কোনও সমীক্ষা না করে জেলা পরিবহন দফতর বাস মালিকদের মর্জি মাফিক রুট পারমিটের রদবদল করছে বলে অভিযোগ জানিয়ে শাসক দলের কর্মী সংগঠন পরিবহন মন্ত্রীর কাছে চিঠি দিল। সংগঠনের তরফে পরিবহন দফতরের কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে।
ওই চিঠিতে দুর্নীতির প্রমাণ হিসাবে বেশ কয়েকটি রুটের রদবদলের কথা জানানো হয়েছে। ২০১৩ সালের পর পরিবহন মন্ত্রীকে আবার লেখা ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, সিধু কানহু ময়দান থেকে জেকে নগর, জেমারি, বেলিয়াবাথান রুটে মিনবাস চালাবেন বলে এক বাস মালিককে দুটি পারমিটের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ওই বাস মালিক একদিনও ওই রুটে বাস না চালিয়ে নিমচা কোলিয়ারি থেকে রানিগঞ্জ ভায়া জেকেনগর বাস চালাচ্ছেন।
রুট বদলের জেরে শহরের সঙ্গে গ্রামের যোগোযোগ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে বলে ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে। যেমন, রানিগঞ্জ থেকে দুর্গাপুরের প্রত্যন্ত এলাকা জেমুয়া ভায়া বেনাচিতি রুটের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু দিন কয়েক বাস চলার পরেই ওই রুট থেকে জেমুয়া বাদ গিয়ে শুধু রানিগঞ্জ- বেনাচিতি বাস চলার অনুমতি দেয় পরিবহন দফতর। একইভাবে আসানসোল থেকে জামুড়িয়ার তালতোড় গ্রাম ভায়া চাঁদা -- এই রুট থেকে বাদ গেল তালতোড়গ্রাম। আসানসোল- বহুলা ভায়া রানিগঞ্জ রুট থেকে বাদ গেল বহুয়া। গিরমিট থেকে রুনাকুড়াঘাট ভায়া কাখোঁয়া, উষাগ্রাম, আসানসোল রেলস্টেশন রুটটি কাটছাঁট করে সরাসরি আসানসোল থেকে রুনাকুড়াঘাট ভায়া গৌরাণ্ডি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেল। কাখোঁয়া গ্রামের বাসিন্দা অরূপ ধীবর বলেন, “গ্রামের সঙ্গে শহরের সরাসরি যোগাযোগ না থাকায় গ্রামবাসী থেকে পড়ুয়া সবাই বিপাকে পড়ছেন।”
আসানসোল স্টেশন থেকে কালাঝরিয়া ভায়া এসবি গড়াই রোডের মিনিবাসকে আসানসোল স্টেশন কালাঝরিয়া ভায়া জিটি রোড রুট করে দেওয়া হয়েছে। এই রুট বদলের জেরে সমস্যায় পড়ছেন আসানসোল শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এসবি গড়াই রোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা।
পুরুলিয়ার রামচন্দ্রপুর চক্ষু হাপাতালের সঙ্গে আসানসোলের বাসে সরাসরি যোগাযোগের জন্য একটি মিনিবাসের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এখন শুধুমাত্র আসানসোল থেকে ডিসেরগড় ভায়া বরাকর রুটে বাস চলছে। আসানসোলের একটি প্রত্যন্ত এলাকা অজয় নদের ধারে আমুলিয়া। আগে আমুলিয়া ঘাট থেকে ডিসেরগড় ভায়া বরাকর রুটের বাস চললেও এখন তা শুধু আসানসোল-ডিসেরগড় ভায়া বরাকর রুট করে দেওয়া হয়েছে বলে সংগঠনের তরফে অভিযোগ। এর জেরে অজয়ের ওপারে ঝাড়খণ্ড থেকে বরাকরে রোজগারের জন্য আসা মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। এর জেরে স্বাস্থ্য পরিষেবা ও শিল্পাঞ্চলের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ছে।
এক সময় কবি নজরুল ইসলামের জন্মভিটে চুরুলিয়ার সঙ্গে আসানসোলের ১৩টি বাসের মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এখন, ৪টি বাস অন্য রুটে চলছে। বাকি ৯টি বাসের মধ্যে তিনটিই আবার নিয়মিত চুরুলিয়াতে আসে না বলে অভিযোগ করলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা ভুট্টো সিদ্দিকি।
আসানসোল থেকে বাঁকুড়ার মেজিয়ায় যাওয়ার সরাসরি কোনও বাস মেলে না বলে জানা গেল। ওই রুটের বাসগুলি এখন আসানসোল থেকে রানিগঞ্জ করে দেওয়া হয়েছে।
আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত আসানসোল মহকুমা মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়াকার্স ইউনিয়ন-এর সম্পাদক রাজু অহলুআলিয়া জানান, আসানসোল থেকে রানিগঞ্জ রুটে প্রতি দু’মিনিট অন্তর বাস চলে। বরাকর-আসানসোল, আসানসোল-বার্নপুর রুটেও মিনিট তিনেক অন্তর বাস মেলে। আসানসোল- গৌরাণ্ডি রুটে রয়েছে ২৫টা বাস। রাজুবাবুর অভিযোগ, “সিপিএম প্রভাবিত কর্মীরাই পরিবহন দফতরে রয়ে গিয়েছেন। তাঁদের দ্বারাই চালিত হচ্ছেন জেলা পরিবহন দফতরের মুখ্য অধিকর্তা।” যদিও সিপিএম-এর আসানসোল জোনাল কমিটির সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায় রং না দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। সেইসঙ্গে পার্থবাবুর কটাক্ষ, “ওদের পুরো সরকারটাই দুর্নীতির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই পরিবহন মন্ত্রীর কাজ এখন মুখ্যমন্ত্রীকে করতে হচ্ছে!” রবিবার জেলার মুখ্য পরিবহন অধিকর্তা প্রদীপ মজুমদারের সঙ্গে চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায় নি।
রাজুবাবুর অভিযোগ, ১৯৮৮-১৯৮৯ আর্থিক বর্ষে একটি মিনিবাসকে আসানসোল-ডিসেরগড় ভায়া কুলটি যাওয়ার রুট পারমিট দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ওই বাসের রুট বদলে আসানসোল- ডিসেরগড় ভায়া বরাকর করে দেওয়া হল। রাজুবাবুর প্রশ্ন, আসানসোল থেকে যাতে আর কোনও নতুন রুট পারমিট যাতে না দেওয়া হয়, সেই মর্মে ২০০৬ সালে বাস মালিকদের করা একটি মামলায় হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করে, কিন্তু তারপরেও কীভাবে রুটের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে? সংগঠনের তরফে জেলা পরিবহন দফতরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করারও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, যানজটের কারণে রেল উড়ালপুল ছাড়া এসবি গড়াই রোডে বাস চালানো সম্ভব নয়। বেঙ্গল পেপার মিল বন্ধ, তাই মেজিয়া পর্যন্ত সরাসরি বাস চালিয়েও কোনও লাভ হয় না। তবে অনিয়ম রুখতে সুদীপবাবুর দাবি, “প্রায় এক দশক আগে উঠে যাওয়া বাস মালিক, শ্রমিক সংগঠন প্রতিনিধিদের নিয়ে পরিবহন দফতরের গঠিত সাব কমিটি আবার চালু হোক। আগে ওই কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই পারমিট দেওয়া হত। এটা ফের চালু হলে দুর্নীতি হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy