অর্থলগ্নি সংস্থার এক বড়কর্তার ঝুলন্ত দেহ মিলল কালনায়। নাম অসিতকুমার দাস (৪০)। বাড়ি কালনা ১ ব্লকের বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের সলঘড়িয়া গ্রামে। পুলিশের অনুমান, টাকা ফেরত দিতে পারবেন না বুঝে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন।
এমপিবি মাল্টিপারপাস বায়াস ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে ওই লগ্নি সংস্থার এজেন্টরা জানান, ২০০৮ সাল থেকে ব্যবসা শুরু করেছিল সংস্থাটি। ১২ ১৮, ২৪, ৩৬ ও ৬০ মাসের মেয়াদে টাকা নেওয়া শুরু হয়। ২০০৯ সাল নাগাদ কালনা শহরে তারা অফিস খোলে। আবাসন নির্মাণ ছাড়াও জৈব সার ও ওষুধের ব্যবসা রয়েছে তাদের। এজেন্টদের বড় অংশের অভিযোগ, প্রথম তিন বছর গ্রাহকেরা সময়ে টাকা ফেরত পেলেও ২০১২-র অক্টোবর থেকে সমস্যা শুরু হয়। লগ্নির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। কালনা ছাড়াও নদিয়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনায় সংস্থার একাধিক শাখায় বিক্ষোভ শুরু হয়।
সংস্থাটির প্রায় শ’তিনেক এজেন্ট রয়েছে কালনায়। ওই এজেন্টদের দাবি, অসিতবাবু তাঁদের ‘টিম লিডার’ তো ছিলেনই, সংস্থার দু’টি ইউনিটের ডিরেক্টরও ছিলেন। কালনায় দেড় হাজারেরও বেশি আমানতকারীর পাঁচ কোটিরও বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে। সারদা-কাণ্ডের পরেই সব এলোমেলো হয়ে যায়। মালিকদের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করা গেলেও এখন তাঁরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কালনার অফিস বন্ধ হওয়া ইস্তক এজেন্টদের তরফে অসিতবাবু ওরফে হারুদাই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। শুক্রবার কিছু এজেন্টকে নিয়ে তাঁর বৈঠক করারও কথা ছিল। তাঁর ভাই সুজিতবাবুর অভিযোগ, বৈঠকের অপেক্ষা না করে বুধবারই দুই এজেন্ট জনা পঞ্চাশেক আমানতকারীদের নিয়ে অসিতবাবুর বাড়ি যান। বাড়িতে তখন এক আত্মীয়ের পারলৌকিক কাজ চলছিল। তার মধ্যেই অসিতবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে গালিগালাজ করা হয়, এমনকী কিডনি কেটে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এর পর থেরেই তিনি চুপচাপ হয়ে যান।
অসিতবাবুর পরিবারের লোকেরা জানান, বুধবার রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হন তিনি। রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা গেলেও তার পরে আর পাওয়া যায়নি। সকালে গ্রামের এক পাশে একটি খেজুরগাছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ মেলে। যদিও রাত পর্যম্ত কারও বিরুদ্ধে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এ দিন হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে এজেন্টদের অনেকেই জানান, ইতিমধ্যে তাঁদের বাড়িতে এসে টাকা চাইছেন আমানতকারীরা। বহু এজেন্ট নিজেই টানাটানিতে ভুগছেন। প্রসেনজিৎ দাস নামে এক এজেন্টের কথায়, “আমাদের শেষ ভরসা ছিলেন হারুদা। জানি না, কী ভাবে মানুষের লক্ষ-লক্ষ টাকা মেটাব। প্রশাসন নিরাপত্তা না দিলে আমাদের পক্ষে এলাকায় বাস করা মুশকিল হয়ে পড়ছে।”