Advertisement
E-Paper

রাতভর অপেক্ষাতেও অধরা বালি মাফিয়া

ফের পুলিশের জাল কেটে পালাল বালি মাফিয়া রাজীব মল্লিক। তবে ধরা পড়েছে তার দুই শাগরেদ। উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু অস্ত্রও। দীর্ঘদিন ধরেই বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদরের বুকে চালকল মালিকদের ত্রাস হয়ে উঠেছিল সে। বেশ কয়েকবার বর্ধমান চাল গদি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে চালকলে যাওয়ার পথে রাজীবের দলের হাতে চালকল মালিক বা কর্মচারীরা আক্রান্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ। এর আগে একাধিকবার রায়নার কামালপুর খালপাড়ে রাজীবের বাড়িতে হানা দিয়েও তার খোঁজ পায়নি পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৭
উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র।

ফের পুলিশের জাল কেটে পালাল বালি মাফিয়া রাজীব মল্লিক। তবে ধরা পড়েছে তার দুই শাগরেদ। উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু অস্ত্রও।

দীর্ঘদিন ধরেই বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদরের বুকে চালকল মালিকদের ত্রাস হয়ে উঠেছিল সে। বেশ কয়েকবার বর্ধমান চাল গদি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে চালকলে যাওয়ার পথে রাজীবের দলের হাতে চালকল মালিক বা কর্মচারীরা আক্রান্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ। এর আগে একাধিকবার রায়নার কামালপুর খালপাড়ে রাজীবের বাড়িতে হানা দিয়েও তার খোঁজ পায়নি পুলিশ। তবে বেশ কয়েকবছর আগে একবারই পুলিশের হাতে এসেছিল সে।

রবিবার জেলা পুলিশের একটি দল সারারাত জেগে উদয়কৃষ্ণপুরে রাজীবের ডেরার আশপাশে ঘাপটি মেরে ছিল। কিন্তু রাজীবকে ধরা যায়নি। তবে তার দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি নাইন এম এম পিস্তল, চারটি পাইপগান, আটটি বড় রামদা ও আট রাউন্ড গুলি। এছাড়া দুটি মোবাইল ফোন ও একটি স্কুটিও আটক করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “রাজীব-সহ তার দলের মোট আটজন কৃষ্ণদেবপুরে দামোদরের কাছে ঘাঁটি গেড়ে কয়েকদিন ধরে বসে রয়েছে, এই খবর পেয়ে আমরা একটি দল তৈরি করি। এতে রায়না ও খণ্ডঘোষ থানার ওসি ও বর্ধমান থানার সাদা পোষাকের পুলিশ ছিল। রবিবার রাতভর ঝোপে ঝাড়ে লুকিয়ে থাকলেও রাজীবের সঙ্গে কুকুর থাকায় পুলিশ ওই ঘাঁটিতে হানা দিতে পারেনি। সকালে রাজীব পুলিশের দলটিকে দেখতে পেয়েই সঙ্গীদের নিয়ে পালায়।”

এসপি আরও জানান, সোমবার দুপুরে সদর ঘাটের কাছে রাজীবের দুই সঙ্গী শেখ নাসের ও মিলন দাস ওরফে আবিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাসেরের বাড়ি খণ্ডঘোষের উদয়কৃষ্ণপুরের। মিলনের বাড়ি বর্ধমানের তেজগঞ্জের নারকেলবাগান পাড়ায়। ধৃতদের জেরা করে ইদিলপুরে হানা দিয়ে ওই অস্ত্রগুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতদের আদালতে তুলে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইবে পুলিশ। তারপরে রাজীব ও বাকি সঙ্গীদের খোঁজ চলবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান, খণ্ডঘোষ বা রায়নার অন্তত ৭০টি অবৈধ বালি খাদানের যারা চালায়, তাদের থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা নেয় রাজীব। তার বিনিময়ে ওই বালি চোরদের ‘নিরাপত্তা’ দেয় সে। বিরোধী পক্ষের বালি চোরেদের উপরে হামলা চালিয়ে তাদের ভয় দেখায় রাজীব, যাতে তারা তটস্থ হয়ে থাকে। পুলিশ জানায়, রাজীবের একটি মোটরবাইক বাহিনী রয়েছে। ৩০-৪০টি মোটরবাইকে করে ঝটিতি হামলা চালিয়ে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই এলাকা ছেড়ে পালায় এই বাহিনী। ওই খাদানে আর বালি তুলতে সাহস করে না শ্রমিকেরা, জানিয়েছে পুলিশ।

লোকসভা ভোটের মুখে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজীবের অস্ত্র ভাণ্ডারের সন্ধানের জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে জেলা পুলিশ। এসপি বলেন, “যে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তা দিয়ে অনেক অপরাধ খুনজখম হতো, তার কিছুটা অন্তত আটকানো যাবে।’’ জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার দাবি, “রাজীবের হাতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। প্রচুর বাইক ও নাইন এমএম পিস্তলও রয়েছে। ওই বাইকবাহিনী নিয়ে সে যেখানে সেখানে সশস্ত্র হামলা চালাতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।” ভোটের আগে রাজীবকে ধরাটা জরুরি বলেও পুলিশের দাবি।

মার্চ মাস ধরেই বর্ধমান জেলার গ্রামীণ এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার ও ধরপাকড় চলছে। এসপি সোমবার জানিয়েছেন, ২৩ মার্চ পর্যন্ত মোট ৮৩টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০৯ রাউন্ড গুলি, ১১০০ রও বেশি বোমা, আড়াই কিলো বোমা বানানোর মশলা উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ১০৭ জনকে। অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি চালাতে জেলার সবকটি থানাকে বিশেষ নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

damodar arms sand mafia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy