Advertisement
E-Paper

ডাকনামে কি বোঝা যায়, না-ধরার যুক্তি পুলিশের

তাই সিপিএম কর্মী সুশান্ত দে এবং তাঁর প্রতিবন্ধী ছেলে-সহ পরিবারকে নিগ্রহের অভিযোগে বুড়োকে যখন হন্যে হয়ে খোঁজার কথা বলছে পুলিশ, তিনি তখন বেলেঘাটার নবাববাগানে নিজের বাড়িতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, শনিবার সকালে পরিজন-বন্ধুদের নিয়ে এনআরএস হাসপাতালে হাতে প্লাস্টার করাতে এসেছিলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ০০:২২
এনআরএসে গৌতম দাস ওরফে বুড়ো। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

এনআরএসে গৌতম দাস ওরফে বুড়ো। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

গোটা বেলেঘাটা তাঁকে ‘বুড়ো’ হিসেবেই চেনে। শুধু চেনে না বেলেঘাটা থানা!

তাই সিপিএম কর্মী সুশান্ত দে এবং তাঁর প্রতিবন্ধী ছেলে-সহ পরিবারকে নিগ্রহের অভিযোগে বুড়োকে যখন হন্যে হয়ে খোঁজার কথা বলছে পুলিশ, তিনি তখন বেলেঘাটার নবাববাগানে নিজের বাড়িতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, শনিবার সকালে পরিজন-বন্ধুদের নিয়ে এনআরএস হাসপাতালে হাতে প্লাস্টার করাতে এসেছিলেন তিনি। হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে ঘোষণাও করেছেন, ‘‘আমিই বুড়ো। আমাকে আলুদা (সুশান্তবাবু) বৃহস্পতিবার রাতে উইকেট দিয়ে মেরে হাত ভেঙে দেয়।’’ হাসপাতাল থেকে বুড়ো ফিরে গিয়েছেন আবার বেলেঘাটাতেই। তবু বুড়োর খোঁজ ‘পায়নি’ পুলিশ!

এ দিন ডিসি (ইএসডি) ধ্রুবজ্যোতি দে জানান, সুশান্তবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে বেলেঘাটার চাউলপট্টি থেকে সুকুমার সাহা ও নিখিল দাস নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুড়ো-সহ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।

কে এই বুড়ো? সরকারি খাতায় তাঁর নাম গৌতম দাস। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে সুশান্তবাবুকে। এ দিন শিয়ালদহ আদালতে হাজির করিয়ে তাঁকে নিজেদের হেফাজতেও নিয়েছে পুলিশ। তা হলে বুড়ো অধরা কেন?

পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, সুশান্তবাবুর অভিযোগপত্রে গৌতম দাসের নাম নেই। তাই তাঁকে ধরা হয়নি। কিন্তু বুড়োর আসল নাম কী, তা অবশ্য অভিযোগ দায়ের হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। এই ‘জানতে না-পারা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পুলিশেরই একাংশ। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুশান্তবাবুর আইনজীবীরাও। আদালতে তাঁরা বলেন, সুশান্তবাবু অভিযোগপত্রে ছ’জনের নাম লিখলেও পুলিশ দু’জনের নাম পেন দিয়ে কেটে দিয়েছে। কিছু নথিও তাঁদের জমা দিতে দেখা যায়।

লালবাজারের একাংশ বলছে, বেলেঘাটা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শাসক দলের দহরম-মহরমের কথা অজানা নয়। গত পাঁচ বছরে বারবার সেই ঘনিষ্ঠতা সামনে এসেছে। ভোটের দিন অবশ্য বেলেঘাটা এলাকায় পুলিশের সক্রিয় চেহারা সামনে এসেছিল। দেখা গিয়েছিল, শাসকের তোয়াক্কা না করে শিরদাঁড়া সোজা করে কাজ করছে পুলিশ। কিন্তু অভিযোগ, ভোট পেরোতেই বেলেঘাটার পুলিশ ফিরে গিয়েছে পুরনো চেহারায়। তাই শুক্রবার রাতে এক পুলিশকর্তা ঘনিষ্ঠ মহলে বুড়োদের জন্য তল্লাশির দাবি করলেও দু’জন ছাড়া বাকি কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি থানা। বেলেঘাটা থানার এক অফিসার বলছেন, ‘‘সুশান্তবাবুকে নিগ্রহের ঘটনায় জামিনযোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে। উপরমহলের চাপে হয়তো থানা থেকে জামিন পাওয়া যাবে না। কিন্তু আদালতে গেলেই জামিন পেয়ে যাবে ওরা।’’

এই তদন্তে থানা কতটা সক্রিয়, সে প্রশ্ন এ দিন পরোক্ষে তুলে দিয়েছেন বুড়োই। তাঁর হাত ভেঙেছিল বৃহস্পতিবার রাতে। এ দিন সেই হাতে প্লাস্টার করানোর পরে এনআরএস হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে গৌতম ওরফে বুড়ো বলেন, ‘‘সেই রাতে আলুদা আর আমি তো একসঙ্গেই থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম। তদন্তকারী অফিসারের সামনে পাশাপাশিই বসেছিলাম।’’ এই প্রসঙ্গ এ দিন আদালতেও তোলেন সুশান্তবাবুর আইনজীবীরা। জানতে চান, তা হলে সে দিনই সুশান্তবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করা হল না কেন?

পুলিশের অবশ্য ব্যাখ্যা, সুশান্তবাবু মারধরের অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন। অভিযোগ নেওয়া হলেও এফআইআর রুজু করার জন্য তাঁকে মারধরের ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে আসতে বলা হয়। তিনি আর আসেননি। তার আগেই গৌতম হাত ভাঙার ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে এনে অভিযোগ দায়ের করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি ডাক্তারি পরীক্ষার কাগজ নিয়ে থানায় যাওয়ার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সুশান্তবাবুর এই গ্রেফতারের ঘটনা আতঙ্কে ফেলেছে তাঁর পরিবারকেও। ছেলে শৌভিক এ দিন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলে, ‘‘বাবা গ্রেফতার হওয়ার পরে আমাদের বাড়িতে তৃণমূলের এক দল মহিলা চড়াও হয়েছিলেন। ভেবেছিলাম থানায় যাব। কিন্তু আমাকেও যদি গ্রেফতার করে, সেই ভয়ে আর যেতে পারিনি।’’

এলাকার অনেকেই বলছেন, সুশান্তবাবু শান্তশিষ্ট মানুষ। তিনি কাউকে মেরে হাত ভেঙে দেবেন, এ কথা মানতে চাইছেন না তাঁরা। পুলিশ কি তবু নিশ্চিত যে সুশান্তবাবুই মেরে হাত ভেঙেছেন?

এখনও পর্যন্ত তেমনটাই মনে করছেন তদন্তকারী অফিসার। যার ভিত্তিতে সরকারি কৌঁসুলি মৃণ্ময় মিত্র বলেন, বাকি অভিযুক্ত এবং মারধরের অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সুশান্তবাবুকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে ৩৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলেই আদালতের বাইরে জানিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলি। প্রশ্ন উঠেছে এখানেও। পুলিশের অন্দরে খবর, সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখার জন্য ডিসি-কে আর্জি জানিয়েছেন স্থানীয় সিপিএম নেতারা। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তা যাচাই করার আশ্বাস দিয়েছেন ডিসি (ইএসডি)।

goutam das cpm tmc kolkata police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy