তখনও ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। বর্ধমান আদালতের কাছে দাঁড়িয়ে সিপিএমের এক জেলা নেতা বলছিলেন, বর্ধমান পূর্ব লোকসভায় বিজেপি ভোট কাটলে সিপিএমের বেশ ক্ষতি হবে। একই রকম ভাবে আশঙ্কা করছিলেন একদা বিজেপি-র নেতা, বর্তমানে পূর্বস্থলীর তৃণমূলের প্রভাবশালী এক নেতা। তাঁর দাবি, পূর্বস্থলীতে বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। সেই ভোটের একটা বড় অংশ তৃণমূলের ঘরে এসেছে। মোদী হাওয়ায় সেই ভোট ফিরে গেলে তাঁদেরও মুশকিল, আশঙ্কা তাঁর। অর্থাৎ, রাজ্য রাজনীতিতে যুযুধান দুই দলই বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে বিজেপি-কে নিয়ে চিন্তিত।
সিপিএম এবং তৃণমূলের ভোট কাটার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায়। লোকসভা ভোটের প্রচারে নেমে সিপিএমকে ‘খুব একটা’ দেখতে পাচ্ছেন না বলেই তাঁর দাবি। এ ছাড়া নির্বাচনের সময়ে দেওয়াল লেখা থেকে শুরু করে গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচারে সিপিএম কর্মীদের যে উৎসাহ থাকে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে তাতেও ভাটা পড়েছে বলে তাঁর দাবি। আর সে কারণেই সন্তোষবাবুর আশা, তৃণমূলকে ‘বেগ’ দেওয়ার জন্য সিপিএমের সমর্থকরা এ বার লোকসভা নির্বাচনে তাঁদেরই ভোট দেবেন। একই বক্তব্য বিজেপি-র জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিকেরও। তাঁর দাবি, “বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম কোথায়? সিপিএমের একটা গোষ্ঠী এ বার নিশ্চিত ভাবে আমাদের ভোট দেবেন।”
সন্তোষবাবুর বাড়ি মেমারির পাল্লা ক্যাম্পে। এ বার মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে সোজা লোকসভা ভোটের ময়দানে সন্তোষবাবু। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল তো পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণনাই করতে দেয়নি। গণনাকেন্দ্রে ঢোকার আগেই মেরেধরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।” এ বারেও তাঁর আশঙ্কা, “তৃণমূল ঠিক ভাবে ভোট করতে দেবে কী? যে ভাবে চারিদিকে হুমকি দিচ্ছে, তাতে ফের পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে না তো?” বিজেপির দাবি, তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও বেশ ক্ষোভ রয়েছে। বিভিন্ন প্রচারে গিয়ে সে কথা স্পষ্ট বুঝতে পারছেন তাঁরা। তাই তাঁদের আশা, তৃণমূলের একটা অংশের ভোট আমাদের ঝুলিতেই আসবে।
বিজেপির জেলা সভাপতির দাবি, “বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে আমাদের ভোট ১১ শতাংশের কাছাকাছি। আমাদের আশা, সিপিএম ও তৃণমূলের ভোট এলে এই লোকসভায় ফলাফল কী হবে বোঝা দায়। সে জন্য বলছি, আমাদেরকে যদি কেউ লড়াইয়ের বাইরে রাখে তাহলে ভুল করবে।” সিপিএম, তৃণমূলদুই দলের নেতারাই কর্মিসভায় বিজেপির দিকে ভোট যাতে না পড়ে তার দিকে ‘নজর’ রাখতে বলছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। যদিও প্রকাশ্যে বিজেপি-র দাবিকে পাত্তা দিতে রাজি নয় তারা। তৃণমূলের পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অস্বীকার করার উপায় নেই, পূর্বস্থলীতে বিজেপি এক সময় শক্তিশালী ছিল। তবে এখন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।” সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকও বলেন, “ওরা ওদের কথা বলছে। তবে আমাদের ভোট কোথাও পড়বে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy