Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিস্ফোরণের পরে ফের নজর বারুদঘরে

খনির বারুদঘরে নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে নানা সময়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে গোয়েন্দারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকা থেকে বিস্ফোরক পাওয়া সহজ হবে বলেই হয়তো বর্ধমানে ডেরা তৈরি করেছিল জঙ্গিরা। তার পরেই বারুদঘরের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা সতর্ক হচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

খনির বারুদঘরে নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে নানা সময়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে গোয়েন্দারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকা থেকে বিস্ফোরক পাওয়া সহজ হবে বলেই হয়তো বর্ধমানে ডেরা তৈরি করেছিল জঙ্গিরা। তার পরেই বারুদঘরের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা সতর্ক হচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সেই নিরাপত্তা কতটা আঁটোসাটো করা হয়েছে, সে নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল রবিবার রাতে পাণ্ডবেশ্বরে তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে বিস্ফোরণের পরে। কারণ, পুলিশের সন্দেহ, সেখানে যে বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তা খনিতে ব্যবহৃত হয়।

তৃণমূলের আলিনগর বুথ কমিটির সভাপতি ভীমসেন ঘোষের বাড়ির সামনে রাখা মোটরবাইকে রবিবার রাত ২টো ১০ নাগাদ বিস্ফোরণ হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে ভীমসেনবাবু জানিয়েছেন, গতকাল গভীর রাতে বিকট শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। উৎসবের মরসুমে কোথাও পটকা ফাটানো হচ্ছে ভেবে তিনি বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাননি। সোমবার ভোরে নিচে এসে তিনি দেখেন তাঁর মোটরবাইকের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ব্যাটারী, জিলেটিন স্টিক, তার এবং বেশ কিছুটা দড়ি। তাঁর মোটরবাইকও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরপরেই তিনি পুলিশে খবর দেন। সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই মোটরবাইক ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিস্ফোরণের নমুনা সংগ্রহ করে।

বিস্ফোরকের নমুনাগুলি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরে পুলিশের অনুমান, কয়লা খাদানে কয়লার স্তর ভাঙার জন্য যে ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয় এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, খাদানে ডিটোনেটর ব্যবহার করে যে কৌশলে ফাটানো হয় এখানেও সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়েছে। খনিকর্মীরা এই কৌশল জানেন। তাই খনিকর্মীদের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিনই তিনি কেন্দ্রায় ইসিএলের কেন্দ্রীয় বারুদঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে যান। তার পরে তিনি বলেন, “এই ঘরের চারপাশ উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা ও সর্বক্ষণের জন্য সিআইএসএফ প্রহরার ব্যবস্থা করতে বলব ইসিএলকে।”

বারুদঘরের নিরাপত্তা নিয়ে এর আগেও সরব হয়েছে সব ক’টি শ্রমিক সংগঠন। আলিনগর গ্রামের এই ঘটনায় বারুদঘরের বিস্ফোরক ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভবনা থাকায় ফের বারুদঘরের নিরাপত্তা বাড়ানোর সওয়াল করেছে তারা। সিটু নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, “বারুদঘরগুলিকে আরও সুরক্ষিত করা করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। আলিনগরের ঘটনার পর মনে হচ্ছে শুধু ইসিএল নয়, বারুদঘর সংলগ্ন রাস্তাতেও পুলিশের নজরদারি বাড়াতে হবে।” আইটিইউসি অনুমোদিত কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহের দাবি, “এমনও বারুদঘর রয়েছে যেখানে ইসিএলের সাধারণ কর্মীদের দিয়েই বিস্ফোরক বের করানোর কাজ হয়। ইসিএলের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।” আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কেকেএসসি-র সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিংহ বলেন, “আমাদের নেতার বাড়িতে যে বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলি ইসিএলের বারুদঘর থেকেই চুরি হয়ে থাকলে আশ্চর্য হব না।”

যদিও বারুদঘর থেকে বিস্ফোরক চুরির বিষয়টি মানতে চাননি ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়। তিনি বলেন, “এক দশক হয়ে গেল আমি ইসিএলে রয়েছি। কিন্তু কোনও দিন বারুদঘর থেকে বিস্ফোরক চুরি হয়েছে এ রকম কথা শুনিনি।” তিনি জানান, ইসিএলের ৫৭টি বারুদঘর রয়েছে। শোনপুর বাজারি ও রাজমহল প্রকল্পে বারুদঘরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে সিআইএসএফ। বাকি ৫৫টি বারুদঘরে ইসিএলের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। তবে প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দিয়ে সংস্থার যে কোনও খনিকর্মীকে দিয়েই বারুদঘরের নিরাপত্তার কাজ করানো হয়। নীলাদ্রিবাবুর দাবি, যে বিস্ফোরক আলিনগরে ব্যবহার হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন, তা খনিতে ব্যবহারের নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE