Advertisement
E-Paper

পাঁচ বছর পরে কান্দরায় মিছিল করল সিপিএম

সকাল ন’টা। গলায় দলের উত্তরীয় জড়িয়ে কখনও জোড়হাত করে প্রচার শুরু করলেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম। গত লোকসভা নির্বাচনের পরে রামচন্দ্র ডোমের হাত ধরেই কার্যত এই প্রথম সিপিএম প্রকাশ্যে মিছিল করল কেতুগ্রামের কান্দরায়। সকাল ৮টাতেই প্রচার শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রার্থীও ঠিক সময়ে কেতুগ্রামে চলে এসেছিলেন। কিন্তু কান্দরাতে প্রচার শুরু করা নিয়ে সিপিএমের স্থানীয় নেতারা দ্বন্দ্বে পড়ে যান। সিপিএম সূত্রের খবর, কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেশ কিছু নেতার নামে এফআইআর রয়েছে। তাঁদের সামনে রেখে প্রচার করা ঠিক হবে কি না সে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় দলের অন্দরেই।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৮
বাঁ দিকে, কান্দরায় প্রচারে রামচন্দ্র ডোম। ডান দিকে, বন্ধ সিপিএম অফিস। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাঁ দিকে, কান্দরায় প্রচারে রামচন্দ্র ডোম। ডান দিকে, বন্ধ সিপিএম অফিস। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

সকাল ন’টা। গলায় দলের উত্তরীয় জড়িয়ে কখনও জোড়হাত করে প্রচার শুরু করলেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম। গত লোকসভা নির্বাচনের পরে রামচন্দ্র ডোমের হাত ধরেই কার্যত এই প্রথম সিপিএম প্রকাশ্যে মিছিল করল কেতুগ্রামের কান্দরায়।

সকাল ৮টাতেই প্রচার শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রার্থীও ঠিক সময়ে কেতুগ্রামে চলে এসেছিলেন। কিন্তু কান্দরাতে প্রচার শুরু করা নিয়ে সিপিএমের স্থানীয় নেতারা দ্বন্দ্বে পড়ে যান। সিপিএম সূত্রের খবর, কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেশ কিছু নেতার নামে এফআইআর রয়েছে। তাঁদের সামনে রেখে প্রচার করা ঠিক হবে কি না সে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় দলের অন্দরেই। শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত নেতা ফারুক মির্জা, তপন কাজি, আনসারুল হকদের ছাড়াই প্রচার শুরু হয়। রামবাবু বলেন, “তৃণমূল ভয় পেয়ে আমাদের দলের প্রথম সারির নেতাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে। ভাবছে, পঞ্চায়েতের মতো ভোট লুঠ করবে। কিন্তু আমরাও মরিয়া।” এ দিন দু’টি মালবাহী গাড়িতে সিপিএমের কর্র্মী-সমর্থকরা হাজির হন ওই এলাকায়। কান্দরা চৌরাস্তা থেকে কলেজের পাশ দিয়ে দাস পাড়া, মোল্লা পাড়ার ভিতর দিয়ে পিরতলায় শেষ হয় মিছিল। মিছিলে পা মেলান প্রায় আড়াইশো জন।

কয়েকদিন আগে কেতুগ্রামেরই অন্য একটি অংশে প্রচারে গিয়ে বেশ সাড়া পেয়েছিলেন রামচন্দ্রবাবু। তবে এ দিন মিছিল এগোলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সে রকম উৎসাহ চোখে পড়ে নি। নমস্কার বা হাত নাড়ার প্রত্যুত্তরে তেমন সাড়া পাননি সিপিএম প্রার্থী। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে লোকে প্রচার দেখছে, কথা বলছে এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি বললেই চলে। এমনকী সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরাও যেন স্বতস্ফূর্ত ছিলেন না। বেশ কয়েকজন কর্মী জানান, দলের নেতারাই ‘ভয়ে জড়সড়ো’, কোনও রকমে কান্দরায় মিছিল শেষ হলে হাফ ছেড়ে বাঁচেন। সেখানে তাঁদের অবস্থা আর কী হবে। যদিও সিপিএমের নেতারা প্রকাশ্যে সে কথা মানতে নারাজ। দলের জেলা কমিটির সদস্য, সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তমালচন্দ্র মাঝি বলেন, “এই অবস্থাতেও প্রচার দারুণ হয়েছে। মানুষের মধ্যে চরম উৎসাহ ছিল।” পিরতলায় মিছিল শেষ হওয়ার পরে কয়েকজন এগিয়ে এসে হাত মিলিয়ে যান সিপিএমের প্রার্থীর সঙ্গে। তাঁদের দাবি, এই এলাকা সিপিএমের ‘ঘাঁটি’। কিন্তু তৃণমূলের ‘দাপাদাপি’র কাছে তাঁরা অসহায়। মোরগ্রামের সৈয়দ আব্দুল কবীর বলেন, “আমি আজীবন ডানপন্থী। কিন্তু এখন পরিবর্তনের নামে যা চলছে তাতে আমাদের মতো অনেককেই বাঁচার জন্য বামপন্থীদের হাত ধরতে হচ্ছে।” তাঁর হাত দুটো ধরে রামচন্দ্রবাবু বলেন, “দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও আপনারই ফের বাঁচার রসদ জোগাচ্ছেন।”

বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের মিছিল। বৃহস্পতিবার ছবি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ আসে। শাসক দলের অনের কর্মী-সমর্থকই তৃণমূলে যোগ দেন। কেতুগ্রামও ব্যতিক্রম ছিল না। উপরন্তু ওই ব্লকের সিপিএমের দুটি লোকাল কমিটির মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। যার জেরে কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য আশিস ঠাকুর পার্টির সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করাননি বলেও দলেরই একাংশের খবর। এই পরিস্থিতিতে কান্দরায় প্রভাব বাড়তে থাকে তৃণমূলের। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসে একের পর এক খুন হয়। তাঁদের বহু কর্মী-নেতাদের ঘরছাড়া হতে হয়। এরপর থেকেই লোকাল কমিটির অফিস খোলার সাহস দেখায়নি সিপিএম। গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে কান্দরা-সহ ১৩টি গ্রামে সিপিএমের পা পড়েনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম।

সম্প্রতি পাঁচ বছর পরে দলের কেতুগ্রাম ১ উত্তর লোকাল কমিটির কার্যালয় খোলে সিপিএম। তবে তিন দিনের মাথায় তৃণমূলের হুমকিতে ওই পার্টি অফিস ফের বন্ধ করে দিতে হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ। ওই দিনই পালিটা গ্রামে পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে তাঁদের দলের লোকাল কমিটির সদস্য শিবশঙ্কর দাস তৃণমূলের হাতে প্রহৃত হন বলে কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ করে সিপিএম। পাল্টা তৃণমূলের শিবির থেকে সিপিএমের নেতাদের নামেও অভিযোগ করা হয়।

এ দিন প্রচারের মাঝেই পিরতলায় চায়ের দোকানে কিছুক্ষণ কাটান বিদায়ী সাংসদ। কান্দরায় বন্ধ থাকা পার্টি অফিসে গেলেন না কেন? প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “ওখানে যাওয়া তো দরকার। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখি।” বেশ কিছুক্ষণ ধরে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি বললেন, “ওখানে গেলে উত্তেজনা তৈরি হত। তাই আর গেলাম না।” এরপরে গাড়িতে চেপে রওনা দিলেন কেতুগ্রামের পার্টি অফিসের দিকে।

kandara soumen dutta cpm rally
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy