Advertisement
E-Paper

চাহিদা নেই, ছায়া ঘনিয়ে এসেছে কদমা শিল্পে

“বাতাসা, বুঁদিয়া, পেরা/ নারিকেল জোড়া জোড়া। আম-জম্বু-কদলি প্রণসে,সর্ব দেব্য সুয়া ভাগে/ আটা, চিনি, দুগ্ধ লাগে।কদমা প্রদান অবশেষে।” পুরনো বাংলা পুঁথির এ সমস্ত ছড়া থেকে জানা যায় একসময় দুর্গাপুজোর নৈবেদ্যর অন্যতম উপকরণ ছিল কদমা। ষষ্ঠীর দিন বোধন থেকে শুরু করে দশমীতে বিদায় দেওয়ার আগে দেবীকে মিষ্টিমুখ করানোয় একচ্ছত্র দখল ছিল বাতাসা-কদমার।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৬
দোকানে বিকোচ্ছে কদমা। নিজস্ব চিত্র।

দোকানে বিকোচ্ছে কদমা। নিজস্ব চিত্র।

“বাতাসা, বুঁদিয়া, পেরা/ নারিকেল জোড়া জোড়া।

আম-জম্বু-কদলি প্রণসে,

সর্ব দেব্য সুয়া ভাগে/ আটা, চিনি, দুগ্ধ লাগে।

কদমা প্রদান অবশেষে।”

পুরনো বাংলা পুঁথির এ সমস্ত ছড়া থেকে জানা যায় একসময় দুর্গাপুজোর নৈবেদ্যর অন্যতম উপকরণ ছিল কদমা। ষষ্ঠীর দিন বোধন থেকে শুরু করে দশমীতে বিদায় দেওয়ার আগে দেবীকে মিষ্টিমুখ করানোয় একচ্ছত্র দখল ছিল বাতাসা-কদমার।

কিন্তু এখন পুজোর ডালায় কদমার চল প্রায় নেই। নানা রকমের সন্দেশ, মিষ্টি তার জায়গা নিয়েছে। চাহিদা তলানিতে ঠেকায় মাথায় হাত পড়েছে কদমা কারিগরদেরও। বাধ্য হয়ে কেউ কদমা গড়া ছেড়ে অন্য মিষ্টি বানাচ্ছেন। কেউ আবার পেশাই বদলে ফেলছেন।

চিনির বিশেষ পাকের এই মিষ্টি তৈরিতে বর্ধমানের বারাবনির খ্যাতি একসময় এ রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভিনরাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল। কদমা কারিগরদের দাবি, নিয়মিত দেশের নানা প্রান্তে তো বটেই বিদেশেও কদমা যেত এখান থেকে। কিন্তু এখন নানা আধুনিক মিষ্টি কদমার জায়গা নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিল্পীরা। প্রবীণ কদমা কারিগর উত্তম লাহার আক্ষেপ, “সবাই এখন আধুনিক মিষ্টির দিকে ঝুঁকছেন। তাতেই কদমার বাজার পড়ে গিয়েছে। আমাদের দিকেও কেউ আর ফিরে চায় না।” নিশ্চিত রোজগারের ভরসা না থাকায় বাপ-ঠাকুরদার পেশায় আসতে চাইছেনা না তরুণ প্রজন্মও। ফলে আদৌ এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে বলে জানালেন আর এক কদমা কারিগর অজয় দে। তিনি বলেন, “কদমার মূল উপকরণ চিনি। প্রতিদিন যেভাবে চিনির দাম বাড়ছে, সে অনুপাতে কদমার দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে লাভের অঙ্কও দিন দিন কমছে।”

শুধু নৈবেদ্য নয়, মণ্ডপসজ্জাতেও একসময় কদমা ব্যবহার হত। বড় থেকে ছোট, নানা আকারের কদমা সুতোয় ঝুলিয়ে সাজানো হত মণ্ডপ। স্থানীয় ভরত মণ্ডল জানান, দুর্গাপুজোর অন্তত ছ’মাস আগে কারিগরদের সঙ্গে দেখা করে বড় কদমার বায়না করা হত। চার পুরুষ ধরে কদমার ব্যবসা করছেন নীলু লাহা। তাঁর কথায়, “২৫ গ্রাম থেকে ৫ কেজি ওজনের কদমাও বানানো হয়। তবে বছর তিরিশ আগে কদমার যে বিক্রি ছিল, এখন তার কিছুই নেই।” নীলুবাবুর আশঙ্কা, কদমার ব্যবসা তুলে অন্য পেশায় চলে যেতে হবে বোধহয়। আসলে কদমা বানাতে যে পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও কারিগরি দক্ষতা লাগে, সেই অনুপাতে লাভ হয় না। সে কারণেই বোধহয় অনেকে এই পেশা ছেড়ে যেতে চাইছেন বলে জানালেন আর এক নবীন শিল্পী গোরাচাঁদ লাহা। তিনি জানান, দিনের যে কোনও সময় কদমা বানানো যায় না। ভোর চারটে থেকে সকাল ছ’টার মধ্যে কদমা বানিয়ে নিতে হয়। কারণ কদমা বানাতে যে আবহাওয়া দরকার তা একমাত্র ঊষা লগ্নেই মেলে। কিন্তু চাহিদার অভাবে একরকম হারিয়ে যেতে বসেছে এই মিষ্টি।

susanta banik asansol kadma
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy