Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Bengal Panchayat Election 2018

ফুঁসছে এলাকা, বারুদের স্তূপে ভাঙড়, চিহ্ন নেই পুলিশের

ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গায় ইতিউতি নানা ক্ষোভের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে। কোথাও রাস্তার উপরেই পড়ে রয়েছে আরাবুল বাহিনীর পোড়া বাইক। কোথাও রাস্তার উপর আরাবুল ঘনিষ্ঠের ভাঙা দোকান।

ভাঙড়ে শুক্রবারের ঘটনার পর বাইক, দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন উত্তেজিত গ্রামবাসীরা। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙড়ে শুক্রবারের ঘটনার পর বাইক, দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন উত্তেজিত গ্রামবাসীরা। নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
ভাঙড় শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ১১:১৯
Share: Save:

ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে ভাঙড়। আরাবুল ইসলামের গ্রেফতার সেই আগুন কোনও ভাবেই প্রশমিত করতে পারেনি। বরং এলাকাবাসীর দাবি, আরাবুলের গায়ে যাতে কোনও ভাবে এই আগুনের আঁচ না লাগে, সে কারণেই তাঁকে প্রশাসন গ্রেফতার করেছে। সব মিলিয়ে এই মূহূর্তে ভাঙড় কার্যত বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। অথচ গোটা এলাকায় পুলিশ-প্রশাসনের কোনও চিহ্নই নেই।

হাফিজুল মোল্লার মৃত্যুর পর শুক্রবার রাত থেকে হাড়োয়া রোড অবরুদ্ধ। সেই অবরোধ শনিবার দুপুরেও ওঠেনি। এ দিন সকাল থেকেই ভাঙড়ে দফায় দফায় মিছিল করেছে জমি রক্ষা জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্য ও কর্মী-সমর্থকরা। হাফিজুলের দেহ নিয়ে সারা রাত সেখানে অবস্থান করেন তাঁরা। সকাল থেকেই হাজার হাজার সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সেই অবস্থানে যোগ দেন। তাঁদের দাবি, এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সকলকেই গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গায় ইতিউতি নানা ক্ষোভের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে। কোথাও রাস্তার উপরেই পড়ে রয়েছে আরাবুল বাহিনীর পোড়া বাইক। কোথাও রাস্তার উপর আরাবুল ঘনিষ্ঠের ভাঙা দোকান। গতকাল থেকে যে পরিমাণে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, তাঁদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, তাতে অনেকেরই ধারণা ছিল, আরাবুল ইসলামের বাড়িতেও মানুষ চড়াও হবে। চালানো হবে ভাঙচুর। কিন্তু, বাস্তবে তেমনটা হয়নি। এমনকী, আরাবুলের বাড়ির পিছনের আমবাগানের মাটির তলা থেকে এ দিন প্রচুর পরিমাণে বোমা উদ্ধার হওয়ার পরেও সেই ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে।

আর এই নিয়ন্ত্রণের পিছনে তাদের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করছে জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি। কমিটির এক সদস্য মহম্মদ আবুল বলেন, “ভাঙড়ের পরিস্থিতি অশান্ত হতে দেব না। আমরা চাই নির্বাচন হোক। নির্বাচন হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে মানুষের রায় কোন দিকে রয়েছে।” আসলে কমিটির কাছে এই নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভাঙড়ের যে আটটি জায়গায় কমিটির জেতা প্রায় নিশ্চিত, অশান্তির দোহাই দিয়ে সেই জায়গাগুলিতে যদি নির্বাচন বাতিল করে দেওয়া হয়, তাতে কমিটিরই ক্ষতি। সেই আশঙ্কার জায়গা থেকেই কমিটি ক্ষোভের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। তবে ভাঙড়ে যদি নতুন করে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে জনরোষের বিস্ফোরণ যে আর তাদের হাতে থাকবে না, তা-ও ভাল করে জানেন কমিটির নেতারা।

দেখুন ভিডিয়ো

আরও পড়ুন: ভাঙড়ে গুলিতে হত ১, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রেফতার আরাবুল

আরও পড়ুন: চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে গিয়েই বিপাকে ‘বেতাজ বাদশা’ আরাবুল

রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন গ্রামবাসীরা।—নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু, এত কিছুর পরেও এলাকায় পুলিশ-প্রশাসনের কোনও চিহ্ন নেই কেন?

বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘সকালে পুলিশ বাহিনী ঢিপঢিপে এবং অনন্তপুর এলাকায় টহল দিয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কোনও বাহিনী এলাকায় নেই। বুথে বুথে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিকালের মধ্যেই তাঁরা পৌঁছে যাবেন।’’ কিন্তু ঢিপঢিপে বা অনন্তপুর তো ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে! এত বড় ঘটনার পরেও ঘটনাস্থলে কেন পুলিশ নেই? পুলিশ সুপার কোনও জবাব দেননি।

দেখুন ভিডিও

একটা মৃত্যুর ঘটনা গোটা ভাঙড়ের চেহারাটাই বদলে দিয়েছে। এ দিন কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিছিল চলছিল। বড় রাস্তায় মিছিল উঠতেই আরাবুলের লোকেরা বন্দুক নিয়ে হামলা চালায়। তাতে আমাদের এক কর্মীর মৃত্যু হয়।” কিন্তু, আরাবুল নিজে দাবি করেছেন, ‘‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ওরা পরিকল্পনা করে খুন করেছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব।’’ জমি রক্ষা কমিটির মুখপাত্র মির্জা হোসেন কিন্তু আরাবুলের দাবি এবং তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে অন্য কথা বলছেন। তাঁর কথায়, “এটা সরকারের সাজানো একটা ঘটনা। আরাবুলকে দিয়ে হামলা চালিয়ে, তার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হল। পুরোটাই লোক দেখানো।”

হাফিজুলের মৃত্যুর প্রতিবাদে ভাঙড়ে জমিরক্ষা কমিটির মিছিল। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমেছেন গ্রামবাসীরা। নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে মিছিল বার করেছিল জমি রক্ষা কমিটি। সেই মিছিলে হাফিজুলও ছিলেন। মিছিল বড় রাস্তায় উঠতেই তাঁদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে আরাবুলের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় হাফিজুলের। তার পরই ভাঙড়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাতে গ্রেফতার করা হয় আরাবুল ও তাঁর এক সহযোগীকে। সারা রাত দেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধের পর এ দিন সকালে হাফিজুলের দেহ কাটাপুকুর মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের পর বিকালে ভাঙড়ে নিয়ে আসা হবে তাঁর দেহ। কমিটির তরফে জানানো হয়, বিকালেই হাফিজুলের দেহ নিয়ে এলাকায় শান্তিমিছিল করা হবে। ভাঙড়ের মানুষ যে ভাবে খেপে রয়েছেন তাতে যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। মির্জা হোসেনের কথায়, ‘‘হাফিজুলের মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। হাজার হাজার মানুষ তাই আরাবুল বাহিনীর অন্যায়ের প্রতিবাদে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমেছেন। তবে ফের কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটলে, বিষয়টা আর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।’’ পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে সে জন্য নিজেদের সদস্য ও কর্মী-সমর্থকদের সংযত থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে জমি রক্ষা কমিটির তরফে।

তবে তৃণমূলের অভিযোগ কমিটির সদস্যেরা মাছিভাঙায় তাদের দুই সমর্থকের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন আলাউদ্দিন মোল্লা মাছিভাঙার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। অন্য জন সালাউদ্দিন তাঁর ভাই। কমিটি যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhangar Arabul Islam Shot Dead ভাঙড়
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE