Advertisement
১৯ মে ২০২৪

টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত কালনার তৃণমূল নেতা

তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হলেন বাসিন্দারা। কালনার দুপসা গ্রামে সরকারি প্রকল্পের টাকা সেলিম খান নামে ওই নেতা আত্মসাৎ করেছেন বলে মহকুমাশাসক ও বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেছেন কয়েক জন গ্রামবাসী। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ওই নেতা। রবিবারই রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেমারির সভায় বলে গিয়েছেন, “কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে আমাদের জানান। মুখ্যমন্ত্রী তাকে শাস্তি দেবেন।”

অভিযোগ জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। নিজস্ব চিত্র।

অভিযোগ জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২১
Share: Save:

তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হলেন বাসিন্দারা। কালনার দুপসা গ্রামে সরকারি প্রকল্পের টাকা সেলিম খান নামে ওই নেতা আত্মসাৎ করেছেন বলে মহকুমাশাসক ও বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেছেন কয়েক জন গ্রামবাসী। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ওই নেতা।

রবিবারই রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেমারির সভায় বলে গিয়েছেন, “কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে আমাদের জানান। মুখ্যমন্ত্রী তাকে শাস্তি দেবেন।” এর পরেই সোমবার কালনার মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক জন তৃণমূলের স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগপত্র জমা দিলেন। তবে অনেকগুলি অভিযোগের ক্ষেত্রেই যে সময়ে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, সেই সময়ে সেলিম খান কংগ্রেসে ছিলেন।

দুপসা গ্রামের বধূ কাজল সাঁতরা অভিযোগ করেন, অক্টোবরে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর তৈরির জন্য তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরকার ৩৪ হাজার টাকা পাঠায়। সেই টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে গিয়ে তাঁর দেখা হয় গ্রামের নেতা সেলিম খানের সঙ্গে। অভিযোগ, ওই নেতা তাঁর কাছ থেকে টাকা কেড়ে নিয়ে জানান, ঘর তৈরির ব্যবস্থা তিনি করে দেবেন। কিন্তু পরে তিনি ঘর করে দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী না হওয়ায় কাজলদেবী এলাকার মানুষকে ঘটনার কথা জানান। ওই বধূর দাবি, তখন জানা যায়, ওই তৃণমূল নেতা শুধু তাঁর কাছ থেকে নয়, গ্রামের অনেকের টাকাই আত্মসাৎ করেছেন।

মুকুল সরেন নামে দুপসা গ্রামের আর এক জনের অভিযোগ, ২০১২-১৩ বর্ষে তিনি ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর তৈরির জন্য ৪৫০০০ হাজার টাকা পান। তখন টাকা তোলার পরেই গ্রামের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা তাঁর কাছ থেকে ৫০০০ হাজার টাকা কেড়ে নেন। বাকি টাকায় ঘরের কাজ শেষ করা যায়নি। অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে সেই ঘর। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘর তৈরির ১৪০টি ইট সেলিম খান বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান।

তৃতীয় অভিযোগে ১৭ জন গ্রামবাসী জানান, গ্রামে একটি ৪০০ ফুট কাঁচা রাস্তায় মোরাম ফেলার জন্য ২০১৩-১৪ আর্থিক বর্ষে একশো দিনের কাজে দেড় লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। কয়েক মাস আগে মাত্র এক ট্রাক্টর মোরাম ফেলে রাস্তার কাজ শেষ করে দেওয়া হয়। এই রাস্তার কাজে দুর্নীতিতে সেলিমের হাত রয়েছে বলে ওই গ্রামবাসীদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েতে গিয়ে জানা গিয়েছে সেলিম খানের সঙ্গে এই দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছে এক ঠিকাদার। এ দিন ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন ওই বাসিন্দারা। টাকা চাইতে গেলে তিনি হুমকি দিচ্ছেন বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পঞ্চায়েত ভোটে দুপসা গ্রামের আসনটি জেতে কংগ্রেস। তার পরেই গ্রামের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য ও সেলিম তৃণমূলে যোগ দেন। কোনও পদে না থাকলেও তাঁর প্রভাব রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। গ্রামে পঞ্চায়েতের নানা কাজও তিনি দেখভাল করেন বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। তৃণমূল সূত্রে খবর, ওই নেতার বিরুদ্ধে ভুরিভুরি অভিযোগ ওঠায় দল তদন্ত শুরু করেছে। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের নির্দেশে গত সোমবার দুপসা গ্রামে যান কালনা ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহরায় এবং সাধারণ সম্পাদক সেলিম শেখ। গ্রামে দলের লোকজনের সঙ্গে তাঁরা একটি বৈঠক করে এ ব্যাপারে জানতে চান। ছিলেন কিছু গ্রামবাসীও। অনেকেই ক্ষোভ উগরে দেন। তবে সেই বৈঠকে ছিলেন না সেলিম খান ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। গত মঙ্গলবার এই নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গ্রামের কিছু মানুষ তার বাড়িও ঘেরাও করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।

সেলিম শেখ বলেন, “আমরা যা জেনেছি, দলকে জানিয়েছি। এর বেশি আর কিছু বলা সম্ভব নয়।” তবে উমাশঙ্করবাবু বলেন, “এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে, অসৎ লোকের দলে জায়গা নেই। দুপসা গ্রামে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি দোষী প্রমাণ হলে প্রশাসনই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।” কালনা ১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি সুশীলকুমার পাখিরার দাবি, “সেলিম এক সময়ে আমাদের দলে ছিলেন। এখন তিনি তৃণমূলে। শুধু দুপসা গ্রামে নয়, অন্য গ্রামেও ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা পেলে শাসকদলের লোকজনকে ঘুষ দিতে হচ্ছে। প্রশাসন গোটা পঞ্চায়েতেই এই বিষয়টি নিয়েই তদন্ত করুক।”

সেলিম খান অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা দাবি করেন, “আমি দলের গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার। কারও টাকা আত্মসাৎ করিনি। এ ব্যাপারে কোনও প্রমাণ নেই। আর আমি তো ঠিকাদার নই যে রাস্তার কাজের টাকা আমার হাতে আসবে।” মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “দুপসা গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

money laundering tmc leader accused kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE