Advertisement
E-Paper

কম্পিউটারে অক্ষর চেনা শুরু আয়েষাদের

শনিবার এলেই সকাল সকাল ঘর সংসারের কাজ সামলে মেয়ে-বৌমাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আয়েষা বিবি। পাড়ার লোকে কী বলল, রাস্তাঘাটে কে টিটকিরি দিল, সেসব তুড়িতে উড়িয়ে পৌঁছে যান এনটিপিসি-র ফিল্ড অফিসের কম্পিউটার ক্লাসে। কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামের মুসলিমপাড়ার ২২ জন মহিলার শনি, রবিবারের ঠিকানা এখন এটাই।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৩:১২
কম্পিউটারে লেখা শিখছেন মুসলিমপাড়ার মহিলারা।—নিজস্ব চিত্র।

কম্পিউটারে লেখা শিখছেন মুসলিমপাড়ার মহিলারা।—নিজস্ব চিত্র।

শনিবার এলেই সকাল সকাল ঘর সংসারের কাজ সামলে মেয়ে-বৌমাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আয়েষা বিবি। পাড়ার লোকে কী বলল, রাস্তাঘাটে কে টিটকিরি দিল, সেসব তুড়িতে উড়িয়ে পৌঁছে যান এনটিপিসি-র ফিল্ড অফিসের কম্পিউটার ক্লাসে। কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামের মুসলিমপাড়ার ২২ জন মহিলার শনি, রবিবারের ঠিকানা এখন এটাই।

দুটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ওই ২২ জন মহিলা কিন্তু অক্ষরও চেনেন না। তা সত্ত্বেও মনের জোর ভরসা করেই কম্পিউটার শিখতে শুরু করেছেন তাঁরা। শ্রীখণ্ড ছাড়াও পাশের বাণনাগরা গ্রামের জনাকয়েক শিক্ষিত তরুণীও নিজেদের সময়মতো ওই অফিসে এসে কম্পিউটার অনুশীলন করছেন।

কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই সামাজিক উন্নয়নের কাজে নেমে পড়েছে এনটিপিসি। প্রাথমিক সামাজিক উন্নয়ন বা ‘ইনিসিয়াল কমিউনিটি ডেভলেপমেন্ট’ (আইসিডি) প্রকল্পে চলতি বছরের গোড়া থেকেই এলাকার মহিলাদের কম্পিউটার শিক্ষায় হাতেখড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এনটিপিসি। কিছুদিন আগে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে কন্যাশ্রী প্রকল্পে পড়ুয়াদের হাতে ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্প’ (সিএসআর) থেকে সাইকেলও দিয়েছিল এনটিপিসি।

এনটিপিসি-র কাটোয়া ফিল্ড অফিসে গিয়ে দেখা গিয়েছে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা পাশে নাতি বা ছেলেকে বসিয়ে রেখে কি-বোর্ডে আস্তে আস্তে ‘এবিসিডি’ টিপছেন। অক্ষরগুলো কম্পিউটারের পর্দায় ফুটে উঠতেই মুখে হাসি ফুটে উঠছে তাঁদের। বছর পঞ্চাশের আয়েষা বিবির গলায় তো বছর পাঁচেকের শিশুর উচ্ছ্বাস। সবাইকে ডেকে বলছেন, “‘দ্যাখ, আমিও পারছি’। মুসলিমপাড়া থেকে দল বেঁধে কম্পিউটার শিখতে ওই মহিলারা বর্ধমান-কাটোয়া রোডের ধারে শ্রীখণ্ডের এনটিপিসি-র ফিল্ড অফিসে আসেন। প্রতি শনি ও রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ‘ক্লাস’ শুরু হয়। প্রশিক্ষক গৌরী ঘোষ বলেন, “ঘর সংসার সামলে এই মহিলারা এখানে আসছেন। এই বয়সেও এঁদের নতুন কিছু জানার আগ্রহ দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।”

একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভানেত্রী মনসুর বিবি বলেন, “এখানকার স্যারেরা (এনটিপিসি-র কর্তা) আমাদের কাছে গিয়ে কম্পিউটার শেখার কথা বলেছিলেন। তারপরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করি। কিন্তু ভয় ছিল, ঠিক করে নিজের নামই লিখতে পারি না, কম্পিউটার চালাব কী করে! কিন্তু এখানকার দিদিমনি ও স্যারেদের কথায় সাহস পেয়ে আমরা এগিয়ে এসেছি।” আর একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভানেত্রী বুল্টি বিবির কথায়, “কম্পিউটারের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু আমরাও যে কোনও দিন কম্পিউটার চালাতে পারব, স্বপ্নেও ভাবিনি।” কম্পিউটারের পর্দায় তাকিয়ে আয়েষা বিবি বলেন, “জীবনে কোনও দিন পেনও হাতে ধরিনি। আর এখন কম্পিউটারে যা লিখছি, সেটা বাড়িতে গিয়েও চর্চা করছি।”

তবে শুরুতে বিষয়টি এত সহজ ছিল না বলে জানান নূরন্নেসা বিবি, জাহেদা বিবিরা। তাঁদের কথায়, “সংসার ছেড়ে বাইরে এসে কম্পিউটার শিখব, এটা সহজে কেউ মেনে নেয়নি। পরিবারের লোকেদের বোঝাতে হয়েছে। এখন অবশ্য তাঁরাই উত্‌সাহ দিচ্ছেন।” অনেকে বলছিলেন, “রাস্তাঘাটে মহিলারাও আমাদের দেখে নানারকম টিটকিরি দেয়। তবে ওই সব কথায় পাত্তা দিই না।” তাই শনিবার হলেই সাজো সাজো রব ওঠে। সকাল ১০টার মধ্যে রান্নাবান্না সেরে শাশুড়ি-বৌমা-মেয়ে হাত ধরাধরি করে পা চালায় কম্পিউটার শিখতে। ওই মহিলারাই জানান, আমাদের দেখে এখন আরও অনেকে কম্পিউটার শিখতে চাইছেন। স্যারেদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে বলছেন। এর মধ্যে শিক্ষিত যুবকেরাও আছেন।”

আর এনটিপিসি-র কাটোয়ার অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু শুধু বলেন, “আমরা ঘোষিত নীতি অনুযায়ী কাজ করছি।”

computer education muslim women katwa soumen dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy