Advertisement
E-Paper

প্রার্থী মনকাড়া নয়, গলসিতে প্রচারে ধীরে চলছে দু’পক্ষই

আগের জন আড়াই বছরের মধ্যে দল ছেড়েছেন। সে নিয়ে হতাশা এখনও কাটেনি। এ বার যিনি প্রার্থী হয়েছেন তিনি আবার ‘বহিরাগত’। গলসি বিধানসভার উপ-নির্বাচনের প্রচার নিয়ে তাই এখনও বিশেষ তাপ-উত্তাপ নেই বাম কর্মী-সমর্থকদের।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৮
নন্দলাল পণ্ডিত।

নন্দলাল পণ্ডিত।

গৌর মণ্ডল।

আগের জন আড়াই বছরের মধ্যে দল ছেড়েছেন। সে নিয়ে হতাশা এখনও কাটেনি। এ বার যিনি প্রার্থী হয়েছেন তিনি আবার ‘বহিরাগত’। গলসি বিধানসভার উপ-নির্বাচনের প্রচার নিয়ে তাই এখনও বিশেষ তাপ-উত্তাপ নেই বাম কর্মী-সমর্থকদের। দলের স্থানীয় কোনও পরিচিত মুখকে প্রার্থী না করা নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে, খবর দলেরই একটি সূত্রে। সভা হচ্ছে, কিন্তু ডাক পাচ্ছেন না প্রার্থীই। তত্‌পরতা নেই দেওয়াল লিখনেও। সব মিলিয়ে, এই উপ-নির্বাচনে গা-ঝাড়া দিয়ে মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে না কোনও পক্ষকেই।

সীমানা পুনর্বিন্যাসের আগে ছিল কাঁকসা বিধানসভা। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সেখানে টানা জিতেছেন সিপিএম প্রার্থী। ২০০৬ সালে সিপিএম পেয়েছিল প্রায় ৬৫.৬৮ শতাংশ ভোট। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে উঠে যায় কাঁকসা বিধানসভা। গোপালপুর, মলানদিঘি, আমলাজোড়াতিনটি পঞ্চায়েত পড়ে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে। বাকি কাঁকসা, ত্রিলোকচন্দ্রপুর, বিদবিহার ও বনকাটি পঞ্চায়েত যায় গলসি বিধানসভার ভাগে। এ ছাড়া এই কেন্দ্রে রয়েছে গলসির ১১টি পঞ্চায়েত এলাকা। ২০১১ সালে বামফ্রন্টের তরফে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দেয় গলসিতে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কাঁকসার প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডল জানান, কাঁকসার যে চার পঞ্চায়েত গলসি কেন্দ্রে পড়ে, সেখানকার বামফ্রন্ট সমর্থকেরা এর আগে কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্নে সিপিএমকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু গত বার প্রতীক বদলে হয় সিংহ। বীরেশ্বরবাবু বলেন, “সেই সময় মানুষকে বোঝাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।” শেষ পর্যন্ত ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সুনীল মণ্ডল প্রায় ১১ হাজার ভোটে জেতেন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি দল ছেড়ে যোগ দেন তৃণমূলে।

এ বার উপ-নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী করেছে শক্তিগড়ের কাছে সোহারি গ্রামের বাসিন্দা নন্দলাল পণ্ডিতকে। তিনি দলের জেলা কমিটির সদস্য। যুব লিগ ও অগ্রগামী কিষানসভার সঙ্গেও যুক্ত। দীর্ঘদিন বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। কিন্তু গলসির সঙ্গে সরাসরি যোগ নেই। তাই স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ তাঁকে প্রার্থী করায় খুশি নন বলে ফরওয়ার্ড ব্লক সূত্রে খবর। নন্দলালবাবু বুধবার পানাগড়ে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের ডাকা সম্মেলনে হাজির হন। তাঁকে উপস্থিত কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা যুব সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি আভাস রায়চৌধুরী। পরে তিনি গলসির সিপিএম জোনাল কমিটির অফিসে যান। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট প্রার্থী সিপিএমের সাইদুল হক এবং সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার করেন। সাইদুল হক যেখানে পানাগড়ে ইতিমধ্যে তিন বার প্রচার সেরে ফেলেছেন, নন্দলালবাবু এ দিনই প্রথম নামলেন। তবে তিনি বলেন, “দলের কাজে বহু বার এখানে এসেছি। কাজেই অসুবিধা হবে না। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভাল সাড়া দেখছি।”

কাঁকসার সিপিএম নেতাদের একাংশের দাবি, সুনীলবাবু দল ছাড়ার পরে কেন তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছিল, এলাকার বহু সমর্থকের এই প্রশ্নের মুখে পড়ছেন তাঁরা। দলের এক নেতা বলেন, “পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে নাজেহাল হতে হচ্ছে।” সিপিএম নেতা বীরেশ্বরবাবু অবশ্য বলছেন, “মানুষ মীরজাফরকে চেনেন। মদনলালকেও। তাই অসুবিধা হবে না।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা কমিটির সদস্য পিনাকীরঞ্জন সেনের বক্তব্য, “আগে যিনি বিধায়ক হয়েছিলেন, তিনি কোনও দিন আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাই তাঁর কোনও দায়বদ্ধতা তৈরি হয়নি। নন্দলালবাবু তিন দশকেরও বেশি দলের সঙ্গে যুক্ত। তাঁকে নিয়ে কোথাও কোনও ক্ষোভ নেই। যেটুকু হচ্ছে তা আগের বিধায়ককে যাঁরা দলের টিকিট দিয়েছিলেন, তাঁরা তৈরি করছেন।”

এই বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী স্কুলশিক্ষক কাঁকসার গাঙ্গুলিবাগানের বাসিন্দা গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে। গৌরবাবু সে ভাবে সামনে থেকে রাজনীতিতে ছিলেন না এর আগে। তিনি তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা কমিটির কার্যকরী সদস্য। তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, তাঁকে প্রার্থী করায় দলের একাংশ খুশি নয়। প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরে দলের একাধিক সভা হয়েছে এলাকায়। অথচ, সব ক্ষেত্রে প্রার্থী ডাক পাননি, এমন অভিযোগও উঠেছে। বহু জায়গায় দেওয়াল দখলের পরেও তা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কাঁকসার এক স্থানীয় নেতার ক্ষোভ, “খেটেখুটে দল করি আমরা। অথচ প্রার্থী করার সময়ে সে সব গুরুত্ব পাচ্ছে না।” গৌরবাবু অবশ্য বলেন, “দলের সবাই আমার পাশে আছেন।” দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সম্পাদক তথা কাঁকসার নেতা দেবদাস বক্সীর বক্তব্য, “দল একটাই। দলনেত্রীও এক জনই। তাই কে প্রার্থী, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। প্রার্থীকে জেতানোই একমাত্র লক্ষ্য।”

subrata shit durgapur gour mondal nandalal pundit galsi bidhansabha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy