Advertisement
E-Paper

৪-৫টা জেলা পেতাম, গুনতেই দেয়নি ভোট, সরব দিলীপ, পাল্টা কটাক্ষে পার্থ

গ্রাম পঞ্চায়েতের লড়াইয়ে কয়েকটা জেলায় রীতিমতো চমকে দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু জেলা পরিষদের আসনপ্রাপ্তির হিসেবে চোখ রাখলে গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফলের কোনও প্রতিফলনই সেখানে চোখে পড়ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ২১:১৬

একের পর এক জেলা পরিষদ জোর করে দখল করল তৃণমূল। অভিযোগ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের। যে সব এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বহু আসন জিতেছে বিজেপি, সেই এলাকাতেও জেলা পরিষদে কী ভাবে জিতল তৃণমূল? রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে শুক্রবার এই প্রশ্ন তুললেন দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, জেলা পরিষদের ফলাফলটাই আসল চিত্র। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে অন্য অনেক রকম ফ্যাক্টর কাজ করে বলে সেখানকার ফল একটু অন্য রকম হয়েছে।

গ্রাম পঞ্চায়েতের লড়াইয়ে কয়েকটা জেলায় রীতিমতো চমকে দিয়েছে বিজেপি। ঝাড়গ্রাম আর পুরুলিয়ায় তৃণমূল আর বিজেপি প্রায় সমান সমান। আলিপুরদুয়ার, মালদহ, নদিয়া, বাঁকুড়াতেও বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্য। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরেও বহু আসনে পদ্মফুল ফুটেছে এ বার।

কিন্তু জেলা পরিষদের আসনপ্রাপ্তির হিসেবে চোখ রাখলে গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফলের কোনও প্রতিফলনই সেখানে চোখে পড়ছে না। গ্রাম পঞ্চায়েতের সামগ্রিক ফলাফল বলছে, যত আসনে নির্বাচন হয়েছে, তার ৬৭ শতাংশে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বিজেপি জিতেছে ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে সেই হিসেব বদলে গিয়েছে। সেই স্তরে তৃণমূলের জয় ৮১ শতাংশ আসনে। আর বিজেপির জয় ১৩ শতাংশে। জেলা পরিষদে গিয়ে আকাশ-পাতাল হয়ে গিয়েছে শাসক ও বিরোধী দলের মাঝের ব্যবধান। যতগুলি জেলা পরিষদ আসনে ভোট হয়েছে, তার প্রায় ৯৫ শতাংশই জিতে নিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি জিতেছে মাত্র ৩.৯৫ শতাংশ আসনে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

দিলীপ ঘোষ এ দিন অভিযোগ করেছেন, সন্ধ্যার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় গণনাকেন্দ্রগুলি দখল করে নিয়েছিল তৃণমূল। সব বিরোধী দলের এজেন্টকে মেরেধরে গণনাকেন্দ্রগুলি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। বালুরঘাটের তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গণনাকেন্দ্র দখল করিয়েছেন এবং ভোট লুঠ করেছেন বলে দিলীপবাবুর দাবি।

আরও পড়ুন: সবুজ হল পাণ্ডুয়াও, তিনে সিপিএম

রাজ্য বিজেপির সভাপতি এ দিন বলেন, ‘‘৪-৫টা জেলা জেতার অবস্থায় ছিল বিজেপি। কিন্তু গণনায় কোনও বিরোধী দলকে থাকতেই দেয়নি। রাতে বিভিন্ন গণনাকেন্দ্র দখল করে নিয়েছিল তৃণমূল, অন্য কোনও দলের এজেন্টরা ছিলেন না। নিজেরাই ভোট গুনেছে, নিজেরাই জিতেছে। কেউ জানেই না, কে কত ভোট পেল।’’

দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘একটা এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে জিতলাম, পঞ্চায়েত সমিতিও জিতলাম। কিন্তু জেলা পরিষদ আসন জিততে পারলাম না। এ রকম কি হয়? জেলা পরিষদের ভোট গুনতেই দেওয়া হয়নি।’’

তৃণমূল অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করছে। ‘প্রবল সন্ত্রাসের মধ্যেও বিজেপি ভাল ফল করেছে’ বলে যে দাবি বিজেপি নেতৃত্ব করছেন, বৃহস্পতিবারই তা নস্যাৎ করা হয়েছিল তৃণমূলের তরফে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ খুলেছিলেন। নবান্নে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিজেপি যে এত নাচানাচি করল, একটা-দু’টো জেলা ছাড়া দেখবেন জিরো। সেগুলোও বর্ডার লাগোয়া জেলা।’’ ঝাড়খণ্ড, অসম এবং বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে লোক ও টাকাপয়সা ঢুকেছে লাগোয়া জেলাগুলোয়, মুখ্যমন্ত্রী তেমনই অভিযোগ করেন বৃহস্পতিবার।

আরও পড়ুন: শাসকের চেয়ে অনেক পিছিয়েও দ্বিতীয় বিজেপি

শুক্রবার তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বয়ান ছিল আরও চড়া। সন্ত্রাস বা গণনায় কারচুপির অভিযোগ তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। বিজেপির ফল নিয়ে মাতামাতি করার মতো কিছুই নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘কার উত্থান, কার পতন, সে সবাই দেখছেন। কেউ ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে পরীক্ষায় প্রথম হল। আর যে শূন্য পেত, সে ৩-৪ পেয়ে দ্বিতীয় হল, তাকে ভাল ছাত্র বলা যায় না।’’

প্রবল সন্ত্রাসের মাঝেও বিজেপি যে ভাবে মাথা তুলেছে বিভিন্ন জেলায়, তাতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন তৃণমূলকে রুখতে পারবে একমাত্র বিজেপি-ই। দিলীপ ঘোষ শুক্রবার এই মন্তব্য করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, বিজেপির টিকিটে জয়ী অনেক প্রার্থীই ইতিমধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেছেন। তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিতে চান বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। শুক্রবার দিলীপ তার পাল্টা বলেন, ‘‘তৃণমূলের অনেক নেতা-বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চাইছেন, কিন্তু মোদী সময় দিচ্ছেন না— এমন মন্তব্যও করেন দিলীপ ঘোষ।

দিলীপের এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় জবাব দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে পার্থ বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ নিজে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 BJP TMC Dilip Ghosh Mamata Banerjee Partha Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy