রাজ্য সরকার ব্যবসায়ীদের পাশে রয়েছে, শিলিগুড়িতে মাড়োয়াড়ি সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে এই বার্তা দিয়েছিলেন রাজ্যের শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। একই বার্তা দিতে বৃহস্পতিবার তিনি সভা করলেন রানিগঞ্জের দু’টি বণিক সংগঠনের সঙ্গে। তাঁকে সামনে পেয়ে নানা দাবি-দাওয়ার কথা উজাড় করলেন ব্যবসায়ীরাও। ভোটের আচরণবিধি থাকায় কোনও আশ্বাসের পথে যাননি মন্ত্রী। তবে তৃণমূল সরকারের আমলে এ রাজ্যে শিল্পে উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরলেন তিনি।
এ দিন রানিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ও সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের যৌথ উদ্যোগে ‘এ রাজ্যে শিল্পে উন্নয়ন-বৃদ্ধির বর্তমান ও ভবিষ্যত্’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় যোগ দেন শিল্প ও অর্থমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ভূমি ও বস্ত্র দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়, রানিগঞ্জের বিধায়ক সোহরাব আলি, আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুলটির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়।
সভায় ব্যবসায়ীরা অগ্রিম ভ্যাট দেওয়ার পরে আর্থিকবর্ষের শেষে উদ্বৃত্ত হওয়া টাকা আয়করের মতো পরবর্তী আথিকবর্ষে যুক্ত করার দাবি জানান। এ ছাড়া ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমানায় ডুবুরডি চেকপোস্টে পার্কিং জোনের ব্যবস্থার দাবি ওঠে। বণিক সংগঠনের পক্ষে রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান প্রস্তাব দেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনপদ বাঁচিয়ে কয়লা শিল্প গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হোক। এ ছাড়াও তাঁরা রানিগঞ্জে দু’টি বাইপাস, একটি বাইপাসে রেল টানেলের কাছে উড়ালপুল, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ গড়ে তোলা, রানিগঞ্জে ইন্ডোর স্টেডিয়াম, আইটিআই, পানাগড়ে বাইপাস তৈরির দাবি জানান। স্থানীয় এ সব দাবি শুনে কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “পানাগড় রাস্তা সম্প্রসারণ ও রানিগঞ্জে বাইপাস সমস্যা মেটাতে ভোটের পরেই কাজ শুরু হবে।” ইন্ডোর এবং আইটিআই নির্মাণের জন্য বণিক সংগঠনকে জমি খুঁজে দেওয়ার আবেদন জানান মলয়বাবু।
অর্থমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রশংসা করে বলেন, “ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরে বৃদ্ধির হার ১০৫ শতাংশ বেড়েছে।” তাঁদের আমলে সাফল্য তুলে ধরতে গিয়ে প্রথমেই অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, বাম আমলের শেষ অর্থবর্ষে কর আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা, যা এখন ৪০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২০০৭-১০ পর্যন্ত তিন বছরে যেখানে ৭৮ হাজারের বেশি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে, সেখানে এই শেষ তিন বছরে তা ৫০২০-তে নেমে এসেছে জানিয়ে এ সবের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতিত্ব দেন তিনি। ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জনে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ-হরতালে অফিসে না এলে বেতন কেটে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্য। এতে রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির গতি দ্রুত বাড়বে।”
আসানসোল মহকুমার একটি বড় অংশের বাসিন্দা হিন্দিভাষী। এ দিনের সভায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের অনেকটা অংশই ছিল হিন্দিতে। বাকিটা ইংরেজি ও বাংলা মিশিয়ে বলেন তিনি। বাস্তবে গুজরাত নয়, বাংলাই উন্নয়নে এগিয়ে বলেও দাবি করেন তিনি। দেশের তুলনায় রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান দিতে গিয়ে তিনি জানান, কৃষিতে যেখানে সারা দেশের বৃদ্ধির গড় ৪.৬ শতাংশ, সেখানে এ রাজ্যের ৬.২৮ শতাংশ। শিল্পে দেশের ৩.৭%-এর জায়গায় ৯.৫%, বিদ্যুতে ৫.৪৩%-এর তুলনায় ২১.৮%। তিনি আরও দাবি করেন, উত্পাদিত শিল্পদ্রব্যের সূচকে ভারতের খামতি যেখানে ১.২%, সেখানে রাজ্যের বৃদ্ধি ৬.৬%। তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্র অর্থাভাবের অজুহাত দেখিয়ে প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। আগের সরকারের ঋণ না মেটাতে হলে রাজ্যের বিকাশের চিত্র আরও উন্নত হত বলেও দাবি করেন তিনি।
বাম আমলের নানা বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর এ দিনের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার।