Advertisement
E-Paper

ছ’ঘণ্টায় বিস্ফোরক নষ্ট দামোদরের চরে

সকাল সাতটা থেকেই দামোদরের পাড়ে ভিড় জমাতে শুরু করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একে একে জড়ো হচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি, এনআইএ ও এনএসজি-র কম্যান্ডোরাও। বৃহস্পতিবার রাতে শহরের বাদশাহি রোডের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ৩৮টি বোমা ফাটানোর কথা ছিল এ দিনই।

রানা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪৮
দামোদরের চর থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলছেন এক এনএসজি কম্যান্ডো।

দামোদরের চর থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলছেন এক এনএসজি কম্যান্ডো।

সকাল সাতটা থেকেই দামোদরের পাড়ে ভিড় জমাতে শুরু করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একে একে জড়ো হচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি, এনআইএ ও এনএসজি-র কম্যান্ডোরাও। বৃহস্পতিবার রাতে শহরের বাদশাহি রোডের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ৩৮টি বোমা ফাটানোর কথা ছিল এ দিনই।

কয়েক বছর আগে বর্ধমান জিআরপিতে রাখা মর্টারের গোলা এই দামোদরের চরেই ফাটিয়ে নিষ্ক্রিয় করেছিলেন পানাগড় থেকে আসা সেনা আধিকারিকেরা। খাগড়াগড়ের বাড়িটিতে বিস্ফোরণের পরে মেলা বোমাগুলিও এখানেই ফাটায় সিআইডির বম্ব ডিসপোজ্যাল স্কোয়াড। শুক্রবার এনআইএ,এনএসজি ও সিএফএলের লোকজনও বাদশাহি রোডের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বোমাগুলি এখানে ফাটায়। সকাল থেকেই প্রায় ছ’ঘণ্টা দামোদরের চরে সেই তোড়জোড়ের সাক্ষী থাকলেন হাজারো মানুষ।

শুরুতেই কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির লোকজন একটি সুটকেসে বোমা নিস্ক্রিয় করার যন্ত্রপাতি নিয়ে হাজির হন। বেলচা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে সরু-মোটা নানা রঙের তার জুড়ে ছড়ানো হয় চরের বালিতে। মাটিতে শুয়ে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে ‘পোজিশন’ নিতে শুরু করেন কম্যান্ডোরা। ব্যবস্থা ঘুরে দেখছিলেন ডিআইজি এনআইএ অনুরাগ তনখা। কৌতুহলী দর্শকদের অবশ্য ততক্ষণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার দূরে। সমস্ত ব্যবস্থা শেষ হতে অবশ্য লেগে গেল প্রায় আড়াই ঘণ্টা। ৯টা ৩২ মিনিটে শোনা গেল প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ। দূর থেরে দেখা গেল আকাশে কুণ্ডুলি পাকানো ধোঁয়া। প্রথম দফায় ফাটল ১০টি বোমা। তারপরে ৫০ মিনিটের বিরতি। ফের বিকট কানে তালা ধরানো শব্দ বুম। ফের ধোঁয়ার কুণ্ডলি। এভাবেই ৯টা ৩২, ১০টা ২২ ও ১১টা ৩৪ মিনিটে তিন দফায় পরপর ১০, ১৪ ও ১১টি বোমা ফাটানা হল। শোনা গেল, একটি বোমা ফাটেনি। আর দুটি বোমাকে নমুনা হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে বর্ধমান পুলিশ লাইনে। এনআইএ-র এক আধিকারিক জানালেন, “বাদশাহি রোডের বাড়ি থেকে ২৭ বস্তা বিস্ফোরক মিলেছিল। তারমধ্যে একটি বস্তা থেকে পাওয়া গিয়েছে লেপ আর কম্বল।


চলছে বিস্ফোরণ।

গত ৩ অক্টোবর সিআইডি-র বম্ব ডিসপোজ্যাল স্কোয়াড ৫৩টি সকেট বোমাকে ফাটিয়ে নিষ্ক্রিয় করেছিল এই চরেই। কিন্তু এত প্রস্তুতি, এত সতর্কতা ছিল না সে দিন। শুক্রবারের কড়া প্রস্তুতির কারণ জানতে চাইলে এনআইএ এবং এনএসজি-র তরফে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বাদশাহি রোডের বাড়ি থেকে যে বিস্ফোরকগুলি মিলেছিল, সেখানে এনএসজির পরীক্ষা-যন্ত্র একটা ইঙ্গিত দিয়েছিল যে বোমার বিস্ফোরকে আরডিএক্সের মতো বিস্ফোরক মিশে তাকতে পারে। তাই এই বাড়তি সতর্কতা। ডিআইজিএনআইএ অনুরাগ তনখা বলেন, “ওগুলিতে আরডিএক্স কেন, অন্য ধরনের কোনও বিস্ফোরকও যদি থাকে, তাহলেও ঠিক কি কি আছে, তা বুঝতে সময় লাগবে। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে বলতে পারবেন কি ছিল।”

কিন্তু সিআইডি বোমা নিস্ক্রিয় করার পরে বিরোধী দলগুলি তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তুলেছিল। এ দিনের পরেও কী তেমন কথা উঠবে না? এনআইএ-র এক অফিসার বলেন, “আমরা কোনও বিতর্কে জড়াতে চাই না। কিন্তু এতগুলো তাজা বোমা কোথায় রাখা হত? এক একটার ক্ষমতা জানেন? একসঙ্গে ফাটলে যেখানে রাখা হতে, সেটাই স্রেফ উড়ে যেত! তাই এই পথই নিতে হয়েছে।”

এর মধ্যেই কেটে গিয়েছে প্রায় ছ’ঘণ্টা। দুপুর ১টা নাগাদ বোমার অবশিষ্টাংশ, বালি ও আরও নানা নমুনা নিয়ে চর ছাড়লেন সিএফএলের লোকজন। ভিড়ও ততক্ষণে পাতলা। অনেকটা যেন টিভিতে যুদ্ধ দেখার অনুভূতি নিয়ে ফিরে গেলেন আশপাশের মানুষজন।

ছবি: উদিত সিংহ।

khagragarh blast NIA NSG rana sengupta bardwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy