Advertisement
E-Paper

দূষণ থেকে জলসঙ্কট, জেরবার বাসিন্দারা

কারখানা চালু থাকাকালীন এলাকায় নাগরিক পরিষেবার নানা কাজ তারাই করত। ফলে, সমস্যা ছিল না বাসিন্দাদের। কিন্তু, কারখানার দুর্দিন শুরু হওয়ায় জল সরবরাহ থেকে এলাকা সাফাইসব কিছু নিয়েই মুশকিলে পড়েছেন রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দারা। প্রশাসনও এ দিকে নজর দিচ্ছে না বলে তাঁদের অভিযোগ। কারখানার যখন রমরমা ছিল তখন রাস্তায় আলো লাগানো, এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করতেন হিন্দুস্তান কেব্‌লস কর্তৃপক্ষ। এই শিল্পাঞ্চলের সর্বত্রই পানীয় জলের রীতিমতো সঙ্কট।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪১
ধোঁয়ায় নাজেহাল রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দারা। ছবি: শৈলেন সরকার।

ধোঁয়ায় নাজেহাল রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দারা। ছবি: শৈলেন সরকার।

কারখানা চালু থাকাকালীন এলাকায় নাগরিক পরিষেবার নানা কাজ তারাই করত। ফলে, সমস্যা ছিল না বাসিন্দাদের। কিন্তু, কারখানার দুর্দিন শুরু হওয়ায় জল সরবরাহ থেকে এলাকা সাফাইসব কিছু নিয়েই মুশকিলে পড়েছেন রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দারা। প্রশাসনও এ দিকে নজর দিচ্ছে না বলে তাঁদের অভিযোগ।

কারখানার যখন রমরমা ছিল তখন রাস্তায় আলো লাগানো, এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করতেন হিন্দুস্তান কেব্‌লস কর্তৃপক্ষ। এই শিল্পাঞ্চলের সর্বত্রই পানীয় জলের রীতিমতো সঙ্কট। সংস্থার নিজস্ব জলপ্রকল্প থেকে নিজেদের কর্মী আবাসনগুলি ছাড়াও আশপাশের এলাকাতেও জল সরবরাহ করতেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন আর তা হয় না। চিত্তরঞ্জনে অবশ্য পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ নেই। এই গোটা শহরটির দেখভাল করেন রেল কর্তৃপক্ষ। রাস্তাঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ, নিকাশি ব্যবস্থা থেকে নিজস্ব প্রকল্প থেকে পানীয় জল সরবরাহসবই তাঁরা করে থাকেন। নিজস্ব দমকল কেন্দ্র, হাসপাতালও রয়েছে তাঁদের। সে কারণে রূপনারায়ণপুরে কেব্‌লস কারখানায় অন্ধকার নামার পর থেকেই এলাকায় নাগরিক পরিষেবা নিয়ে যে ধরনের অভিযোগ উঠেেছে, চিত্তরঞ্জনের ক্ষেত্রে তার ছিটেফোঁটা নেই।

রূপনারায়ণপুরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের উপরে নির্ভরশীল বাসিন্দারা। অনেকেই কুয়ো বা গভীর নলকুপ খুঁড়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু খনি এলাকা হওয়ায় জলস্তর খুঁজে পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। তার উপরে ইদানীং যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা বহুতলে গভীর নলকূপ বসিয়ে জল তোলায় জলস্তর আরও নীচে নেমে গিয়েছে বলে অভিযোগ। আলকুষায় ইসিএলের একটি পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির জল শোধন করে প্রায় ১৪টি মৌজায় সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই অনেক জায়গায় সেই প্রকল্পের জল পৌঁছচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কেব্‌লস কারখানার একটি দমকল বিভাগ ছিল। দু’টি ইঞ্জিন ছিল সেখানে। রূপনারায়ণপুর-সহ আশপাশের এলাকায় বহু বার তারা আগুন নেভানোর কাজ করেছে। কিন্তু এখন সে সব নেই। এখন আসানসোল দমকল দফতরে খবর দিতে হয়। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে আসতে হয় তাদের। খারাপ রাস্তার জন্য পৌঁছতেও সময় বেশি লাগে। সে কারণে বেশ কয়েক বার আগুন ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিশ্বনাথ রুজের দাবি, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় দোকানপাট বেড়েছে। এখানে অন্তত এক ইঞ্জিনের একটি দমকল কেন্দ্র গড়া উচিত।”

যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষুব্ধ রূপনারায়ণপুরের মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, সন্ধ্যা ৭টার পরেই আসানসোলের সঙ্গে রূপনারায়ণপুরের যোগাযোগ কার্যত ছিন্ন হয়ে যায়। বাস চলে না। বেশি টাকা গুণে গাড়ি ভাড়া করে আসা-যাওয়া করতে হয়। বাসিন্দারা জানান, হাতে গোনা দু’একটি দূরপাল্লার ট্রেন রূপনারায়ণপুর স্টেশনে থামে। তাই অনেককেই আসানসোল স্টেশনে নেমে বাড়ি ফিরতে হয়। রাতে বেশ বিপাকে পড়তে হয় তাঁদের। অনেকেই জানান, রাতে কোলফিল্ড বা অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে কলকাতা থেকে ফিরলে বেশ বিপাকে পড়তে হয়। তাঁদের অভিযোগ, রাতে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের নিয়ে রূপনারায়ণপুর আসার একটি বাস ছিল। কিন্তু কোনও কারণে সেটি কয়েক বছর ধরে বন্ধ। বহু দিন ধরে এলাকার বাসিন্দারা বাসটি চালুর দাবি তুলেছেন।

দুই রাজ্যের সীমানায় এই শহরে নিরাপত্তার বিষয়টিও অবহেলিত বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এখান থেকে কয়েকশো মিটার দূরে ঝাড়খণ্ড। বাসিন্দাদের অভিযোগ, চুরি, ছিনতাই, দুষ্কর্ম সেরে অপরাধীরা সহজেই সীমানা পেরিয়ে যেতে পারে। পুলিশের পক্ষে তাদের সহজে ধরা সম্ভব হয় না। তাই নিরাপত্তা আরও জোরদার করার পক্ষে মত দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। এই এলাকায় দূষণের সমস্যাও রীতিমতো। দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়ায় তাঁরা জেরবার। ঘরের মেঝেতে কয়েক ইঞ্চি কালো আস্তরণ পড়ে গিয়েছে। আঢাকা রাখলেই ভাতের রঙ কালো হয়ে যায়। কিছু লোকজন আশপাশের অঞ্চলে অবৈধ খাদান থেকে কয়লা তুলে ফাঁকা মাঠে পুড়িয়ে জ্বালানির উপযোগী করা। এমন সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনকে জানিয়েও ফল হয়নি বলে তাঁদের দাবি।

আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জল সমস্যা ও যোগাযোগের অব্যবস্থা দূর করতে ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল মজুমদার জানান, দূষণ রোধ ও দমকল কেন্দ্র নিয়ে এলাকাবাসীর দাবিও প্রশাসন বিবেচনা করছে।

(চলবে)

sushanta banik rupnarayanpur chittaranjan pollution amar shohor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy