস্তারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকাশ ঘটেছে সেখানকার ক্রীড়া-সংস্কৃতিরও। একই চিত্র ছিল রূপনারায়ণপুরে, যখন হিন্দুস্তান কেব্লস কারখানার রমরমা ছিল। কারখানার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে খানিকটা মরচে পড়েছে সে সবে। সে দিক থেকেও কিলোমিটার তিনেক দূরত্বের এই দুই শিল্প শহরে বেশ খানিকটা ফারাক তৈরি হয়েছে।
আসানসোল থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে কয়েকশো একর জায়গার উপরে রেলের নিজস্ব টাউনশিপ চিত্তরঞ্জন। বাসিন্দাদের যাবতীয় পরিষেবার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তাঁদের জন্য বিনোদনের নানা উপাদানও মজুত রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। রেল ইঞ্জিন কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহ জানান, তাঁদের নিজস্ব ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক দফতর রয়েছে। তাদের পরিচালনায় বছরভর নানা খেলাধুলো ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলে। এলাকায় বেশ কয়েকটি ক্লাব ও গণ সংগঠনও রয়েছে যারা শহরে নানা নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকে।
চিত্তরঞ্জন কারখানার ফুটবল দলের প্রাক্তন খেলোয়াড় তপন দাস জানান, এক সময়ে এখানে শ্রীলতা গোল্ড কাপ নামে একটি মাত্র টুর্নামেন্ট হত। এখন পাঁচটি ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়। তাঁর দাবি, আগের তুলনায় খেলাধুলো নিয়ে আগ্রহ অনেক বেড়েছে। চিত্তরঞ্জন কারখানার ফুটবল দলের একাধিক খেলোয়াড় কলকাতার বড় দলগুলিতে নিয়মিত খেলছেন। চিত্তরঞ্জন জোনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন গড়া হয়েছে। তার সম্পাদক তুষারকান্তি দাস জানান, প্রায় ২০টি ফুটবল দল আছে তাঁদের অধীনে। প্রতি বছর এখান থেকে আটটি দল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সুপার ডিভিশনে খেলার সুযোগ পায়।
চিত্তরঞ্জনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ।
যদিও চিত্তরঞ্জন কারখানা দলের প্রাক্তন ফুটবলার প্রবীর হালদারের আবার মত, খেলাধুলোয় আগ্রহ বাড়লেও মাঠে আগের মতো হৃদয় খুঁজে পান না। তিনি বলেন, “বাঙালি ঘরের ছেলেরা আজকাল মাঠেই আসতে চায় না। তাইতো ফুটবল খেলায় রোমাঞ্চ খুঁজে পাই না।” এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আগের তুলনায় খানিকটা ভাটা পড়লেও একেবারে ছেদ পড়েনি। এখনও প্রতি বছর নিয়ম করে বইমেলা, নাটক ও গানের আসর বসে। তবে রেল শহরের পুরনো বাসিন্দা তথা সঙ্গীতশিল্পী শ্যামাপদ কর্মকারের আক্ষেপ, “এক সময়ে এই শহরে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসরে উপচে পড়া ভিড় হত। কিন্তু এখন আর তেমন শ্রোতা-দর্শক মেলে না।”
চিত্তরঞ্জনে খেলাধুলো, সংস্কৃতির সঙ্গেই উঠে আসে রূপনারায়ণপুরের নাম। এক সময়ে এই দুই শহরের মধ্যে পাল্লা দিয়ে নানা অনুষ্ঠান, আসর বসত। কিন্তু রূপনারায়ণপুরে এখন সেই চিত্র দেখা যায় না। এই এলাকায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত অখিল মজুমদার বলেন, “কারখানার সময় খারাপ চলছে বলে শহরের সংস্কৃতি নষ্ট হবে, তা মানা যায় না। আমাদের নিজেদের উদ্যোগী হয়েই সব কিছু বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”
গাঁটের কড়ি খরচ করে কচিকাঁচাদের নিয়ে ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবির চালাচ্ছেন হিন্দুস্তান কেব্লস কারখানার দলের প্রাক্তন খেলোয়াড় অজিত ঘোষ। তিনি বলেন, “এক সময়ে কারখানার নিজস্ব ফুটবল দল ছিল। ১৫ বছর আগে সে দল উঠে গিয়েছে। কারখানার নিজস্ব ফুটবল টুর্নামেন্ট হত। তা-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” তাঁর দাবি, “রাজ্য সরকারের অনুদান পাওয়া গেলে আরও ভাল ভাবে শিবিরটা চালানো যেত।”
কী ছিল আর কী নেই, তা নিয়ে এখন আর ভাবেন না কেব্লস কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক হরিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে একটি সংগঠন গড়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, “প্রতি বছর দোলের আগে আমরা অজয়ের তিরে পলাশের জঙ্গলে পলাশ উত্সব পালন করি। আশপাশের বহু মানুষের ভিড় হয়।” রুপনারায়ণপুরের ইউথ ক্লাবের সদস্যেরা প্রতি বছর নিয়ম করে বইমেলার আসর বসান। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা, রূপনারায়ণপুরে কেব্লস কারখানা যদি ফের চালু হয়, তবে আগের মতোই আবার এক সঙ্গে ঝলমল করবে পাশাপাশি এই দুই শিল্প শহর।
(শেষ)
ছবি: শৈলেন সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy