Advertisement
E-Paper

ফুটপাথ মুক্ত করতে এগোয়নি কেউ

ভোট আসে, পারও হয়ে যায়, শহর পড়ে থাকে তিমিরেই। বছর ছয়েক আগে ঘিঞ্জি এ শহরে দূষণ, দুর্ঘটনা বাড়তে থাকায় বাসস্ট্যান্ডটি শহরের ভেতর থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে একদিকে মাথায় হাত পড়ে ছোট ব্যবসায়ীদের। আবার শহরের ভিতরে যাতায়াতেও মুশকিলে পড়েন মানুষজন। সমস্যা মেটাতে নামে অটো, তারও পরে আসে টোটো। এতে যাতায়াতের সমস্যার সুরাহা হলেও বাড়ে যানজট। তার উপর ফুটপাথ দখলে জট আরও জটিল হয়।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০১:০৯
রাস্তায় খড়ের গাদা নিয়ে গাড়ি থেকে টোটোর ভিড়। তার মাঝে চলছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডাও। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

রাস্তায় খড়ের গাদা নিয়ে গাড়ি থেকে টোটোর ভিড়। তার মাঝে চলছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডাও। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

ভোট আসে, পারও হয়ে যায়, শহর পড়ে থাকে তিমিরেই।

বছর ছয়েক আগে ঘিঞ্জি এ শহরে দূষণ, দুর্ঘটনা বাড়তে থাকায় বাসস্ট্যান্ডটি শহরের ভেতর থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে একদিকে মাথায় হাত পড়ে ছোট ব্যবসায়ীদের। আবার শহরের ভিতরে যাতায়াতেও মুশকিলে পড়েন মানুষজন। সমস্যা মেটাতে নামে অটো, তারও পরে আসে টোটো। এতে যাতায়াতের সমস্যার সুরাহা হলেও বাড়ে যানজট। তার উপর ফুটপাথ দখলে জট আরও জটিল হয়।

গত পুরভোটের আগে যাত্রীদের সুবিধায় কয়েকটি বাস শহরের মধ্যে দিয়ে চালানোর কথা বলেছিল তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। পাঁচ বছরে তা তো হয়নি, উল্টে সরু রাস্তায় অটো-টোটো-রিকশায় পথ চলাই দায় হয়ে পড়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁদের আশঙ্কা, আগের বারের প্রতিশ্রুতি তো পূরণ হয়নি, এ বারও যানজট মেটানোর আশ্বাসেই ভোট বৈতরণী পার করে দেবে রাজনৈতিক দলগুলি।

আর পাঁচটা পুরনো শহরের মতো কালনা শহরের রাস্তাঘাট এমনিতেই সরু। গত এক দশকে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করার প্রবণতাও বেড়েছে বহুগুণ। তার উপর শয়ে শয়ে টোটো, রিকশায় এ শহরে রাস্তায় হাঁফ ফেলারও জায়গা নেই। বাসিন্দাদের দাবি, ভোট হারানোর ভয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকেও ফুটপাথ দখলমুক্ত করার ডাক দিয়ে রাস্তায় বিশেষ নামতে দেখা যায় না। ফলে শহরের তেঁতুলতলা, চকবাজার, কলেজ মোড়, সাহু সরকার মোড়, পুরসভা লাগোয়া রাস্তা-সহ বহু জায়গাতেই হাঁটার পথ কার্যত হারিয়ে গিয়েছে। অনেক দোকানদার ফুটপাত দখল করে পাকা নির্মাণও বানিয়ে ফেলেছেন। এমনকী অনেকে মালপত্র বিছিয়ে পিচ রাস্তাতেও চলে আসেন বলে। ফলে যানজটে হাঁসফাঁস করা ছাড়া আরও কোনও উপায় থাকে না শহরবাসীর। তার উপর এখন চৈত্র সেলের মরসুম। বহু ব্যবসায়ী ছাড়ে বিক্রির জিনিসপত্র ছড়িয়ে রাখেন রাস্তায়। তা ঘিরে জমা ভিড় টপকে যাতায়াত আরও মারাত্মক হয়ে যায়।

কালনার এক বাসিন্দা চিত্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, রাশি রাশি টোটো শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দশ টাকায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। অটোও বেড়েছে। যাতায়াতের সুবিধা হওয়ায় গ্রামগঞ্জ থেকে আসা লোকের সংখ্যাও বেড়েছে। ব্যপক ভাবে বেড়েছে যানজটও। আর এক বাসিন্দা সেবিকা গোলদার বলেন, “একে তো ফুটপাথ দিয়ে হাটার কোনও জায়গা নেই, তার উপরে দিবারাত্র এঁকেবেঁকে ছুটে ছোট গাড়ি। সামান্য অন্যমনস্ক হওয়া মানেই দুর্ঘটনা ডেকে আনা। অথচ ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলির কোনও সদিচ্ছা নেই।” একই কথা শহরের বাসিন্দা মানসী মণ্ডলেরও। তিনি বলেন, “বছর সাতেক আগে এক বার শহরকে দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনিক কর্তারা রাস্তায় নেমে আবেদন জানিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ ছাড়া আরেক বার মহকুমাশাসকের দফতরে সর্বদলীয় বৈঠকে ঠিক হয় যানজট এড়াতে সকাল আটটার পর শহরে আর কোনও ভারি যানবাহন ঢুকবে না। তবে খাতায় কলমে সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবে তার ফল পাওয়া যায় নি।” যানজট নিয়ে বীতশ্রদ্ধ কলেজ ছাত্রী রেশমি খাতুনও। তাঁর কথায়, “ভোট এলেই রাজনৈতিক দলগুলি শহরকে যানজটমুক্ত করার ইস্যু সামনে আনে। আবার ভোট মিটলেই সব চুপচাপ। বাইরের অতিথিদের কাছে মাথা হেঁট করে দেয় এই যানজট।”

জানা যায়, বাসস্ট্যান্ড সরানোর সিদ্ধান্তের পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশ কিছু বাস ফেরানোর দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, বাস না থাকলে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের লোকেদের শহরে আসা কমে যাবে। এতদিন গঙ্গা স্নান থেকে, ধান ওঠার পরে বাজার-হাট করতে শহরে বহু মানুষ। কিন্তু বাস না থাকায় শহরের বিভিন্ন অংশে যাতায়াতের অসুবিধার জেরে আসা সত্যিই কমেও যায় তাঁদের। ফলে ক্ষতি হয় ব্যবসাতেও। এই পরিস্থিতিতে গত পুরভোটে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট প্রতিশ্রুতি দেয় বেশ কিছু বাস শহরের ভেতর ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও শহরে যাত্রীবাহী বাসের দেখা মেলেনি। শহরের এক ব্যবসায়ী প্রেমচাঁদ সরকার বলেন, “বছর আটেক আগেও পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সকাল থেকে থিকথিকে ভিড় দেখা যেত। দলে দলে যাত্রী যাতায়াতের ফলে ব্যবসা মন্দ চলত না। কিন্তু বাসস্ট্যান্ড উঠে যাওয়াই ব্যবসার যেন পাঁজর ভেঙে গিয়েছে।” তাঁর দাবি, পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি ‘আরবান হাট’ তৈরি হচ্ছে। অথচ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে কিছু বাস ফেরানোর কথা থাকলেও তা পূরণ হয়নি।

শহরবাসীদের আরও অভিযোগ, প্রচারের ময়দান গত বার সরগরম ছিল প্রাচীন এ শহরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার আশ্বাসে। কিন্তু কিছু কাজ হলেও পর্যটক টানতে পারছে না শহর। কালনার নির্দিষ্ট কিছু রাস্তায় ত্রিফলা বাতি বসেছে, ১০৮ শিবমন্দির ও রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে আলো-ছায়া প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। কিন্তু বাকি পর্যটনকেন্দ্রের দিকে সেভাবে নজর পড়েনি বলেই দাবি বাসিন্দাদের। পর্যটক টানতে নানা পরিকল্পনা হলেও বাস্তবায়িত হয়নি তাও।

শহরের বাসিন্দা, সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আগের বার নির্বাচনের আগে দেওয়া কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন হয়নি। সেতু, পর্যটন কেন্দ্র, গরিব মানুষদের বাড়ি কিছুই হয়নি। প্রতিশ্রুতি যে স্রেফ ভাঁওতা ছিল এ বার আমরা দেওয়াল লিখনে তা জানাব।” একই রকম কথা শোনা গিয়েছে বিজেপি নেতাদের মুখেও। শহরের বিজেপি নেতা সুশান্ত পাণ্ডের কথায়, “গত বার ওরা অজস্র প্রতিশ্রুতির ললিপপ দেখিয়ে ভোট নিয়েছিল। অথচ কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ বার মানুষ ওদের আর বিশ্বাস করতে চাইবেন না।”

পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর অবশ্য দাবি, শহরকে যানজট মুক্ত করতে গেলে ফুটপাথ থেকে কিছু হকারদের তোলা দরকার। পুরসভার পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি আরবান হাট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে বৃত্তাকারে কিছু দোকান ঘর তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। হকারেরা ব্যবসার জন্য সেখানে ঘর পাবেন। হাট চালু হয়ে গেলে ব্যবসার সুযোগও বাড়বে।” পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় পুরসভা রাস্তার পাশে পাকা নালা ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এতে পায়ে চলার পথ অনেকটাই চওড়া হবে বলে তাঁর দাবি।

(চলবে)

footpath occupied kalna kedarnath bhattacharya amar sohor amar shohor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy