Advertisement
E-Paper

দুইডা দ্যাশের ভুটেও দ্যাখত্যাসি ঢের মিল

দেড়-মানুষ উঁচু ঝাঁকড়া পাট খেত ভেঙে মাথাভাঙা নদীর কোল ঘেঁষে জব্বার আলি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, ‘‘কইত্যা, ভুটে ইবার গন্ডগোল হইব না নাহি?’’

সুজাউদ্দিন ও কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০১:১২
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া। সীমানা ভেঙে ছড়িয়ে রয়েছে ওপারের বিলগাথিয়া গ্রাম।

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া। সীমানা ভেঙে ছড়িয়ে রয়েছে ওপারের বিলগাথিয়া গ্রাম।

মেঘ-ভাসি আকাশ। সীমানা ভেঙে ছড়িয়ে রয়েছে ওপারের বিলগাথিয়া গ্রামে। মাঠ জুড়ে বৃষ্টি ভেজা পাট খেত। আর কাদাদীর্ণ মাটি।

দেড়-মানুষ উঁচু ঝাঁকড়া পাট খেত ভেঙে মাথাভাঙা নদীর কোল ঘেঁষে জব্বার আলি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, ‘‘কইত্যা, ভুটে ইবার গন্ডগোল হইব না নাহি?’’

হাওয়ায় গোত্তা খেয়ে প্রশ্নটা ঠোক্কর খায় এ পাড়ে চরমেঘনার মাটির দেওয়ালে। গ্রামের মাচা, চায়ের টিমটিমে দোকান, গাঁয়ের আলপথ— প্রশ্নটা সত্যিই বড় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এ বার। এ-পাড় ও-পাড়, দু’দেশেই।

ছিপছিপে মাথাভাঙা আলপনা দেওয়ার মতো সীমানা টেনেছে বটে, তবে ভোট নিয়ে আগ্রহের অন্ত নেই কুষ্টিয়ার মহিষকুন্ডা, বিলগাথিয়া, দৌলতপুরের।নদীতে স্নানের সময়ে দু’দেশের মধ্যে এ নিয়ে ভয়-শঙ্কার আদান প্রদান কম হয় না।

চর মেঘনার উত্তম সর্দার বলছেন, ‘‘আর যাই হোক পড়শি তো, ভোট নিয়ে তাই ওদের আগ্রহও কম নয়। তবে, ভোটের সময়ে ও পাড় থেকে লোক পাঠানোর রেওয়াজও রয়েছে!’’

সে কেমন? চরমেঘনার অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলি বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের এ সময়ে ‘ভাড়া’ নেয়। ঝামেলা পাকিয়ে নিঃশব্দে হাঁটু জলের মাথাভাঙা পার হয়ে ভিন দেশে হারিয়ে যায় তারা।

নদিয়ার চর মেঘনা যদি এমন আশঙ্কায় ভোগে তা হলে আসুন খোঁজ নিই মুর্শিদাবাদের সরু এক ফালি পাট খেতের ও পাড়‌ে বাংলাদেশের আতারপাড়া কি বলছে।

এক ফালি জমির ওপরে একটা সাদা পিলারের কাছে থমকে গিয়েছে সীমানা। তার পর আলের পাশ দিয়ে শুরু হয়েছে আরও এক ফালি পাটের জমি। পার হলেই আতারপুর। আতারপাড়ার মোশারফ হালদার বলছেন, ‘‘ভারতের পটাশপুরের মিজানুর সেখ আর আমার জমিটা আলাদা করেছে ওই আল পথ। দু’ভাই বলতে পারেন আমাদের। ভোটের খোঁজ তাই নিতেই হয়।’’ মোসারফের আশঙ্কা মিটিয়ে মিজানুর তাই বলছেন, ‘‘এ বার ভাই কোদালের ডাঁট আর উইকেট দিয়েই ভোট পর্ব মিটে গিয়েছে আমাদের আর ভোট নাই!’’

দেশ ভাগ হয়ে গেলেও নদিয়া-মুর্শিদাবাদের চরের গ্রামগুলো যেন ভাগ হয়নি। কাঁটাতারের বেড়া বা বিএসএফের টহল প্রায় নেই। ফলে হামেশাই তাদের চলাচল। এমনকী বিয়ের বাজার থেকে খেতের টুলু পাম্পও কেনাকাটা এ পাড়ের মেঠো বাজারে। এ পাড়ের ভোট তাই ও পাড়েরও বুঝি মাথা ব্যাথাক কারণ।

চর উদয়নগর খণ্ডের ফিরোজ সেখের কথায়, ‘‘বাবার জন্মে এমন ভোট দেখিনি। ভোটের আগেই ভোট শেষ। এত দিন আমরা ওদের দেশের ভোট নিয়ে হাসাহাসি করতাম। এবার বাংলাদেশের লোকেরাও আমাদের ভোট নিয়ে মশকরা করছে।’’ বাংলা বাজারের বাসীন্দা মুস্তফা গোপির কথায়, ‘‘ভাইজান এদ্দিন দ্যাখতাম আমাগো দ্যাশে একতরফা (একচেটিয়া) ভুট হয়, এখন দ্যাখছি দুই বাংলার শুধু পরানের মিল লয়, ভুটেও ভালো মিলও কম নয়!’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 India Bangladesh Miscreants
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy