ঘটনাস্থলে ভিড় গ্রামবাসীদের।—নিজস্ব চিত্র।
দামোদরে তলিয়ে যাওয়া বুদবুদের আরও দুই যুবকের দেহ মিলল বুধবার। কাঁকসার সিলামপুরে স্নান করতে গিয়ে মঙ্গলবার তলিয়ে গিয়েছিলেন তিন জন। যাদব ঘোষ নামে এক যুবকের দেহ সে দিন মিললেও বাকিদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ দিন সকালে প্রথমে সমরেশ রায়ের (২০) দেহ উদ্ধার হয়। বিকেলে জয়দীপ ঘোষের দেহ (২৫) মেলে। দামোদরে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও সচেতনতার ব্যবস্থা করা হয় না বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা।
বুদবুদের নস্করবাঁধ গ্রাম থেকে সিলামপুরে দামোদরে জনা দশেক যুবক স্নান করতে গিয়েছিলেন মহালয়ার দুপুরে। বাকিরা স্নান সেরে উঠে গেলেও যাদব, সমরেশ ও জয়দীপ ওঠেননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু ক্ষণ পরে তাঁরা তলিয়ে যেতে থাকেন। অন্য যুবকেরা চেষ্টা করেও তাঁদের টেনে তুলতে পারেননি। জাল ফেলে উদ্ধারকাজ শুরু করা হলে ঘণ্টা দুয়েক পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মিলেছিল কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজের এমটেক প্রথম বর্ষের ছাত্র যাদবের দেহ।
বুধবার সকাল হতে না হতেই ফের দামোদরের পাড়ে হাজির হন নস্করবাঁধ-সহ আশপাশের বেশ কিছু গ্রামের অনেক মানুষজন। জাল, কাঁটা নিয়ে তাঁরা উদ্ধারকাজ শুরু করেন। ঘণ্টা তিনেক পরে ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সাঁকুড়ি গ্রামের চরে সমরেশের দেহ মেলে। এ দিনই দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্ত শেষে সমরেশ ও যাদবের দেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সারা দিন জয়দীপের দেহ না মেলায় কলকাতা থেকে ডুবুরি আনার ব্যবস্থা করে পুলিশ। কিন্তু, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ঘটনাস্থলের কাছেই পাড় বাঁধানোর বালির বস্তার পাশে তাঁর দেহ মেলে। জয়দীপ একটি বেসরকারি কারখানার কর্মী ছিলেন।
দামোদরে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। মাস চারেক আগেই দুর্গাপুর ব্যারাজের ৪ নম্বর গেটের কাছে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে মৃত্যু হয় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চার ছাত্রের। শুধু দুর্গাপুর ব্যারাজ নয়। বুদবুদের রণডিহাতেও এরকম ঘটনা আগে ঘটেছে। কয়েক মাস আগেই পরিবারের সঙ্গে পিকনিকে গিয়ে স্নান করতে নেমে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক যুবকের। সারা বছরই দামোদরে এই রকম নানা দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ, প্রশাসনের তরফে সচেতনতা মূলক কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। ব্যারাজে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কিছু দিনের জন্য নজরদারির ব্যবস্থা হয়। কিন্তু, কয়েক দিন পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। অন্য জায়গায় সেই নজরদারিও চালানো হয় না বলে অভিযোগ। রণডিহায় নিয়মিত বহু মানুষ স্নান করতে আসেন। একটি নিষেধাজ্ঞা বোর্ড ছাড়া আর কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা দেখা যায় না সেখানে। বাসিন্দাদের দাবি, মকর সংক্রান্তি, মহালয়া ইত্যাদি দিনগুলিতে, যখন প্রচুর মানুষ স্নানে আসেন, সেই সময়ে নজরদারি চালাতে হবে প্রশাসনকে।
বুদবুদ থানার পুলিশ জানিয়েছে, কী ভাবে এই বারবার দুর্ঘটনা রোধ করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) কস্তুরী সেনগুপ্ত বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে কাঁকসা ও গলসি-১ বিডিও-র আলোচনা হয়েছে। পুজোর পরে এ নিয়ে ফের বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy