পরিসংখ্যান বলছে, গত দু’বছরে জেলায় বেআইনি পোস্ত চাষ কমেছে অনেকটাই। তবু ট্রাফিক পোস্ট থেকে মাইকে বা হ্যান্ডবিল বিলি করে অনবরত প্রচারের বিরাম নেই। জেলা পুলিশের দাবি, কোনও ভাবেই জেলায় যেন অবৈধ পোস্ত চাষ ফের শুরু না হয়, তাই এই সতর্কতা।
পুলিশ সূত্রেই জানা যায়, অনেকসময় গ্রামে-গঞ্জে গরিব চাষিদের টাকার লোভ দেখিয়ে পোস্ত চাষ করানো হয়। তারপর সেই পোস্ত থেকে আফিম জাতীয় নেশার জিনিস তৈরি করেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। তাই এলাকায় পোস্ত চাষ দেখলেই থানা বা বিডিও অফিসে জানাতে বলা হচ্ছে বাসিন্দাদের। এমনকী তাঁদের পরিচয় গোপন রাখার দাবিও মেনে নেওয়া হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, সেপ্টেম্বর মাস থেকেই মূলত নদী লাগোয়া এলাকাগুলিতে ওই চাষ শুরু হয়। পুজোর আগে এ বছরও তাই সতর্ক থাকছে পুলিশ ও প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের দাবি, ২০১১ সালে জেলা জুড়ে ১১টি জায়গায় ২৩০৯ বিঘের বেশি জমিতে পোস্ত চাষ করা হয়েছিল। পরে পুলিশ সাত লক্ষ কুইন্ট্যালেরও বেশি পোস্তা গাছ আটক ও ধ্বংস করে। ধরা হয়েছিল পাঁচ ব্যক্তিকেও। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিটও পেশ করে। পরের বছরও জেলার ১০টি জায়গা থেকে পোস্ত চাষের খবর পায় পুলিশ। অভিযান চালিয়ে ১৪ বিঘা জমি থেকে প্রায় ১৪০০ কুইন্ট্যাল পোস্ত আটক করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ৯ জনকে। তবে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত জেলায় পোস্ত চাষের ঘটনা বলতে মাত্র একটি। জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট উজ্জ্বল চক্রবর্তীর কথায়, “জেলা থেকে পোস্ত চাষ প্রায় নির্মূল হয়েছে বলেই খবর রয়েছে। তবে শিল্পাঞ্চলে জামুড়িয়ার কিছু জমিতে পোস্ত চাষের খবর মিলেছে।” সম্প্রতি বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে এক সভায় জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “জেলার প্রায় ৯৫টি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পোস্ত চাষের খবর পাওয়া গিয়েছিল। প্রধান ও পঞ্চায়েতের সদস্যদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল যে, এলাকায় অবৈধ পোস্ত চাষের খবর প্রশাসন বা পুলিশকে আগাম না জানালে, চাষে তাঁদের মদত রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। তারপরে প্রায় দু’বছর পোস্ত চাষের খবর মেলেনি।” তবু সতর্কতামূলক প্রচার চালিয়েই যাচ্ছে প্রশাসন। পোস্ত চাষ যে আইনত দণ্ডনীয় তা জানিয়ে হ্যান্ডবিল বিলি থেকে মাইকে ঘোষনা সবই চলছে বছরভর।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জারও দাবি, “২০১৩-র আগে যে এলাকায় পোস্ত চাষ হত, সেখানকার মালিকেরা আবগারি দফতর বা পুলিশের হানার সামনে দাবি করতেন যে পোস্ত চাষের খবর তাঁরা জানেনই না। কিন্তু আমরা তদন্তে জানতে পারি, বেশিরভাগ জমির মালিকেরা উৎপন্ন ফসলের ভাগও নেন। তারপর থেকেই পোস্ত চাষ ধরা পড়লে আমরা জমির মালিকদেরও চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে দেখাতে শুরু করি। এতেই কাজ হয়।” ওই চাষের খোঁজ রাখতে রাজ্য পুলিশের তরফে উপগ্রহ চিত্রের সাহায্য নেওয়া চলছে ইদানিং। এসপি জানান, কিছুদিন আগে পূর্বস্থলী থানা এলাকা থেকে তোলা এক উপগ্রহ চিত্রে প্রচুর সাদা ফুল-সহ উদ্ভিদ দেখা গিয়েছিল। খবর পেয়েই তৎপর হয় পুলিশ। কিন্তু পরে দেখা যায়, ওই সাদা ফুল আসলে পোস্তর নয়, গাজরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy