Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
কালনা ও কাটোয়া

রেশনে নিম্নমানের চাল, ক্ষোভ

বেশ কয়েকমাস ধরে রেশনে নিম্নমানের চাল মেলার অভিযোগ উঠছিলই, এ বার জুড়ে গেল নিয়মিত আটার প্যাকেট না পাওয়াও। জেলার রেশন ডিলারদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে উপভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। ভাঙচুর বা আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছেন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গ এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ধমান জেলার সম্পাদক পরেশ হাজরার অভিযোগ, কাটোয়া ও কালনা মহকুমার রেশন দোকানগুলিতে বিশেষত নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।

সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৫
Share: Save:

বেশ কয়েকমাস ধরে রেশনে নিম্নমানের চাল মেলার অভিযোগ উঠছিলই, এ বার জুড়ে গেল নিয়মিত আটার প্যাকেট না পাওয়াও। জেলার রেশন ডিলারদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে উপভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। ভাঙচুর বা আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছেন তাঁরা।

পশ্চিমবঙ্গ এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ধমান জেলার সম্পাদক পরেশ হাজরার অভিযোগ, কাটোয়া ও কালনা মহকুমার রেশন দোকানগুলিতে বিশেষত নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। আটার প্যাকেট সরবরাহও অনিয়মিত। যে কোনও দিন উপভোক্তাদের বিক্ষোভে দোকান ভাঙচুর জাতীয় ঘটতে পারে বলেও তাঁর আশঙ্কা। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে তৃণমূলের একটি অংশ। তাঁরা উপভোক্তাদের কাছে নিম্নমানের চাল না নেওয়ার আবেদন করেছেন। জেলা তৃণমূল নেতা দেবকুমার ধারার অভিযোগ, “রাজ্য সরকারকে হেয় করতে চক্রান্ত চলছে। তার বিরুদ্ধেই আমাদের প্রতিবাদ। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”

জেলা খাদ্য নিয়ামক দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করার জন্য কাটোয়ার এক গুদাম-পরিদর্শক ও পূর্বস্থলীর একজন চাল সরবরাহকারী সংস্থাকে ‘শো কজ’ করা হয়েছে। তবে জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধন পাঠকের দাবি, সর্বত্র নতুন ও ভাল চাল ডিলারদের সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে তারপরেও যদি সমস্যা হয়, তার সমাধানেরও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

কাটোয়া মহকুমায় বর্তমানে ২৯২ জন রেশন ডিলার রয়েছেন। আর কালনা মহকুমায় রয়েছেন ২৭৮ জন। দুই মহকুমা মিলে প্রায় ১০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক এপিএল (দারিদ্রসীমার উর্ধ্বে) উপভোক্তা রয়েছেন। বিপিএল উপভোক্তার সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ দশ হাজার। এ ছাড়া অন্ত্যোদয় যোজনায় রয়েছেন প্রায় দু’লক্ষ উপভোক্তা। ডিলারেরা জানান, অন্ত্যোদয় যোজনায় অন্তর্ভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক উপভোক্তাদের ২ টাকা মূল্যে ১ কেজি ২৫০ গ্রাম চাল পাওয়ার কথা। আর অন্য উপভোক্তারা মাথা পিছু ৯ টাকা কেজি দরে ২৫০ গ্রাম করে চাল রেশন দোকান থেকে পাবেন। কিন্তু বেশ কয়েকমাস ধরে নিম্নমানের চাল আসায় উপভোক্তাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে বলে রেশন ডিলারদের অভিযোগ। রেশন ডিলারদের সংগঠনের কাটোয়া শাখার সম্পাদক সর্দার আমজাদ আলির ক্ষোভ, “উপভোক্তারা আমাদের সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাঁরা ভাবছেন আমরা ভাল চাল পাল্টে খারাপ চাল দিচ্ছি। পরিস্থিতি যে কোনও সময় হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আমরা স্থানীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, বিডিওকে জানিয়ে রেখেছি।” কালনা মহকুমার রেশন ডিলারদের সম্পাদক সুশীল ঘোষেরও ক্ষোভ, “উপভোক্তারা আমাদের সমস্যার কথা শুনছেন না। তাঁদের বোঝাতে বোঝাতেই দিন চলে যাচ্ছে। যে কোনও সময় অশান্তি শুরু হতে পারে।” ডিলারদের আরও দাবি, চালের মান খারাপ হওয়ায় ভর্তুকির চাল খোলাবাজারে গো-খাদ্য হিসেবেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ডিলারেরা। ২০০৬ সালে রেশন-কেলেঙ্কারির সময়ে রাজ্যের যে সব জায়গায় গোলমাল হয়েছিল তার অন্যতম ছিল কাটোয়া। এই মহকুমার কেতুগ্রামের গোন্না সেরান্দি গ্রামে রেশনে দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন এক উপভোক্তা। মহকুমার বিভিন্ন গ্রামের রেশন ডিলারদের ঘরছাড়া হতে হয়েছিল, অথবা মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা দিয়ে গ্রামে থাকার অধিকার মিলেছিল। ডিলারদের দাবি, বর্তমানেও কাটোয়া ও কালনা মহকুমার বেশ কয়েকটি জায়গায় রেশন ডিলারেরা সমস্যায় পড়েছেন। নিম্নমানের চাল উপভোক্তাদের দেওয়ার অভিযোগে আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই তাঁরা এলাকার বিডিওদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন।

কিন্তু নিম্নমানের চাল সরবরাহ হচ্ছে কেন?

খাদ্য নিয়ামক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা বছরের চাল দু’মাসেই তুলে রাখতে বাধ্য হয় দফতর। ওই চাল থাকে কাটোয়ার আরএমসির (নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি) গুদামে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে গুদামজাত থাকায় নীচের বস্তার চালগুলি নষ্ট হতে শুরু করে। খাদ্য নিয়ামক দফতরের এক কর্তা বলেন, “গুদামে চাল সংরক্ষণ ঠিকমত হয় না। গুদাম দিয়ে জল পড়ে। তার উপর দফতরে পরিদর্শক ও চালের মান পরীক্ষকও অপ্রতুল। এক জনকেই ১০-১২টি করে গুদাম দেখতে হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE