পাখি চুড়িদার কেনাবেচা কালনায়।—নিজস্ব চিত্র।
ভিড়ে ঠাসা দোকান, নতুন জামাকাপড়ের প্লাস্টিকের খসখস শব্দ আর সঙ্গে সরু, মোটা নানা গলায় ভেসে আসছে একটাই কথা‘দাদা পাখি দেখান না’। হকচকিয়ে এ দিক ওদিক তাকাতেই দোকানের মালিক মুচকি হেসে বললেন, “এ পাখি সে পাখি নয়। পাখি চুড়িদার।” জানা গেল, বাংলা টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় চরিত্র পাখির পোশাকের মতো এই চুড়িদারই এ বার হিট।
কলকাতা বা সদর শহরগুলিতে পুজোর এক মাস আগে থেকেই বাজার শুরু হয়ে যায়। ভিড়, দর্জির দোকানের হুড়োহুড়ি এড়াতে অনেকে আবার সারা বছরই টুকটুক করে বাজার সেরে রাখেন। তবে আর পাঁচটা মহকুমা শহরের মতো কালনার বাজার শুরু হয় পুজোর সপ্তাহখানেক আগে। ধান, আলু বিক্রির টাকা কিংবা সরকারি অফিসের বোনাস না ঢুকলে পুজোর বাজার সেভাবে শুরু হয় না। ব্যবসায়ীরাও সেই অপেক্ষাতেই থাকেন।
শহরের বৈদ্যপুর মোড় লাগোয়া একটি শপিংমলে ঢুকতেই মালুম পড়ল পুজোর বাজারের ভিড়। কলেজ পড়ুয়া থেকে মাঝবয়েসী সবারই চোখ পাখি চুড়িদারে। ব্যবসায়ীরা জানান, আনারকলি ধাঁচের ওই চুড়িদারের ঘেরের কাজ আর রঙই চোখ টানছে ক্রেতাদের। ১২০০ থেকে ৪০০০ অবদি নানা দামে মিলছে নেট ও সুতির উপর এ ধরণের চুড়িদার। ওই শপিং মলের কর্ণধার রঞ্জিত হালদার বলেন, “খরিদ্দারদের একটা বড় অংশ দোকানে ঢুকেই পাখি চুড়িদার চাইছেন। জোগান দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি আমরা।” এছাড়া লম্বা ঝুলের ফ্রক, রাজস্থানি ঘাঘরার ঢঙে ডিজাইনার লাচারও চাহিদা রয়েছে। ছোটদের লাচা মিলছে ৭০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। আরা বড়দের লাচার দাম ১২০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকা। এছাড়া রঙিন প্যান্ট, জিনসের চাহিদা তো সারাবছরের। তবে সবচেয়ে বৈচিত্র্য শাড়ির বাজারে। বাহারি হাফ-হাফ শাড়িই এ বার কমবয়েসীদের পছন্দের তালিকায় সবচেয়ে উপরে। কাঁথাস্টিচের সঙ্গে চান্দেরি কিংবা দু’রঙা চান্দেরির উপর পাড় বসানো শাড়ি মিলছে ৭০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামে। সুতি ও সিল্কের মিশ্রণে কেরালা কটনেরও কদর রয়েছে ভাল। এ ছাড়াও সাউথ কটন, মঙ্গলগিরি, পাটোলা, হ্যান্ডলুম সিল্ক, বুটিকের শাড়িও বিক্রি হচ্ছে দেদার। ব্যবসায়ীদের দাবি, যে কোনও ধরনের শাড়িতেই পুরো শাড়ি জুড়ে কাজ খুঁজছেন ক্রেতারা।
কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের মধ্যে রঙিন সুতির প্যান্ট এবং ন্যারো জিনসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সাধারণ টি-শার্ট ছাড়াও বাহারি রঙের নিটিং টি-শার্ট এ বছর বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। শহরের শাহু সরকার মোড়ের ব্যাবসায়ী সুমিতকুমার বসু জানান, নতুন প্রজন্মের ছেলেরা এ বার টাইট ফিটিং জামা-প্যান্টের দিকেই বেশি ঝুঁকেছে। শহরের পুরনো ব্যবসায়ীরা বলেন, একসময় পুজো এলেই সাদা ধুতি আর গেঞ্জি কিনতে ভিড় জমাতেন মানুষ। এখন দু’একটা বনেদি বাড়ির অষ্টমী পুজো ছাড়া ধুতি পরার রেওয়াজ প্রায় উঠেই গিয়েছে। যদিও যাঁরা ফ্যাশন সচেতন তাঁদের অনেকেই আবার রঙিন ধুতিতে ফিরিয়ে আনছেন পুরনো দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy