Advertisement
১৯ মে ২০২৪

টাকার অভাবে গতি কমেছে একশো দিনে

ভোট একেবারে দোরগড়ায়। ভোট একেবারে দোরগড়ায়। অথচ জেলার বহু পঞ্চায়েতেই একশো দিনের কাজ হচ্ছে ঢিমেতালে। পঞ্চায়েতের কর্তারা সাফ জবাব, টাকা কোথায়, যে কাজ হবে?

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০২:৩৪
Share: Save:

ভোট একেবারে দোরগড়ায়।

অথচ জেলার বহু পঞ্চায়েতেই একশো দিনের কাজ হচ্ছে ঢিমেতালে। পঞ্চায়েতের কর্তারা সাফ জবাব, টাকা কোথায়, যে কাজ হবে?

বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বেশিরভাগ জায়গাতেই শ্রমিকেরা মজুরির দাবিতে পঞ্চায়েত দফতর ঘেরাও করছেন। সম্প্রতি পলসোনা-সহ বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের কর্মীদেরও দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখেন শ্রমিকেরা। পরে স্থানীয় বিডিওদের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে।

চলতি অর্থবর্ষের শেষ লগ্নে এসে টাকার অপ্রতুলতার জন্য খরচের লক্ষ্যপূরণ মার খাবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুও। কাজের গতি অক্ষুণ্ণ রাখতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে একশো দিনের কাজে যুক্ত থাকা প্রশাসনিক কর্তাদের। এখনও পর্যন্ত জেলায় গড়ে ২৮ দিন কাজ পেয়েছেন শ্রমিকেরা। ৭৭৬০২৮টি পরিবার চলতি বছরে ২১৪৩০২৮২ শ্রমদিবস তৈরি করেছে। জেলায় ১০০ দিন কাজ পেয়েছেন ৮৯৯৬টি পরিবার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরে একশো দিনের কাজে জেলায় খরচ হয়েছিল ৪৫৫ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে ৭০০ কোটি টাকা খরচ করার লক্ষ্যপূরণ ছিল জেলা প্রশাসনের। জেলা পরিষদের সভাপতি দেবু টুডু বলেন, “এখনও পর্যন্ত ৫২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সঠিক সময়ে টাকা এলে আমরা লক্ষ্যপূরণকে টপকে যেতে পারতাম।” তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণ করে শ্রমিকদের টাকা মেটানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোট ব্লকে ৭ কোটি টাকা, কাঁকসা, বর্ধমান ১ ব্লকে পাঁচ কোটি টাকা, আউশগ্রাম ১ ব্লকে ৬ কোটি টাকার উপর বাকি পড়ে রয়েছে। ফলে ভোটের মুখেও পঞ্চায়েতগুলো একশো দিনের কাজ জোরকদমে করতে পারছেন না। বর্ধমান জেলার গ্রামীণ অংশে মাজিগ্রাম, কৈচর ২ পঞ্চায়েতে ৯০ লক্ষ টাকার উপর, কাঁকসা ব্লকের আমলাজোড়া, বনকাটিতে দেড় কোটি টাকার উপর বাকি পড়ে রয়েছে। ওই টাকার একটা বড় অংশ পাবেন ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকরা। ওই সব পঞ্চায়েতের কর্তারা বলেন, “এই সময় শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করার চাহিদা থাকে। তেমনি আমরাও চাই ভোটের সময় শ্রমিকেরা বেশি করে কাজ করুক। কিন্তু টাকার অপ্রতুলতায় সে ঝুঁকি নিতে পারছি না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ১০০ দিনের কাজের গতি কমে গিয়েছে।”

একশো দিনের কাজের জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রায় ৮০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে জেলার। তবে কয়েকদিন আগে ১৭ কোটি টাকা কেন্দ্র থেকে ছাড়া হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। তবে সভাধিপতির দাবি, “এই হিসাব তো খাতায় কলমে। বাস্তবে আমরা ১০০ দিনের কাজ বাবদ ২০০ কোটি মতো পাব।” বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “আমাদের কাছে যে রকম টাকা আসছে, সে ভাবেই ছেড়ে দিচ্ছি।”

তবে টাকার অভাবের মধ্যেও জেলা প্রশাসন চাইছে, ১০০ দিনের কাজ যাতে কোনও ভাবেই বন্ধ না হয়। সে জন্য অলিখিত ভাবে প্রশাসন ও পঞ্চায়েত কর্তারা ঠিক করেছেন, এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত ইমারতি দ্রব্য বিক্রেতাদের টাকা কোনও রকম ভাবেই মেটানো হবে না। পাশাপাশি শ্রমিকদেরকেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ১০০ দিনের কাজ করুন কিন্তু টাকা পেতে দেরি হবে। দেবু টুডু বলেন, “শ্রমিকরা ধাপে ধাপে টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া কাজের আগে তাঁরা যদি জানতে পারেন, টাকা পেতে দেরি হবে তাহলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা হবে না।” একই সঙ্গে তিনি জানান, টাকা আসতে দেরি হবে বুঝতে পারলে তাঁরা জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল বা অন্য কোনও জায়গা থেকে ঋণ করে ১০০ দিনের কাজে শ্রমিকদের মজুরি মেটাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soumen dutta katoa 100day's work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE