বুর্ধেন্দু রায়। ফাইল চিত্র।
বেশ কিছুদিন ধরেই দলীয় কাউন্সিলর ও তৃণমূলের পুরপ্রধানের মধ্যে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের পালা চলছিল। এ বার গুসকরার ওই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে সরাসরি পুরসভার তহবিল তছরুপের অভিযোগ দায়ের করলেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল।
মঙ্গলবার আউশগ্রাম থানায় ওই অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর দাবি, গাড়ি কেনার পরে দামের হেরফেরে বিক্রয়কারী সংস্থার থেকে ফেরত পাওয়া ৫১ লক্ষ ৫০০ টাকা পুরসভার তহবিলে জমা দেননি পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়, পুরোটাই আত্মসাত্ করেছেন তিনি। পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআরে মৃত্যুঞ্জয়বাবু অবিলম্বে পুরসভার ক্যাশ খাতা আটক করারও আবেদন করেছেন। যাতে পুরপ্রধান ওই টাকা আর জমা দিতে না পারেন। তবে আউশগ্রাম থানার তরফে জানানো হয়েছে, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। কারণ, নিয়ম অনুসারে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের কোনও অভিযোগ থাকলে তা মহকুমাশাসক বা বিডিওর কাছে দায়ের করা উচিত। একমাত্র মহকুমাশাসক বা বিডিওর নির্দেশ পেলেই পুলিশ সেই অভিযোগের তদন্ত করতে পারে।
সম্প্রতি এই মৃত্যুঞ্জয়বাবুর বিরুদ্ধেই সরকারি প্রকল্পের টাকায় তৈরি বাড়ি নিজের ঠাকুমার নামে করে দেওয়ার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে মহকুমাশাসকও (উত্তর) পুরসভার কাছে রিপোর্ট তলব করেন। পুরসভার রিপোর্টে ওই স্বজনপোষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে স্বীকার করে নেন বুর্ধেন্দুবাবু। এরপরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ গুসকরা পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলরদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কার্যত চরমে ওঠে। সোমবারই মৃত্যুঞ্জয়বাবু-সহ তিন কাউন্সিলর পুরসভার বিভিন্ন কমিটি থেকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করে জেলাশাসক, মহকুমাশাসকের কাছে চিঠি পাঠান। এ দিনের এফআইআরের পরে পুরসভার হাল নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে শহরে।
পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে মৃত্যুঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, ১১ জুন একটি পুরসভার তরফে একটি গাড়ি কিনেছিলেন পুরপ্রধান। কিন্তু গাড়িটি কেনার সময় পুরসভার তরফে যে অর্থ বর্ধমান শহরের সালুজা অটোমোবাইলস্ প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে জমা দেওয়া হয়, তা গাড়িটির সে দিনের দামের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল। পরে পুরপ্রধানের চিঠি পেয়ে গাড়ি বিক্রয় সংস্থা ওই টাকা ফেরত দেয়। ফেরত পাওয়া মোট ৫১ হাজার ৫০০ টাকা চেয়ারম্যান পুরসভাকে ফিরিয়ে না দিয়ে পুরোটাই আত্মসাত্ করেছেন বলে তাঁর দাবি। প্রমাণ হিসেবে মৃত্যুঞ্জয়বাবু বিক্রয় সংস্থার একটি রসিদও তাঁর অভিযোগের সঙ্গে দিয়েছেন। ৬১৪ নম্বরের ‘অল আইটেম ভাউচারে’ দেখা যাচ্ছে, চেয়ারম্যানের দেওয়া চিঠির ভিত্তিতে অথরাইজ করে দেওয়া জনৈক অমলেন্দু সরকারের হাতে সংস্থাটি ৫১,৫০০ টাকা তুলে দেয় ১১ জুনই।
সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর মহেন্দ্র সিংহ সালুজা মঙ্গলবার বলেন, “গাড়ির দাম ওঠানামা করে। যে দিন ওই গাড়ি বাবদ অর্থ জমা দেয় গুসকরা পুরসভা, তার পরিমাণ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা বেশি ছিল। তাই চেয়ারম্যানের অথরাইজ করে দেওয়া চিঠি হাতে পেয়ে আমরা ওই টাকা নগদে ওই ব্যক্তির হাতেই তুলে দিই।” ওই দিন পুরপ্রধান নিজে ওই সংস্থার শো-রুমে হাজির ছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। যদিও তিনি এ দিন দাবি করেন, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।
গুসকরার পুরপ্রধান বুর্ধেন্দুবাবু মঙ্গলবার বলেন, “আমি ও আর এক কাউন্সিলর ১১ জুন বর্ধমানের ওই সংস্থার শো-রুম থেকে গাড়িটি আনতে গিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে ১০ লক্ষ টাকারও কিছু বেশি অর্থ দুটি চেকে আমি ওই সংস্থাকে দিই। কিন্তু তারপরে ওই টাকা যে ফেরত দেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি অমলেন্দু সরকার নামের কাউকে ৫১,৫০০ টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে অথরাইজ করে পাঠাইনি। ওই নামে আমি কাউকে চিনিও না।”
পুরসভা সূত্রের খবর, চেয়ারম্যানের অথরাইজ করা চিঠিটি পরীক্ষা করতে পুরসভার পদস্থ কর্মী ও বিশিষ্ট কাউন্সিলরদের একটি দলকে বর্ধমানের ওই গাড়ি বিক্রিয়কারী সংস্থায় পাঠানো হচ্ছে। ঘটনাটি যাতে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়, সেই মর্মে এ বার জেলাশাসক ও মহকুমাশাসকের কাছে তিনি আবেদন জানাবেন বলেও বুর্ধেন্দুবাবুর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy