রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুতের খরচ কমিয়ে শক্তি মন্ত্রকের পুরস্কার জিতেছে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন। রবিবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার নিতে সেখানে হাজির থাকবেন আসানসোলের ডিআরএম সঞ্জয় সিংহ গেহেলট। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে এই ডিভিশনে প্রায় ৯০ লক্ষ ইউনিট কম বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। সাশ্রয় হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।
এই সাফল্য কী ভাবে এল? ডিআরএম জানান, এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল দু’বছর আগে থেকে। সবচেয়ে আগে শ্রমিক-কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ খরচ কমালে কী লাভ তা কর্মীদের বোঝানো সম্ভব হওয়ায় কাজ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। ডিআরএম জানান, এই কাজ প্রথম শুরু করা হয় তাঁর দফতর থেকে। সেখানে একটি কেন্দ্রীয় স্যুইচ গিয়ার লাগানো হয়েছে। রাত ৮টা বাজলেই সেই স্যুইচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে, অযথা সেখানে বাতি জ্বলে না। প্রতিটি স্টেশনে বাতির সংখ্যা কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ খরচ কমানোর জন্য সর্বত্র এলইডি বাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া বেশি উজ্জ্বল বাতির ব্যবহার কমানো হয়েছে। পাশাপাশি, রেলের বিদ্যুৎ চুরিও অনেকটা আটকানো গিয়েছে।
ডিআরএম জানান, আসানসোল ডিভিশনে বিদ্যুৎ চুরি আটকাতে একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই ফোর্সের কর্মী-আধিকারিকেরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে-ঘুরে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করেছেন। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলের চাঁদমারি, কুলটির সীতারামপুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় রেলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে হুক করে রেলের বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ চুরি করত স্থানীয় কিছু লোকজন। টাস্ক ফোর্সের নজরদারিতে সে সব বন্ধ করা গিয়েছে। ডিভিশনের বিভিন্ন এলাকার রেল আবাসনে প্রায় তিন হাজার নতুন বিদ্যুতের মিটার বসানো হয়েছে। যেমন বিদ্যুৎ খরচ উঠবে, সেই হারে মাসুল দিতে হবে, এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে রেলের শ্রমিক-কর্মীদের মধ্যে অযথা বিদ্যুৎ খরচের প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন ডিভিশনের কর্তারা।
বিদ্যুৎ খরচ কমাতে এই ধরনের নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেই ক্ষান্ত হননি আসানসোল ডিভিশনের কর্তারা। ডিআরএম সঞ্জয় সিংহ গেহেলট জানান, আধিকারিকেরা আলোচনা করে ঠিক করেন, তাঁরা নিজেরা সৌর বিদ্যুৎ তৈরি করে নিজেদের প্রয়োজনের কিছুটা মেটাবেন। সেই চিন্তা করে ডিআরএম কার্যালয়ের ছাদে সৌর বিদ্যুতের চ্যানেল বসানো হয়েছে। হাসপাতাল, ক্যন্টিন, রানিং রুম, একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাদেও বসানো হয়েছে সৌর বিদ্যুতের চ্যানেল। এর জন্য প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। ডিআরএম বলেন, “শক্তি মন্ত্রকের এই পুরস্কার পূর্ব রেলে এই প্রথম কেউ পাচ্ছে। আমাদের ডিভিশনের শ্রমিক-কর্মীদের একান্ত প্রচেষ্টায় এই সাফল্য এসেছে।” তবে বিদ্যুৎ খরচ কম রাখার এই ধারা বজায় রাখার জন্য ডিভিশন একাধিক কর্মসূচি নিয়েছে বলে জানান তিনি। যেমন, সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়েছে। এই দলের সদস্যেরা রেলের একাধিক ভবন চিহ্নিত করেছেন, যেখানে সৌর বিদ্যুতের চ্যানেল বসানো হবে। এই কাজের জন্য বেসরকারি সংস্থাকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। পিপিপি মডেলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এক দিকে যেমন প্রচলিত বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো হবে, তেমনই অর্থ সাশ্রয় করা যাবে। ডিআরএম জানান, আগামী অর্থবর্ষে আসানসোল ডিভিশনের চারটি স্টেশন আসানসোল, যশিডি, মধুপুর ও দুর্গাপুরে বিদ্যুতের খরচ রেকর্ড পরিমাণ কমানোর লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy