পুজোর চারদিন ভিড় সামলাতে নানা পন্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভিড়কেই সামাজিক সচেতনতা প্রচারের হাতিয়ার করল জেলা পুলিশ। হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে, মাইক নিয়ে পথ শিশুদের জন্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয়হারাদের জন্য কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীনদের সাহায্যের জন্য যোগাযোগের আবেদন জানাচ্ছে তারা।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার নাম করে ওই হ্যন্ডবিলে বলা হয়েছে, ‘আপনার এলাকায় এমন অনেক শিশু রয়েছে যারা অনাথ বা পরিত্যক্ত, অবহেলিত, আশ্রয়হীন, মানসিক অসুস্থ বা মাদকাসক্ত। তাদের পাচার করে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। অবিলম্বে দিবারাত্রি চালু নিঃশুল্ক ১০৯৮ নম্বর ডায়াল করে চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ এছাড়া এলাকায় বাল্য বিবাহের খবর পেলে চাইল্ড লাইনে জানানো, পুজোর ভিড়ে বেড়িয়ে মহিলারা সমস্যায় পড়লে তাদের ৯৭৭৫২৭৪৩৮৮ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার কথাও বলা হয়েছে।
হ্যান্ডবিল ছড়ানো, মাইকে প্রচারের পাশাপাশি পুজোয় ভিড় নিয়ন্ত্রনে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। পুজোর ভিড় যাতে নিয়ন্ত্রণ না হারায় তার জন্য শহরের বুকে এ বছর একটি সার্কাসকেও তাঁবু ফেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে। এছাড়া পুজোর দিনগুলিতে অর্থাৎ ১-৬ অক্টোবর বিকেল পাঁচটা থেকে রাত দুটো পর্যন্ত কালনা ও কাটোয়া রোড ধরে আসা সমস্ত যানবাহনকে এমবিসি ইন্সটিটিউট ও ভোতার পাড়ে রাখতে হবে। আরামবাগ রোড ধরে আসা সমস্ত যানবাহনকে থামতে হবে তেলিপুকুর মোড়ে। জিটি রোডের পশ্চিম ও পূর্ব থেকে আসা সমস্ত যানবাহন রাখতে হবে যথাক্রমে কানাইনাটশাল মোড় ও গোলাপবাগ মোড়ে। এছাড়া শহরের মধ্যে সেই গাড়িগুলিকেই ঢুকতে দেওয়া হবে যাদের কাছে পুলিশের পার্কিং পাস থাকবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বুকে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে শক্তিগড় থেকে ফাগুপুর পর্যন্ত এলাকাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ। পুলিশ তাই আজ, ষষ্ঠীর দিন বিকেল তিনটে থেকে ভোর তিনটে পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ওই অংশে যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। ১-৬ অক্টোবরও বিভিন্ন সময়ে ওই অংশে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবারের মতো বর্ধমান শহরের কোথায় কোথায় পুজো মণ্ডপ রয়েছে, কোথায় পুলিশের অবস্থান, বিভিন্ন রাস্তা কোথা থেকে কোথায় গিয়েছে তা উল্লেখ করে একটি মানচিত্রও প্রকাশিত হয়েছে জেলা পুলিশের উদ্যোগে।
এমনিতেই এটিএমে নানা ধরণের প্রতারণার শিকার হন সাধারণ মানুষ। পুজোর ভিড়ে সেই সম্ভাবনা আরও বেশি। আগেও পুজোতে এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে জালিয়াতদের পাল্লায় পড়েছেন মানুষ। এ বার তাই এটিএম ব্যবহারে বেশ কছু সতর্ক বার্তা দিয়েছে পুলিশ। যেমন, এটিএমের ভেতর নিজের পিছনে কাউকে থাকতে না দেওয়া, কাউকে ডেবিট কার্ডটি হাতে না দেওয়া, সর্বদা রক্ষী রয়েছে এমন এটিএম থেকে টাকা তোলার কথা বলা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “শারদোৎসবের পরেই পরপর আসছে কুরবানি, লক্ষ্মীপুজো, ধনতেরাস, কালীপুজো, ভাতৃ দ্বিতীয়া। নভেম্বরের শুরুতেও আছে মহরম, গুরু নানকের জন্মদিন। ফলে উৎসব চলবে একটানা। এই দিনগুলি যাতে মানুষের কাছে আনন্দমুখর হয়ে ওঠে তার জন্য সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। কারও আনন্দ যাতে অন্যদের নিরানন্দের কারণ না হয়ে ওঠে, তার জন্য সকলকেই সমান মনোযাগী হতে হবে। তাই আমরা ইতিমধ্যে শহর জুড়ে একদিকে যেমন যানবাহনে তল্লাশি শুরু করেছি, তেমনি আইনভাঙা মোটরবাইকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy