দিন কুড়ি আগে প্রৌঢ় দম্পতিকে স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসেছিলেন পাড়ার অনেকে। কথা হয়েছিল, হজ সেরে ফেরার পরে সবাই মিলে তাঁদের বাড়িতে এক দিন হইহই করবেন।
আসানসোলে কল্যাণপুর লাগোয়া এডিডিএ স্যাটেলাইট টাউনশিপের মনিজা আহমেদের (৫৯) আর বাড়ি ফেরা হল না। মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছল শনিবার দুপুরে।
শুক্রবার মক্কার কাবাকে ঘিরে থাকা মসজিদ আল-হারামের এক দিকে ক্রেন ভেঙে পড়ায় শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছেন, আহত দু’শোর বেশি। এ রাজ্যেরও দু’জন জখম হয়েছেন। তাঁদের এক জন মালদহের কালিয়াচকের বৃদ্ধ মহম্মদ হাসান আলি। অপর জন, মেদিনীপুর শহরের পাথরঘাটার মণ্ডল মহল্লার লিয়াকত হোসেন। দু’জনেই আপাতত সৌদি আরবে হাসপাতালে ভর্তি। তবে চোট গুরুতর নয়।
শনিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে মন্ত্রী মলয় ঘটক মৃতের বাড়িতে যান। পরে আমি আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। মৃতের পরিবার ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে। বিমার টাকাও পাবে। আহতেরা এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন।’’ পশ্চিমবঙ্গের হজ কমিটির চেয়ারম্যান হাজি নুরুল ও কলকাতা পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ বিষয়টি দেখছেন বলেও জানান তিনি। হাজি নুরুল বলেন, ‘‘সৌদি সরকার মৃতের পরিবারকে ৩ লক্ষ রিয়াল ক্ষতিপূরণ দেবে।’’
সংস্কার চলাকালীন মক্কার গ্রান্ড মসজিদের সামনে এখানেই ভেঙে পড়ে ক্রেন। ছবি: এএফপি।
মনিজা বিবির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর স্বামী সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার কর্মী ছিলেন। বছর সাতেক আগে অবসর নেন। গত ২৩ অগস্ট তাঁরা হজযাত্রায় বেরোন। তাঁদের এক মাত্র ছেলে মহম্মদ ফৈজ কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘সকাল ৬টা নাগাদ বাবা ফোন করে জানান, দুর্ঘটনা ঘটেছে। মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি পাগলের মতো দৌড়ে বেড়াচ্ছেন।’’
দুপুরে আসানসোলে মনিজা বিবির মৃত্যু সংবাদ পৌঁছনোর পরেই পাড়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মনিজা-ইমতিয়াজের বন্ধ বাড়ির সামনেই ভিড় জমান প্রতিবেশীরা। ‘‘মায়ের দেহ পরে বাবাই শনাক্ত করেছেন’’— বলতে বলতে ফোনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফৈজ। একটু পরে সামলে নিয়ে তিনি জানান, মায়ের দেহ দেশে ফেরানো হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত তাঁর বাবাই নেবেন।
গত ২১ অগস্ট স্ত্রী তাহেরা বেগমকে নিয়ে হজের জন্য রওনা দেন মেদিনীপুর শহরের পাথরঘাটা মণ্ডল মহল্লার বছর একষট্টির লিয়াকত হোসেন। তাঁদের ছেলে শেখ ফায়সান হোসেন বলেন, “সকালে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। তখন উনি কিছু জানাননি। দুপুরে প্রশাসনের তরফে বাবার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হলে সন্দেহ হয়। দুপুরে বাবাকে ফোন করে শুনি, তাঁর পায়ে আঘাত লেগেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে তিনি ভাল আছেন।’’
মালদহের কালিয়াচক এলাকার বৃদ্ধ মুদি দোকানদার মহম্মদ হাসান আলিও স্ত্রী মারিয়ম বিবিকে নিয়ে হজে গিয়েছিলেন। তাঁদের ছেলে নাসিমুল হক জানান, শুক্রবার রাতেই তাঁরা টিভিতে দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরেছিলেন। পরে তাঁর মা ফোন করে জানান, বাবা পায়ে-মাথায় চোট পেয়েছেন। তবে এখন তিনি মোটামুটি সুস্থ রয়েছেন। নাসিমুল বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে আবেদন, বাবা সুস্থ হয়ে গেলে ওঁদের যেন দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।’’