দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার (ডিএসপি) ডিজিএম (ব্লাস্ট ফার্নেস ইনচার্জ) বেদপ্রকাশ গুপ্তকে ‘সাসপেন্ড’ করেছেন স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (সেল)। ঠিক কী কারণে এই সিদ্ধান্ত সে ব্যাপারে ডিএসপি’র কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে ব্লাস্ট ফার্নেস পরিস্কার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে দুই ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে এর যোগ আছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
রবিবার সন্ধ্যায় ডিএসপি’র ৩ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেস পরিস্কার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে অচেতন হয়ে পড়েন ঠিকা শ্রমিক সন্ন্যাসী গোপ (৩০) এবং শ্যামাপদ বাউড়ি (৩৪)। রাতে ডিএসপি হাসপাতালে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, মৃত দুই ঠিকা শ্রমিক গ্যাস মুখোশ ছাড়াই কাজে গিয়েছিলেন। যে সমস্ত কাজে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে গ্যাস মিটার নিয়ে কর্মীদের যাওয়ার কথা। তাও তাঁদের দেওয়া হয়নি। যে কাজ শেষ করে ফিরতে ঘন্টা খানেকের বেশি লাগার কথা নয় তা করতে গিয়ে তাঁরা যে ঘন্টার পর ঘন্টা ফিরলেন না তাও কেউ দেখার ছিলেন না। আগে দেখা গেলে হয়তো তাঁদের বাঁচানো যেত। তাঁদের আরও দাবি, ৩ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেস সংলগ্ন বাতাসে বিপজ্জনক গ্যাসের উপস্থিতি মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল দুপুর থেকেই। তা সত্বেও দুই ঠিকা শ্রমিককে ব্লাস্ট ফার্নেস পরিস্কারের কাজে যেতে কেউ বাধা দেননি।
দুই ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যুতে সরব হয় ডিএসপি’র শ্রমিক সংগঠনগুলি। একযোগে সিটু, আইএনটিটিইউসি, আইএনটিইউসি দ্রুত ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। পরদিনই ঘটনার তদন্তে দুই সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে। সেই রিপোর্ট এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হবে, ঠিক কি কারণে দুই ঠিকা কর্মীদের মৃত্যু হয়েছে এবং মৃত্যুর পিছনে কার গাফিলতি রয়েছে। এরপরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ডিএসপি সূত্রে জানানো হয়েছে, যে আধিকারিকের দিকে গাফিলতির তির তিনি তদন্তে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করবেন। তিনি চেষ্টা করবেন তথ্য প্রমাণ লোপাটেরও। তদন্ত কাজ সঠিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তথ্যপ্রমাণ লোপাটের কোনও সুযোগ যাতে না থাকে তা নিশ্চিত করেই এগোচ্ছে কমিটি। সেই কারণেই কি ব্লাস্ট ফার্নেস বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজিএম বেদপ্রকাশ গুপ্তকে ‘সাসপেন্ড’ করা হয়েছে? বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ডিএসপি কর্তৃপক্ষ।