Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ধুঁকছে বহু ভারী শিল্প, ফল ভুগছে ছোট সংস্থা

নতুন শিল্পের দেখা নেই। পুরনো নানা শিল্প সংস্থারও হাল বিশেষ ভাল নয়। ভারী শিল্পে এমন পরিস্থিতির কোপ পড়তে শুরু করেছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নানা অনুসারী শিল্পে। ধুঁকতে শুরু করেছে এই রকম নানা সংস্থা। লোকসানে পড়ে কেউ ঝাঁপ ফেলছেন সংস্থায়, কেউ বা আবার কর্মী ছাঁটাইয়ের রাস্তা নিচ্ছেন। অনুসারী শিল্পে উন্নতি না হওয়ার ফলে ধুঁকছে শিল্পতালুকগুলিও।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫২
Share: Save:

নতুন শিল্পের দেখা নেই। পুরনো নানা শিল্প সংস্থারও হাল বিশেষ ভাল নয়। ভারী শিল্পে এমন পরিস্থিতির কোপ পড়তে শুরু করেছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নানা অনুসারী শিল্পে। ধুঁকতে শুরু করেছে এই রকম নানা সংস্থা। লোকসানে পড়ে কেউ ঝাঁপ ফেলছেন সংস্থায়, কেউ বা আবার কর্মী ছাঁটাইয়ের রাস্তা নিচ্ছেন। অনুসারী শিল্পে উন্নতি না হওয়ার ফলে ধুঁকছে শিল্পতালুকগুলিও।

ইস্পাত, খনি-সহ নানা বড় শিল্প সংস্থার উপরে নির্ভর করে এই শিল্পাঞ্চলে তৈরি হয়েছে নানা অনুসারী কল-কারখানা। সাধারণত ভারী শিল্প সংস্থায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-সহ নানা জিনিসপত্র তৈরি করে তারা। শুধু এই শিল্পাঞ্চলের বড় কারখানা নয়, এই রাজ্যে ও আশপাশের নানা রাজ্যেও এখানকার কারখানাগুলি থেকে মালপত্র যেত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চিত্রটা পাল্টাতে শুরু করে। উত্‌পাদিত জিনিসের চাহিদা কমায় ধুঁকছে অনুসারী শিল্প সংস্থাগুলি।

১৯৭৪ সালে প্রশাসন নিয়ম করেছিল, এখানকার অনুসারী শিল্পগুলিকে কিছু বরাত দিতে বাধ্য থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত ভারী শিল্প সংস্থাগুলি। এ প্রসঙ্গে ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “আমরা প্রতি বছরই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এখানকার অনুসারী শিল্প সংস্থাগুলিকে বরাত দিয়ে থাকি।” ইস্কোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার জানান, আইএসপি-র সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তাঁদেরও পরিকল্পনা আছে অনুসারী শিল্পের কাছ থেকে কিছু সামগ্রী কেনার। তবে নানা ছোট-মাঝারি সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, হিন্দুস্তান কেব্‌লস, এমএএমসি, অ্যালয় স্টিল, সাইকেল কর্পোরেশন, বালকো, কুলটির ইস্কো-সহ নানা ভারী রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সংস্থা ও তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নতুন কোনও ভারী শিল্প এই অঞ্চলে আসেনি। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এখন ভারী শিল্প হাতে গোনা। তাই অনুসারী শিল্প সংস্থার উত্‌পাদিত্‌ সামগ্রী বিক্রির জায়গাও কমেছে।

আসানসোলের কোল অ্যান্ড স্টিল এসএসআই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরএন যাদবের খেদ, ইস্পাত কারখানা ও খনিগুলি আগের তুলনায় বরাত অনেক কমিয়ে দিয়েছে। অন্য রাজ্যগুলিতেও এখন আগের তুলনায় অনেক কম সামগ্রী সরবরাহ হচ্ছে। কারণ, ওই সব রাজ্যের সরকার নিজেদের সেখানে অনুসারী ও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের জন্য শিল্পপতিদের উত্‌সাহ ও বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। ফলে, সেখানে এই ধরনের শিল্পের রমরমা শুরু হয়েছে। এখান থেকে সামগ্রী যাচ্ছে না। তাঁর বক্তব্য, “আমরা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি। বহু শিল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বড় শিল্প না এলে আমাদের বাঁচা মুশকিল।” অপর এক শিল্পোদ্যগী সঞ্জীব সামন্তও দাবি করেন, এখানকার অনুসারী শিল্পকে বাঁচাতে হলে রাজ্যে ভারী শিল্প আনতে হবে। এ ছাড়া রুগ্‌ণ সংস্থাগুলিকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। সঞ্জীববাবুর কথায়, “তা না হলে নতুন প্রজন্ম আর ক্ষুদ্র শিল্পে এগিয়ে আসবে না।”

দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃপাল সিংহ অভিযোগ করেন, সরকারের তরফেও অনুসারী শিল্পকে এখন আর মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ, বহু মানুষ এই শিল্প সংস্থাগুলির উপরে নির্ভরশীল। অনেক ভারী শিল্প বন্ধ। রাজ্যে নতুন শিল্প হচ্ছে না। তাই মার খাচ্ছে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। তিনি বলেন, “আমরা সরকারের কাছে এই শিল্প বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি।”

ক্ষুদ্র ও অনুসারী শিল্পগুলির অবস্থা যে দিন-দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে, তা ‘ডিরেক্টরেট অব মাইক্রো অ্যান্ড স্মল স্কেল এন্টারপ্রাইজ’-এর এক আধিকারিক স্বীকার করেন। তিনি মেনে নেন, ভারী শিল্প আসছে না। অনেকগুলি সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা হলে ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা উত্‌পাদিত সামগ্রী বিক্রি করবে কোথায়। সংস্থা সূত্রে মেলা গত তিন বছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, ২০১০-১১ আর্থিক বর্ষে বিনিয়োগ ছিল প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। ২০১১-১২ বর্ষে ছিল সাড়ে আট কোটি টাকা। তার পরের বছর বিনিয়োগ হয় আট কোটি টাকা। চলতি বছরে বিনিয়োগ কমে হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। যদিও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর মৌ সেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sushanta banik asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE