বিকেল গড়াতেই কনকনে ঠান্ডা, সঙ্গে রাতভর হিমেল হাওয়া এই জোড়া ফলায় বীজতলাতেই শুকিয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের চারা। চাষিদের দাবি, সারা রাত কুয়াশার পরে সকালে রোদ উঠলেই দেখা যাচ্ছে ধান গাছের চারাগুলি লাল হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষি দফতরও জানিয়েছে, ধানগাছের এই রোগের নাম কোল্ড ইনজুরি। চাষিদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
আমন ধান ঘরে তোলার পরে এ মরসুমে অনেক চাষিই আলু চাষ করেন। আবার অনেকে বোরো ধান চাষের প্রস্তুতি নেন। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন মহকুমা মিলিয়ে জেলায় প্রায় দেড় লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। তার মধ্যে বর্ধমান সদরে ৬৩ হাজার, কালনা মহকুমায় ৩৬ হাজার, কাটোয়া মহকুমায় ২৭ হাজার এবং দুর্গাপুর মহকুমায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, মোট চাষজমির দশ ভাগের এক ভাগ জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। তারপরে বীজতলায় চারা ধান গাছের বয়েস ৪০ থেকে ৪৫ দিন হলে তা মূল জমিতে পোঁতার কাজ শুরু করেন চাষিরা। এ বছর এখনও বেশিরভাগ বীজতলায় নরম মাটি থেকে সবেমাত্র ধানের চারা উঁকি দিতে শুরু করেছে। চারাগাছের বয়স ১৫ থেকে ২০ দিন। চাষিদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সারা রাত হিমেল হাওয়া ও কুয়াশায় বহু বীজতলার সবুজ আভা উধাও হয়ে লালচে রং হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও জায়গায় চারাগাছ শুকিয়েও যাচ্ছে। মন্তেশ্বর ব্লকের এক চাষি বাবর আলি শেখ বলেন, “অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বীজতলায় ধান চারা কাহিল হয়ে পড়ছে। নিস্তেজ চারাগাছ জমিতে বাঁচবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।” তাঁর দাবি, “ঠাণ্ডার মাত্রা আরও বাড়লে বীজতলায় ধানচারা মরে যাওয়ার পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। ফলে পরবর্তীতে ধান চারার সঙ্কট দেখা দিতে পারে।” নাদনঘাটের চাষি সজেদ মোল্লার কথায়, “এ বার আমন ধান অত্যন্ত কম দামে চাষিদের বিক্রি করতে হচ্ছে। এর উপরে ঠাণ্ডার জেরে বোরো ধানের বীজতলা থেকে পরিমাণ মতো চারা না পেলে ভোগান্তির শেষ থাকবে না।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে তাপমাত্রা দশ ডিগ্রির নীচে নেমে যাওয়ায় অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বীজতলায় চারাগাছের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে শিকড়ের মাধ্যমে মাটির তলা থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে না চারাগাছ। এতে গাছের বৃদ্ধি থমকে যাচ্ছে। লালচে হয়ে জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে বহু ধানচারা। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্তারা। কয়েকটি নিদানও দিয়েছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সাবমার্সিবল পাম্পের কাছে বীজতলা তৈরি করতে হবে চাষিদের। যাতে বিকেল বেলায় মাটির তলা থেকে উঠে আসা গরম জল বীজতলায় ঢোকানো যায়। আবার সাতসকালে বীজতলা থেকে ঠাণ্ডা জল বাইরে বের করে দিতে হবে। এর সঙ্গে জিঙ্ক ইডিপিএ প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম এবং ট্রাইসাইক্লোজোল লিটার প্রতি জলে পয়েন্ট ৭৫ গ্রাম মিশিয়ে ঠান্ডায় আক্রান্ত গাছে প্রয়োগ করতে হবে। তবে ওষুধ প্রয়োগের ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বীজতলায় জল দেওয়া যাবে না। এছাড়া বীজতলায় কালো ছাই ছড়ালেও ভাল ফল মিলবে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। কারণ ছাই জমির তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আবার এর মধ্যে থাকা পটাশ এবং জৈব পদার্থও চারাগাছের পক্ষে উপকারী। কালনা মহকুমার অন্যতম সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোল্ড ইনজুরিতে বড় ক্ষতি হয়নি। তবে অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় সাধারণ মানুষ যেমন অসুস্থ হয়ে পড়েন, এটাও তেমনি। সতর্ক থাকলে বীজতলা বাঁচানো অসম্ভব নয়।”