Advertisement
E-Paper

মনোনয়ন জমার সময়সীমা বাড়িয়েও পিছু হঠল রাজ্য নির্বাচন কমিশন

স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন সকালে নির্বাচন কমিশনের নয়া বি়জ্ঞপ্তি সামনে আসার পরই রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ১১:২৩

সব মিলিয়ে ১২ ঘণ্টাও হবে না। তার মধ্যেই দু’টি নির্দেশ জারি করলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। এবং প্রথম নোটিসে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, দ্বিতীয় নোটিসে নিজেই তা পত্রপাঠ বাতিল করে দিলেন। আইনি জটিলতাকেই তিনি এই নির্দেশ বাতিলের কারণ হিসাবে জানিয়েছেন। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রেও শাসকদলের চাপের মুখে মাথা নোয়ালেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ।

রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র পেশের শেষ দিন ছিল সোমবার অর্থাৎ ৯ এপ্রিল। কিন্তু, মনোনয়ন পর্বে গোটা রাজ্যেই অশান্তি এবং গণ্ডগোলের অভিযোগ ওঠে। বিরোধীরা বেশির ভাগ জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতেই পারেনি। এ সব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। সোমবারই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর কে অগ্রবাল ও অভয়মোহন সাপ্রের বেঞ্চ আট পাতার রায়ে জানায়, পঞ্চায়েত ভোটে তারা কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। তবে প্রার্থীরা যে কোনও প্রয়োজনে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারে।

কিন্তু, সোমবার দিনভর এ নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। পরে বেশ রাতের দিকে কমিশন নোটিস জারি করে জানায়, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার মেয়াদ আরও এক দিন বাড়ানো হল। বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত ফের মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে। সেই নোটিসে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখও ছিল। মঙ্গলবার সেই নোটিসই বাতিল করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার মেয়াদ বাড়ানোয় আদৌ কোনও আইনি জটিলতা ছিল কি?

আরও পড়ুন: কমিশন জমা নিলেও ঝুলে ১৪৩

এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের ব্যাখ্যা, ‘‘মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন এবং ভোটগ্রহণের দিনের মধ্যে কম করে ২১ দিনের ব্যবধান থাকতে হয়। যদি ৯ তারিখের বদলে ১০ তারিখ মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন হত, তা হলে সেই নিয়ম লঙ্ঘিত হত। সে ক্ষেত্রে ২১তম দিনেই অর্থাৎ ১ মে হত প্রথম দফার পঞ্চায়েত ভোট। ফলে বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তো থাকেই।’’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনীয় ২১ দিনের ব্যবধান না রেখে নির্বাচন হলে বিরোধীরা পরে আদালতে দ্বারস্থ হতে পারতেন। তার জেরে আদালত কোনও বিরূপ পদক্ষেপ করলে, ভোটের আগেই বিপুল সংখ্যক পঞ্চায়েত দখল করে নেওয়ার এই ‘পরিশ্রম’ মাঠে মারা যেত।

তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যদি সময়সীমা বাড়াতেই হত, তা হলে সোমবার বেলা তিনটের মধ্যেই নির্দেশ জারি করা উচিত ছিল। যে ভাবে কমিশন নির্দেশিকা জারি করেছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ভাবে সময়সীমা বাড়ানো যায় না।’’

এ প্রসঙ্গে অরুণাভবাবু বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যখন মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা এক দিন বাড়াল, তখন ভোটগ্রহণের তারিখটাও এক দিন পিছিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তা হলেই সমস্যা মিটে যেত।’’

সকাল থেকে বাড়ানো হয় কমিশনের বাইরে নিরাপত্তা। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আরও পড়ুন: নৈরাজ্যের রাজ্য, সমস্বর বিরোধীদের

তবে, এ দিন সকালে নির্বাচন কমিশনের নয়া বি়জ্ঞপ্তি সামনে আসার পরেই শাসক দল এবং রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল রাজ্যে গণতন্ত্র কী ভাবে লুণ্ঠিত হচ্ছে। খর্ব করা হচ্ছে মানুষের অধিকার।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, রাজ্য সরকারের চাপেই সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য হল নির্বাচন কমিশনের। সুজনের অভিযোগ, ‘‘সোমবার রাতে মনোনয়ন পত্র বা়ড়ানোর কথা ঘোষণার পরই রাজ্যের কয়েক জন মন্ত্রী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহের বাড়িতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকালেও ফের কয়েক জন মন্ত্রী হাজির হন তাঁর বাড়িতে। নির্দেশিকা বাতিলের জন্য তাঁকে রীতিমতে হুমকিও দেওয়া হয়।’’ এ দিন কমিশনকে মেরুদণ্ডহীন বলেও কটাক্ষ করেন সুজন। পরে কমিশনের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান বামেরা। যদিও সুজনের অভিযোগ নিয়ে কল্যাণের বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা বাজে কথা বলছে। আমরা বলতে পারি, বিরোধীদের চাপেই কমিশন বেআইনি এক নোটিস জারি করেছিল। আমরা আইনত তার প্রতিবাদ জানিয়েছি।’’

আরও পড়ুন: বিজেপির ভোট-মামলা খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

একই রকম ভাবে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব বিজেপিও। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কমিশনের উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করেছে রাজ্য প্রশাসন। এটা তারও ফল।’’ আর কত দিন অমরেন্দ্রকুমার সিংহ নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন বিজেপি সভাপতি। এ দিন বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি।

এ নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি প্রমাণ করছে গণতন্ত্র নেই রাজ্যে। আইনি পথেই এর মোকাবিলা হবে।’’

Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Elections 2018 West Bengal পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০১৮ Nomination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy