মন্তেশ্বরে সংঘর্ষে আহতদের আনা হল বর্ধমান মেডিক্যালে।
১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ নিয়ে তৃণমূলের দুই নেতার মধ্যে মতবিরোধ চলছিলই। শুক্রবার তা চেহারা নিল সংঘর্ষের। বোমা-গুলিতে প্রাণ গেল দু’জনের। বর্ধমানের মন্তেশ্বরের দেনুড় পঞ্চায়েত এলাকায় ওই ঘটনায় দু’জন জখম হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তৃণমূল অবশ্য ঘটনাটিকে দলীয় কোন্দল বলে মানতে নারাজ।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় দেনুড় পঞ্চায়েতের মৌসা গ্রামে বোমা ও গুলির আঘাতে মারা যান গ্রামবাসী সুখচাঁদ মণ্ডল (৩৫) ও ইমাদ মল্লিক (৩২)। লিখিত অভিযোগ না পেলেও গ্রামে যায় পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “সংঘর্ষে দু’জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। জড়িতদের খোঁজ চলছে।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “যেটুকু খবর পেয়েছি, পারিবারিক বিবাদের জেরে এমন ঘটেছে। পুলিশকে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
যদিও মন্তেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক চৌধুরী মহম্মদ হেদায়েতুল্লার অভিযোগ, “রাস্তা তৈরির কাজ নিয়ে হাবিব শেখ ও তাঁর লোকজন বেশ কয়েক হাজার টাকার দুর্নীতি করেছেন। তা নিয়েই তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের গোলমাল। তার জেরেই এমন ঘটেছে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই ওই এলাকার দুই তৃণমূল নেতাহাবিব শেখ ও লাল্টু শেখের অনুগামীদের মধ্যে বিবাদ চলছে। দলের পুরনো কর্মী লাল্টু তৃণমূলের দেনুড় অঞ্চল কমিটির সাধারণ সম্পাদক। হাবিব আগে এআইইউডিএফ কর্মী ছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটের পরে সঙ্গীদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এখন তিনি দলের দেনুড় অঞ্চল কমিটির কার্যকরী সভাপতি। কয়েক মাস আগে ১০০ দিনের প্রকল্পে নর্দমা সংস্কার নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত। লাল্টু প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন, হাবিব প্রভাব খাটিয়ে ওই কাজে দুর্নীতি ও টাকা নয়ছয় করেছেন। তার পরেই লাল্টুর অনুগামীদের উপরে বোমাবাজি ও এলাকার বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে হাবিব ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি মৌসা গ্রামে একটি রাস্তার কাজ শুরু করেছে পঞ্চায়েত সমিতি। লাল্টুর দাবি, “দরপত্র অনুযায়ী, যতটা মোরাম ফেলার কথা, তা হয়নি। এ ব্যাপারে ঠিকাদারকে চেপে ধরলে তিনি জানান, হাবিবের চাপেই কম মোরাম ফেলেছেন।” স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েকদিন ধরে চাপানউতোর চলায় গ্রাম কমিটি শুক্রবার সন্ধ্যায় মৌসা মোড়ে একটি বৈঠক ডাকে। লাল্টুর অভিযোগ, “হাবিবের লোকজন এসে বোমা ও গুলি ছুড়তে শুরু করে আমার সঙ্গীদের উপরে। যে-যে দিকে পারেন, ছুটতে শুরু করেন।”
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা চার জনকে মন্তেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠায়। সেখানে ইমাদকে মৃত বলে
ঘোষণা করেন ডাক্তারেরা। বাকিদের বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়। তবে মাঝরাস্তায় মৃত্যু হয় সুখচাঁদের। হানিফ মল্লিক ও সালাম মল্লিক নামে দু’জন বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। এই চার জনই এলাকায় লাল্টুর অনুগামী বলে পরিচিত।
হাবিব শেখের দাবি, “ঘটনাস্থলে ছিলামই না। আমার বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy