শ্যাম গোষ্ঠীর কারখানার সাইডিং। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
অভিযোগ হলে হইচই শুরু হয়। কিন্তু সেই অভিযোগ হয় খুব কম ক্ষেত্রে। জঙ্গি আন্দোলন করে অচলাবস্থা তৈরি বা চাপ দিয়ে কোনও কিছু আদায়ের ঘটনাসংস্থার স্বার্থে অধিকাংশ সময়েই এ সব থানা অবধি নিয়ে যেতে চান না কল-কারখানা কর্তৃপক্ষ। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বেশ কিছু কারখানার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমনই তথ্য।
জামুড়িয়ায় তৃণমূলের নেতার বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ এনেছে শ্যাম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ সত্ত্বেও জামুড়িয়ায় সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরই একাংশ। শুধু জামুড়িয়া নয়, শিল্পাঞ্চলের একাধিক জায়গায় এমন সিন্ডিকেট চলছে বলে অভিযোগ উঠছে।
দিন কয়েক আগে দলেরই নেতার বিরুদ্ধে শীর্ষ নেতৃত্ব ও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান দুর্গাপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। আরআইপি শিল্পতালুক ও মুচিপাড়া বাজারে খোকন রুইদাস নামে ওই নেতা তোলাবাজি করছেন বলে অভিযোগ জানান নিখিলবাবু। শিল্প সংস্থার কর্তা ও ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছে এ ব্যাপারে দরবার করেছিলেন বলে জানান বিধায়ক। খোকনবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে দল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খোকনবাবুর বিরুদ্ধে এখনও কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে তাঁকে একদফা জেরা করা হয়েছে।
রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পরে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নানা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের নামে অচলাবস্থা তৈরির অভিযোগ নতুন নয়। ২০১২ সালে দুর্গাপুরের নমো সগড়ভাঙায় জয় বালাজির ইস্পাত কারখানায় প্রশাসনিক ভবনে জোর করে ঢুকে কারখানার অভ্যন্তরীণ বৈঠক ভেস্তে দেওয়া ও আধিকারিকদের আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল যুব তৃণমূলের তৎকালীন দুর্গাপুর ৩ ব্লক সভাপতি অসীম প্রামাণিকের বিরুদ্ধে। সেই রাতে কারখানার এক কর্তা নিজের আবাসনে মুখে কাপড় ঢাকা কিছু দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হন। এই ঘটনার পরে কারখানা গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনার কথাও জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। অসীমবাবুর বিরুদ্ধে তার পরেও গোলমাল পাকানোর অভিযোগ উঠেছে। বিধাননগরে একটি বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভের নামে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিবেশ বিঘ্নিত করার অভিযোগ উঠেছিল। শেষে ২০১৩ সালে তাঁকে বহিষ্কার করে তৃণমূল।
তৃণমূল বা শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেও বারবার কাজ বিঘ্নিত হয়েছে নানা সংস্থায়। ডিপিএলে এমন ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েক বার। সেখানকার নেতা দেবদাস মজুমদারের অনুগামীদের বিরুদ্ধে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে হেনস্থার অভিযোগও ওঠে। পরে দেবদাসবাবুর বিরুদ্ধে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে পুলিশেও অভিযোগ হয়।
কাঁকসায় এসার অয়েলের প্রকল্পে নানা এলাকায় বিভিন্ন রকম দাবিতে বারবার কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে। প্রতি বারই নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। শেষে সমস্যা মেটাতে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৈঠক করেন দুর্গাপুরে। কাজ আটকে বিক্ষোভ না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের নির্দেশ দিয়ে যান তিনি।
আসানসোল-জামুড়িয়া শিল্পাঞ্চলেও অনেক সময়েই তাঁরা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন নানা কারখানা কর্তৃপক্ষ।
আসানসোলের কন্যাপুর শিল্পতালুকে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে একটি বিস্কুট কারখানা। ওই কারখানার কর্তারা জানান, বন্ধের কারণ শ্রমিক অসন্তোষ। তাঁদের দাবি, অহেতুক মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে শ্রমিক সংগঠনের নামে শাসকদলের কিছু লোকজন কারখানার উৎপাদনে বাধা দেন। ওই শিল্পতালুকেরই অন্য একটি বিস্কুট কারখানায় পাঁচ মাস আগে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। সেখানেও লোক নিয়োগের দাবি জানিয়ে শাসকদলের একাংশ জোরাজুরি করেন বলে অভিযোগ। পরে আসানসোল বণিকসভার মধ্যস্থতায় সেখানে সমস্যার সমাধান হয়। আরও অভিযোগ, ওই শিল্পতালুকেই একটি গ্যাস উৎপাদন সংস্থায় পরিবহণ কর্মী নিয়োগের দাবিকে কেন্দ্র করে আইএনটিটিইউসি-র কর্মীরা প্রায়শয়ই ঝুট ঝামেলা করেন। এর ফলে গ্যাস উৎপাদন থেকে পরিবহণ, সবই ব্যাহত হয় বলে অভিযোগ। বারাবনি, সালানপুর এলাকায় একাধিক বেসরকারি কয়লা খনি আছে। সিন্ডিকেট-রাজ বা জুলুমবাজির অভিযোগ এই সব খনি এলাকাতেও মাঝে-মধ্যেই শোনা যায়।
তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, দলের কেউ কোথাও সিন্ডিকেট বা তোলাবাজি চালাচ্ছেন খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরি সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “দলের নাম করে কেউ এ সব করবে, তা বরদাস্ত করা হবে না। অভিযোগ পেলেই আমরা পদক্ষেপ করি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy