নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে শুক্রবার রাতে বেঞ্চে শুয়ে ছিলেন বছর তিরিশের এক যুবক। টি-শার্ট আর জিন্স পরা সেই পেটানো চেহারার দু’পাশে উদ্বিগ্ন মুখে বসে তাঁর দুই বন্ধু। জরুরি বিভাগে তখন বিশ্বজিৎ জানা নামে ওই যুবক ছাড়া আর কোনও রোগীকে দেখা গেল না। কী হয়েছে? প্রশ্ন শুনে এক বন্ধু জানালেন, রক্তের ক্যানসার। এ দিন রক্ত নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তার পরে হওয়ার কথা ছিল কেমোথেরাপি। সন্ধ্যা থেকে বিশ্বজিতের শারীরিক অস্বস্তি বেড়েছে। তাই দ্রুত নিয়ে আসা হয়েছে হাসপাতালে। কিন্তু এসে তাঁরা দেখেন, জরুরি বিভাগে চিকিৎসা হচ্ছে না। ক্লান্তি জড়ানো গলায় বিশ্বজিৎ বললেন, “জানি, ধর্মঘট চলছে। কিন্তু আমার বিষয়টা তো ইমার্জেন্সি। এক জন চিকিৎসককেও কি পাওয়া যাবে না, যিনি আমাকে একটু দেখে দেবেন?”
রাত তখন সাড়ে ১১টা। এনআরএসের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক রয়েছেন প্রচুর। কিন্তু তাঁরা কেউই রোগী দেখতে সেখানে আসেননি। এসেছেন খাওয়ার পরে ওই বিভাগের বেসিনে মুখ ধুতে। জরুরি বিভাগের সামনেই রাত জেগে ধর্নায় বসেছেন তাঁরা। সাড়ে ১১টা নাগাদ তখন ওই বিভাগের সামনেই বুফেতে খাওয়া-দাওয়া চলছিল। লাইন দিয়ে ওঁরা খাবার নিচ্ছেন। ভাত, ডাল, মাংস, চাটনি আর পাঁপড়। থার্মোকলের প্লেটে খাবার খেয়ে অনেকে সেগুলি হাসপাতাল চত্বরেই ছুড়ে ফেলছেন। প্লেটের উচ্ছিষ্টের দখল নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে কুকুর-বেড়ালেরা।
এই ভোজের আয়োজন যেখানে হয়েছিল, তার একটু দূরেই তখন যন্ত্রণায় কাতরে যাচ্ছেন ক্যানসারে আক্রান্ত বিশ্বজিৎ। তাঁর এক বন্ধু বললেন, “আমরা ডানকুনির কাছে চণ্ডীতলা থেকে অনেক আশা নিয়ে এসেছি। একটু দেখুন না, যদি কোনও চিকিৎসককে পাওয়া যায়।” জরুরি বিভাগে তখন এক জন সিনিয়র চিকিৎসকই কাজ করছিলেন। বিশ্বজিতের কাতর আবেদন শুনে বললেন, “সব বন্ধ। কী করে ব্যবস্থা করি বলুন তো?”