Advertisement
E-Paper

নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে নারাজ দুই শিক্ষক

তিন সহকর্মীকে বেআইনি ভাবে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে স্কুলে উপস্থিত হয়েও হাজিরা খাতায় সই করলেন না ১৪ শিক্ষক-শিক্ষিকা। ফলে শুক্রবার প্রথম পিরিয়ডের পরেই ছুটি দিতে বাধ্য হলেন বর্ধমানের গঙ্গাটিকুরী অতীন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষ। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিন শিক্ষকের মধ্যে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক ‘চাপে’ পড়ে তৃণমূল পরিচালিত কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবাশিস মণ্ডলের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠিও দিলেন এ দিন। তবে বাকি দুই শিক্ষক নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিতে রাজি হননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৯
গঙ্গাটিকুরির স্কুলে বন্ধ ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গাটিকুরির স্কুলে বন্ধ ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।

তিন সহকর্মীকে বেআইনি ভাবে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে স্কুলে উপস্থিত হয়েও হাজিরা খাতায় সই করলেন না ১৪ শিক্ষক-শিক্ষিকা। ফলে শুক্রবার প্রথম পিরিয়ডের পরেই ছুটি দিতে বাধ্য হলেন বর্ধমানের গঙ্গাটিকুরী অতীন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষ।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিন শিক্ষকের মধ্যে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক ‘চাপে’ পড়ে তৃণমূল পরিচালিত কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবাশিস মণ্ডলের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠিও দিলেন এ দিন। তবে বাকি দুই শিক্ষক নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিতে রাজি হননি। ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিকেলে কাটোয়া মহকুমার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিপদভঞ্জন মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি জানান।

কিছুদিন ধরেই ওই স্কুলের স্টাফ রুমে বসার জায়গা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে গণ্ডগোল চলছিল। শিক্ষকদের একাংশের দাবি, কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস মণ্ডলের দাদাগিরি মানতে রাজি হননি ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক। দু’দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার সময় বৈঠক ডেকে সামশের মুর্শিদ, মানিক বিশ্বাস ও পরিমল বৈদ্য নামে ওই তিন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন পরিচালন সমিতির সম্পাদক সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায়। তবে কী কারণে ওই তিন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হল তা চিঠিতে কিংবা স্কুলের নোটিশ বোর্ডে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়নি। শিক্ষকদের সাসপেন্ড হওয়ার খবর শুনে ওই দিনই পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা ক্লাস বয়কট করেন। স্কুলের গেটে তো বটেই, প্রধান শিক্ষকের বাড়ি, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক) দফতরেও বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা।

শুক্রবার অন্যান্য দিনের তুলনায় পড়ুয়াদের উপস্থিতি অনেক কম ছিল। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সামশের মুর্শিদ ও মানিক বিশ্বাস অবশ্য স্কুলে এসেছিলেন। তাঁদের অন্যায় ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে ১৪ জন শিক্ষক স্কুলে এসেও হাজিরা খাতায় সই করেননি। ওই শিক্ষকদের দাবি, “আমরা প্রতিবাদে হাজিরা খাতায় সই করিনি। তবে পড়ুয়াদের কথা ভেবে ক্লাস নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্কুলের সহকারী শিক্ষক বলেন, এ ভাবে ক্লাস নেওয়া যাবে না।” পরিচালন সমিতি তাঁদের সহকর্মীদের ‘সাময়িক বরখাস্ত’ না তুললে তাঁরা হাজিরা খাতায় সই করবেন না বলেও জানান। বিকেলে, ওই শিক্ষকরা কাটোয়া মহকুমার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিপদভঞ্জন মণ্ডলের কাছে গিয়ে একটা বিহিতের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি তাঁদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন বলে ওই শিক্ষকদের দাবি। দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, মিড-ডে মিলের রান্নাঘরের কাছে গঙ্গাটিকুরী ও বালুটিয়া গ্রামের পড়ুয়াদের মধ্যে গোলমাল বেঁধেছে। ব্যাপক চিৎকার চেঁচামেচি চলছে। মিড-ডে মিলের কর্মীরা ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই শিক্ষক মানিক বিশ্বাস ও সামশের মুর্শিদ গিয়ে পড়ুয়াদের বুঝিয়ে ঠান্ডা করেন। বাড়ি পাঠানোরও ব্যবস্থা করেন। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণপ্রসাদ দাস বৈরাগ্য বলেন, “কয়েকজন শিক্ষক স্কুলে এলেও হাজিরা খাতাই সই করেননি। এ অবস্থায় স্কুল চালানো সম্ভব নয় বলে প্রথম পিরিয়ডের পরেই ক্লাস সাসপেন্ড করে দিয়েছি। তবে দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট নেওয়া হয়েছে।”

এর আগে ওই তিন শিক্ষকের মধ্যে তৃণমূল ‘ঘনিষ্ঠ’ পরিমল বৈদ্য কেতুগ্রাম ২ ব্লক দফতরে গিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবাশিস মণ্ডলের কাছে লিখিত ভাবে ‘ক্ষমা’ চান। পরিচালন সমিতিকে চিঠি দিলেন না কেন জানতে চাওয়া হলে পরিমালবাবু বলেন, “যাঁর সঙ্গে ঘটনা, তাঁর কাছেই চিঠি দিয়েছি। উনি ওই চিঠি পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। এর বাইরে কিছু বলব না।” পরিমলবাবু ‘ক্ষমা’ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন জানার পর ‘চাপে’ পড়ে যান বাকি দুই শিক্ষক। তাঁরাও চিঠি দিয়ে ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেন। কিন্তু ‘ক্ষমা’ চাননি। ওই দুই শিক্ষকের দাবি, দেবাশিসবাবু আমাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পরিচালন সমিতিকে চিঠি দিতে বলেন। আমরা কোনও অন্যায় করিনি, এ রকম চিঠি দিয়ে মাথা নত করতে পারব না।”

এ প্রসঙ্গে দেবাশিসবাবু বলেন, “ওই তিন শিক্ষক আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। আমি ওই চিঠি স্কুলের পরিচালন সমিতির কাছে পাঠিয়ে দেব। তারপর পরিচালন সমিতি যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।” দেবাশিসবাবু রাখঢাক করলেও তাঁর সঙ্গী, তৃণমূল নেতা শ্যামল মুখোপাধ্যায় সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ‘মেমো’ দিয়ে শিক্ষকদের ‘সাময়িক বরখাস্ত’ তুলে নেওয়ার জন্য পরিচালন সমিতির কাছে সুপারিশ করেছেন। স্কুল পরিদর্শকও (প্রাথমিক) একই ভাবে সুপারিশ করেছেন। তাঁর আশা, ওই দুটো সুপারিশের চিঠি পৌঁছনোর পরেই পরিচালন সমিতি বৈঠক করে শিক্ষকদের উপর থেকে সাসপেন্ড তুলে নেবেন। প্রসঙ্গত, পরিচালন সমিতির যে বৈঠকে শিক্ষকদের ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করা হয়, সেই বৈঠকে পরিচালন সমিতির সদস্য না হয়েও দেবাশিসবাবু ও শ্যামলবাবু উপস্থিত ছিলেন।

ketugram gangatikuri school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy