Advertisement
E-Paper

খেতে না-পেয়ে হোম ছাড়ি, মূক ছাত্রদের নালিশ

দোলের রাতে কালনার সরকার অনুমোদিত আবাসিক স্কুল থেকে পালিয়েছিল মূক ও বধির চার স্কুলছাত্র। শুক্রবার সকালে পুলিশ দু’জনকে হুগলির পাণ্ডুয়া থেকে উদ্ধার করে। পুলিশের দাবি, হস্টেলে পেট ভরে খেতে না পেয়েই তারা পালিয়ে গিয়েছিল বলে ওই ছাত্রেরা আকারে-ইঙ্গিতে অভিযোগ করেছে। বিকেলে বাকি দুই ছাত্রেরও খোঁজ মিলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪২
অভিভাবকদের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া দুই বালক। —নিজস্ব চিত্র।

অভিভাবকদের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া দুই বালক। —নিজস্ব চিত্র।

দোলের রাতে কালনার সরকার অনুমোদিত আবাসিক স্কুল থেকে পালিয়েছিল মূক ও বধির চার স্কুলছাত্র। শুক্রবার সকালে পুলিশ দু’জনকে হুগলির পাণ্ডুয়া থেকে উদ্ধার করে। পুলিশের দাবি, হস্টেলে পেট ভরে খেতে না পেয়েই তারা পালিয়ে গিয়েছিল বলে ওই ছাত্রেরা আকারে-ইঙ্গিতে অভিযোগ করেছে। বিকেলে বাকি দুই ছাত্রেরও খোঁজ মিলেছে।

ঠিক মতো খেতে না দেওয়ার কথা হস্টেল কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু চার ছাত্র যে রাত থেকে নিখোঁজ সেটাই তাঁরা পুলিশ খবর দেওয়ার আগে পর্যন্ত জানতেন না। পরে জানা যায়, জানলার গ্রিল সরিয়ে পাঁচিল টপকে তারা পালিয়েছে। ফলে, তাঁরা ছাত্রদের ভালমন্দের দিকে কতটা নজর রাখেন, সেই প্রশ্ন উঠছেই। যদিও বর্ধমান জেলা শিশুকল্যাণ দফতরের সদ্যপ্রাক্তন আধিকারিক শিখা আদিত্য বলেন, “গত বছর বৈদ্যপুরের ওই হোমে গিয়ে কোনও পরিকাঠামোগত সমস্যা আমাদের চোখে পড়েনি।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৯৯৩ সাল থেকে বৈদ্যপুরে কালনা-গুড়াপ রাস্তার পাশে বিকাশ ভারতী প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র নামে সরকার অনুমোদিত আবাসিক স্কুলটি চলছে। পড়াশোনার পাশাপাশি মূক ও বধির ছাত্রদের আঁকা-সেলাই ইত্যাদিও সেখানে শেখানো হয়। বর্তমানে পৃথক হস্টেলে ২৬ জন মেয়ে ও ২৪ জন ছেলে থাকে। দোলের ছুটিতে বেশির ভাগ অভিভাবকই ছেলেমেয়েদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। ৮ জন ছেলে হস্টেলে ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে তারই মধ্যে চার জন পালায়। এর মধ্যে দু’জন, শুভজিৎ কিস্কু ও অষ্টু দাস ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। কৃষ্ণ টুডু পঞ্চম শ্রেণি এবং সালাম শেখ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

পাণ্ডুয়া থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ৩টে নাগাদ শুভজিৎ ও কৃষ্ণকে জামনা গ্রামে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। পুলিশ তাদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, শুভজিৎ মেমারির বাসিন্দা। কৃষ্ণের বাড়ি হুগলির সোমরাবাজারে। এ দিন দু’জনেরই বাড়ির লোক পাণ্ডুয়া থানায় আসে। শুভজিতের মা মালতি কিস্কুও বলেন, “ওরা ঠিক মতো খেতে দেয় না বলেই ছেলে স্কুল থেকে পালিয়েছে। আমরা গরিব। কী করব, বুঝতে পারছি না।” কৃষ্ণের বাবা তপন টুডুও একই কথা বলেন। খবর পেয়ে হুগলি জেলা শিশুকল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরা থানায় এসে ছেলে দু’টিকে নিয়ে যান।

আপাতত তাদের কামারকুণ্ডুর একটি হোমে রাখা হয়েছে।

সকলের ছোট সালামের বাড়ি বর্ধমানেরই পূর্বস্থলীর এক গ্রামে। অষ্টুর বাড়ি হুগলির জাঙ্গিপাড়ায়। পরে খবর মেলে, সালামকে সঙ্গে নিয়ে অষ্টু তার নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছে। সালামের বাবা আইজল শেখ অবশ্য বলেন, “আমার ছেলে বছর চারেক ওই হস্টেলে আছে। কখনও খাবার বা অন্য কিছু নিয়ে অভিযোগ করেনি।”

হস্টেল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোজের মতোই সন্ধ্যায় টিফিনে মুড়ি, রাতে ভাত খেয়ে রাতে শুয়ে পড়েছিল ওই ছাত্রেরা। এ দিন সকালে পাণ্ডুয়া থানা থেকে এক পুলিশকর্মী এসে জানান, শুভজিৎ কিস্কু এবং কৃষ্ণ টুডু নামে দুই ছাত্রকে পাণ্ডুয়ার জামনা থেকে পাওয়া গিয়েছে। হস্টেলে হইচই পড়ে যায়। ওই কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক অমর ভট্টাচার্য বলেন, “বাকি চার ছাত্র আকার-ইঙ্গিতে জানায়, ওরা জানলার স্ক্রু খুলে গ্রিল সরিয়ে পালিয়েছে।”

হস্টেলের কর্মীদের দাবি, কিছু দিন আগে বাড়ি থেকে স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে এসেছিল অষ্টু। সম্ভবত সেটি দিয়ে সে জানালা খুলেছে। কিন্তু হস্টেলের উঁচু পাঁচিল তারা কী ভাবে টপকাল, তার ব্যখ্যা কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। হস্টেল সুপার এবং রাত পাহারাদারের দাবি, তাঁরা কিছুই টের পাননি। প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, “ওদের প্রতি যথেষ্ট মায়া-মমতা রয়েছে আমাদের। ইচ্ছে করে কাউকে কম খাবার দেওয়ার প্রশ্নই নেই।”

কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “আগে ওই স্কুল নিয়ে এমন কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে চার ছাত্র কী ভাবে পালাল, তা বুঝতে বিডিওকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্ত করা হবে।” বর্ধমান জেলা জনশিক্ষা আধিকারিক গোবিন্দ ভৌমিক বলেন, “আমি নিজে আজ গিয়েছিলাম। কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।”

home kalna pandua
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy