বিধানসভায় মন্ত্রী এবং বিরোধী দলের বিধায়কের মধ্য়ে হাতাহাতির উপক্রম হল মঙ্গলবার। তার জেরে বিরোধী বাম এবং কংগ্রেস সভা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করে তাদের ফিরিয়ে আনতে হল সরকারপক্ষকে। বিধানসভায় শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি এবং হাতাহাতির মতো পরিস্থিতি আগেও হয়েছে। কিন্তু তার জন্য সরকারপক্ষের দুঃখপ্রকাশ সাম্প্রতিক কালে এই প্রথম।
বিধানসভায় এ দিন রাজ্যপালের ভাষণের উপর বিতর্ক শুরুর সময় মন্ত্রীর সংখ্যা কেন কম, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্য সরকারি সচেতক নির্মল ঘোষকে দায়িত্ব দেন অন্য মন্ত্রীদের ডাকতে। সেই সময়েই মোবাইলে কথা বলতে বলতে সভায় ঢুকতে দেখা যায় পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায়কে। মনোজবাবু তাঁকে বলেন, ফোন ছেড়ে পরিষদীয় মন্ত্রীর তাড়াতাড়ি নিজের আসনে বসা উচিত। বাদানুবাদ শুরু হতে তাপসবাবুকে ওয়েলে নেমে তেড়ে যেতে দেখা যায় মনোজবাবুর দিকে। মনোজবাবুও তাঁর দিকে ধেয়ে যান। শাসক ও বিরোধী — দু’পক্ষের বিধায়কেরাই ওয়েলে নেমে আসেন। স্পিকার শান্ত করার চেষ্টা করেন সকলকে। কংগ্রেস বিধায়ক ফিরোজা বেগম, নেপাল মাহাতোরা তাপসবাবুর দুঃখপ্রকাশের দাবি জানান। স্পিকার বলেন, ‘‘যে-ই করুক, ঘটনাটা বাঞ্ছনীয় নয়। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তোলেন, বাঞ্ছনীয় না হলে ওই ঘটনার জন্য তাপসবাবু দুঃখপ্রকাশ করবেন না কেন?
তাপসবাবুর সঙ্গে মনোজবাবুর গোলমাল শুরু হওয়ার পরে সভায় ঢোকেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটা বাঞ্ছনীয় নয়।’’ বাম এবং কংগ্রেস বিধায়করা তখনও তাপসবাবুর দুঃখপ্রকাশের দাবিতে অনড়। মনোজবাবু ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘‘উনি মন্ত্রী তো কী হয়েছে? মন্ত্রী কি ভগবান?’’ পাল্টা বক্তব্যে তাপসবাবু দরজার দিকে দেখিয়ে দাবি করেন, ‘‘আমি ওখানে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রথমে কে নেমে এসে তাড়া করেছে?’’ স্পিকার বলেন, ‘‘সকলে যেন নিজের আচরণ সম্পর্কে সংযত হন।’’ কিন্তু তাপসবাবু দুঃখপ্রকাশ না করায় ওয়াক আউট করে বাম, কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: জামিন পেলেন না আনিসুর
আজ বিধানসভায় পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রীর অভব্য আচরণের প্রতিবাদে কংগ্রেস ও বাম বিধায়কদের ওয়াক আউট। pic.twitter.com/Bqxlpy6POP
— West Bengal Congress (@INCWestBengal) February 11, 2020
এর পরে স্পিকার নিজের ঘরে ডাকেন পার্থবাবু এবং তাপসবাবুকে। কিছু ক্ষণ পরে স্পিকারের ডাকে তাঁর ঘরে যান নেপালবাবু, মনোজবাবু এবং সুজনবাবু। সেখানে পরিষদীয় মন্ত্রী এবং স্পিকার তাঁদের সভায় ফেরার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা বলেন, তাপসবাবু দুঃখপ্রকাশ না করলে তা সম্ভব নয়। তার পরে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবুই সভায় গিয়ে বিবৃতি দেবেন। সভায় পার্থবাবু বলেন, ‘‘অধিবেশনে যে ঘটনা ঘটেছে, তা বাঞ্ছনীয় নয়। সরকার পক্ষ ও বিরোধী— সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে। এই ঘটনায় যদি বিরোধী পক্ষের কোনও সদস্য আঘাত পেয়ে থাকেন, তা হলে তা আমাদেরও আঘাত বলে মনে করি।’’
এর পরে বাম এবং কংগ্রেস বিধায়করা ফের সভায় গিয়ে রাজ্যপালের ভাষণের উপর বিতর্কে অংশ নেন।