Advertisement
E-Paper

তৃণমূল নেতাকে অমান্য, সাসপেন্ড ৩ শিক্ষক

স্কুলের স্টাফরুমে বসার জায়গা নিয়ে তৃণমূল নেতাদের হস্তক্ষেপ তথা দাদাগিরি মানতে রাজি হননি কয়েক জন শিক্ষক। পরিচালন সমিতির সভা বসিয়ে দু’দিনের মধ্যে তাঁদের সাসপেন্ড করে দেওয়া হল। বর্ধমানের কেতুগ্রামে গঙ্গাটিকুরী অতীন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দিরের ওই তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস তো দেওয়া হয়ইনি। কী কারণে তাঁদের ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করা হল, তা-ও চিঠিতে জানানো হয়নি। বৃহস্পতিবার এই মর্মে স্কুলে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, কারণের উল্লেখ নেই তাতেও।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৩৭
দেবাশিস মণ্ডল ও কুন্তল দত্ত

দেবাশিস মণ্ডল ও কুন্তল দত্ত

স্কুলের স্টাফরুমে বসার জায়গা নিয়ে তৃণমূল নেতাদের হস্তক্ষেপ তথা দাদাগিরি মানতে রাজি হননি কয়েক জন শিক্ষক। পরিচালন সমিতির সভা বসিয়ে দু’দিনের মধ্যে তাঁদের সাসপেন্ড করে দেওয়া হল।

বর্ধমানের কেতুগ্রামে গঙ্গাটিকুরী অতীন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দিরের ওই তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস তো দেওয়া হয়ইনি। কী কারণে তাঁদের ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করা হল, তা-ও চিঠিতে জানানো হয়নি। বৃহস্পতিবার এই মর্মে স্কুলে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, কারণের উল্লেখ নেই তাতেও। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই স্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা একযোগে ক্লাস বয়কট করেন। স্কুল তো বটেই, প্রধান শিক্ষকের বাড়ি, কেতুগ্রাম ২ ব্লক স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক) দফতরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়া-অভিভাবকেরা। বিক্ষোভ চলাকালীন কয়েক জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত স্কুলের দুটি স্টাফরুমে কে কোথায় বসবেন, তা নিয়ে। স্কুল সূত্রে জানা যায়, এ ব্যাপারে শিক্ষকেরা দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন। এক দিকে ১৪ জন শিক্ষক, অন্য দিকে ৬ জন। অধিকাংশ শিক্ষকের বক্তব্য ছিল, যাঁর যেখানে ইচ্ছা, তিনি সেখানে বসবেন। কিন্তু কয়েক জন শিক্ষক তাঁদের ঘর ছাড়তে রাজি হচ্ছিলেন না। শিক্ষিকা পিয়ালী সামন্ত, চম্পা মণ্ডলদের অভিযোগ, “গত মঙ্গলবার আমরা একটি স্টাফরুমে বসতে গেলে কিছু শিক্ষক বসতে দিতে রাজি হন নি। পরে পরিচালন সমিতির সম্পাদক এসে বলে যান, “যার যেখানে খুশি বসবেন। স্টাফরুম তো ব্যক্তিগত জায়গা নয়।”

শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, কিছুক্ষণ পরেই কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা দেবাশিস মণ্ডল এবং স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) কুন্তল দত্ত এসে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চান। তিন শিক্ষক প্রতিবাদ করে বলেন, “বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়টি এটি। পরিচালন সমিতিতে আগে আলোচনা করা হবে না কেন?” এতেই মেজাজ হারিয়ে দেবাশিসবাবু হুমকি দেন, ‘আমি মিটিং করতে এসে ফিরে গেলে ফল ভয়ানক হবে, দেখব মাস্টারমশাইদের চাকরি কী করে থাকে?’ বুধবার কেতু্গ্রাম ২ বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এই অভিযোগ জানিয়েছেন। তৃণমূল নেতা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ওই দিনই দেবাশিসবাবু ও কুন্তলবাবু পৃথক ভাবে ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি ছিল, মিড-ডে মিল, স্কুলবাড়ির রঙ ও বসার ঘর নিয়ে অস্থির পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁরা স্কুলে গিয়েছিলেন। এর পরেই ২৪ ঘণ্টার নোটিসে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বৈঠক ডেকে কোনও ‘শো-কজ’ না করেই সামশের মুর্শিদ, মানিক বিশ্বাস ও পরিমল বৈদ্য নামে তিন প্রতিবাদী শিক্ষকের হাতে ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করার চিঠি ধরিয়ে দেয় তৃণমূল সমর্থিত পরিচালন সমিতি।

তৃণমূল নেতাদের দাদাগিরি না মানাতেই শিক্ষকদের এই পরিণতি?

অভিযোগ উড়িয়ে দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, “আমরা কেন স্কুলে গিয়েছি, ওই তিন শিক্ষক তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এতে আমরা লাঞ্ছিত, লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করেছি।” প্রধান শিক্ষক তড়িৎকুমার চট্টোপাধ্যায়ও দাবি করেন, “দেবাশিসবাবু কিছু করেননি, বরং শিক্ষকেরাই ওঁকে অপমান করেছেন। এখন আবার পড়ুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে!” কেন তিন শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হল। প্রধান শিক্ষকের ব্যাখ্যা, “পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি এবং এসআই (প্রাথমিক) কুন্তল দত্তকে হেনস্থা করার জন্য শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ওই তিন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালন সমিতি।”

স্কুলের পরিচালন সমিতিরই সদস্য সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ষড়যন্ত্র করে তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া তিন শিক্ষকের মধ্যে দু’জন পরিচালন সমিতির সদস্য, তাঁদের এই বৈঠকে ডাকা হয়নি। পরিচালন সমিতির সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও দেবাশিসবাবু ও তৃণমূল নেতা শ্যামল মুখোপাধ্যায় বৈঠকে হাজির ছিলেন।” তা হলে তিনি সই করলেন কেন? সুনীলবাবুর দাবি, “চাপে পড়ে বরখাস্তের চিঠিতে সই করতে হয়েছে।” স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবক বালুটিয়া গ্রামের সুজিত পাল, গঙ্গাটিকুরি গ্রামের সুনীল মণ্ডেলরা বলেন, “ছাত্রদরদী শিক্ষকদের প্রতি এই আচরণে ছেলেমেয়েরা বাড়িতে গিয়ে কাঁদছে। তাই আমরা কাজ ফেলে স্কুলে ছুটে এসেছি।”

শ্যামলবাবু ও দেবাশিসবাবু বৈঠকে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। বরং দেবাশিসবাবুর পাল্টা চ্যালেঞ্জ, “আমরা যে ওই বৈঠকে ছিলাম, তার কোনও ফুটেজ আছে না কি! নথি আছে!” স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) কুন্তলবাবুর ভূমিকা কী? তিনি বলেন, “আমাকেও স্কুলের শিক্ষকেরা অপমান করেছেন। আমি পরিচালন সমিতির সভাপতিকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়েছেন।” যদিও কাটোয়া মহকুমা স্কুল পরিদর্শক বিপদভঞ্জন মণ্ডলকে তিনি কিছুই জানাননি। বিপদভঞ্জনবাবু বলেন, “নিয়ম হল, কাউকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হলে পরিচালন সমিতি প্রস্তাব নিয়ে পর্ষদকে জানাবে। সেখান থেকে অনুমোদন এলে তবেই তা করা যাবে। সাধারণত স্কুল চলার সময়েই পরিচালন সমিতির বৈঠক করার নিয়ম। কেন সকালে বৈঠক করা হল, তা জানতে হবে।” পরিচালন সমিতির সভাপতিকে বাড়িতে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।

suspend teachers tmc leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy