রিলে অনশনে ২২ জন জমিমালিক।—নিজস্ব চিত্র।
ইসিএল জমি অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রতি দু’একর পিছু জমির মালিক বা পরিবারের এক জন এখনও চাকরি পাননি। এমন অভিযোগ তুলে সোমবার থেকে ইসিএলের ঝাঁঝরা এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজারের (জিএম) অফিসের সামনে রিলে অনশন ও অবস্থান শুরু করেছেন শ’দুয়েক বাসিন্দা। ইসিএল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, ওই জমি নিয়ে কিছু আইনগত সমস্যা রয়েছে।
ইসিএল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দু’দশক আগে রাজ্য সরকার ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী ‘উখড়া জমিনদারি এস্টেট’, পরে যা ‘মেসার্স উখড়া ফার্মিং কর্পোরেশন’ নামে পরিচিতি পায়, সেই জমি খাস করায় উদ্যোগী হয়। ‘মেসার্স উখড়া ফারর্মিং কর্পোরেশন’ এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে। হাইকোর্ট তখন স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। ফলে, তা আদালতের বিচারাধীন বিষয় হয়ে পড়ে। এর পরেই মেসার্স উখড়া ফারর্মিং কর্পোরেশনের কাছ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে সেই জমি কেনেন। কিন্তু ওই এলাকায় ভূগর্ভে কয়লা রয়েছে। সে কারণে সম্প্রসারণের জন্য ‘সিবিএ’ (কোল বিয়ারিং এরিয়া) আইনে ১৯৯৮ সালে জমি অধিগ্রহণ করে ইসিএল। এর পরেই সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী জমির পরিবর্তে চাকরির দাবি জানাতে শুরু করেন জমির নতুন মালিকেরা।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দু’একর জমি পিছু জমিদাতা পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। জমির পরিমাণ দু’একরের কম হলে জমিদাতা পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। অবস্থানরত জমি মালিকেরা জানান, ঝাঁঝরা প্রজেক্ট এরিয়ার ৩৯৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। সম্প্রতি তথ্য জানার অধিকার আইনে তাঁরা জেনেছেন, ২০০০ পর্যন্ত ৩৪ একর জমির পরিবর্তে ১৭ জন জমিমালিককে চাকরি দিয়েছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাকি ৩৬৪ একর জমির ১৭৮ জন মালিককে চাকরি দেওয়া হয়নি। জমি মালিকদের দাবি, বারবার চাকরির দাবি জানানো হলেও ইসিএল কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করছেন না। এ দিন তাই ঝাঁঝরা এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজারের অফিসের সামনে রিলে অনশন এবং অবস্থান কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। জমি মালিকদের পক্ষে রাজু মুখোপাধ্যায় জানান, ২২ জন রিলে অনশনে যোগ নিয়েছেন। তিন দিন ধরে কর্মসূচি চলবে। এর পরেও কোনও সদর্থক পদক্ষেপ না করা হলে বড় আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন জমি মালিকদের সংগঠন ‘ঝাঁঝড়া-উখড়া-সরপি ল্যান্ড লুজার্স কমিটি’র সভাপতি লক্ষ্মণ নন্দী। তিনি দাবি করেন, “প্রায় ১৭ বছর ধরে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। বারবার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।”
ইসিএল সূত্রে জানানো হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী জমি মালিকেরা চাকরি পান, সেটাই চান সংস্থার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যত্র। প্রথমত, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। দ্বিতীয়ত, অনেকে জমি তৃতীয় পক্ষকে বিক্রি করেছেন। কেউ কেউ আবার জমি কিনেছেন অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে। ইসিএলের এক আধিকারিক বলেন, “সব মিলিয়ে সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে গিয়েছে। ঝাঁঝরা এরিয়া থেকে চাকরির প্রস্তাব পাঠানো হয় সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে। সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। কিন্তু বোর্ডের বৈঠকে তা এখনও অনুমোদিত হয়নি। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।” ঝাঁঝরা এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার অবোধকিশোর মিশ্র জানান, জমি মালিকদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়ে রবিবার তিনি চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে তাঁরা সাড়া দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy