Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের মাসেই বাবা হব, ডিউটি কী ভাবে

তালিকায় নাম থাকলেই তো সেই ব্যাগ গুছিয়ে ব্যালট-বাক্স নিয়ে বুথের পথে হাঁটা। রাতে মশার জ্বালাতন। আর সকাল হলে তো কথাই নেই। অশান্তির ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকা দিনভর। এমনিতে এ বার পূর্ব বর্ধমানে গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্ধেকের বেশি আসনে ভোটের আগেই জিতে গিয়েছে শাসক দল।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:২৬
Share: Save:

কেউ ছুটছেন বর্ধমান শহরের জাগ্রত সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজো দিতে। কেউ যাচ্ছেন পড়শি জেলা বীরভূমের পাথরচাপুড়িতে দাতাবাবার মাজারে নতুন চাদর চড়াতে। লক্ষ্য একটাই, এ যাত্রায় যেন ভোটের ডিউটির তালিকা থেকে নাম কাটা যায়।

তালিকায় নাম থাকলেই তো সেই ব্যাগ গুছিয়ে ব্যালট-বাক্স নিয়ে বুথের পথে হাঁটা। রাতে মশার জ্বালাতন। আর সকাল হলে তো কথাই নেই। অশান্তির ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকা দিনভর। এমনিতে এ বার পূর্ব বর্ধমানে গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্ধেকের বেশি আসনে ভোটের আগেই জিতে গিয়েছে শাসক দল। কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতিও বিরোধীশূন্য। জেলা পরিষদের ৫৮টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনে তৃণমূল ছাড়া কোনও প্রার্থী নেই। ফলে এ বার ভোটের ডিউটির চাপ অনেকটাই কম।

তাতেও দিকে দিকে খোঁজ চলছে ডিউটি এড়ানোর ফিকিরের। বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর এলাকার এক স্কুল শিক্ষক কপাল ঠুকে জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, সন্তানসম্ভবা স্ত্রী বাড়িতে একা। মে মাসেই প্রসব হওয়ার কথা। তাঁকে একা ফেলে ভোটের ডিউটিতে যাওয়া কি ঠিক হবে? ওই মাসে জেলার আরও জনা পাঁচেক ভোটকর্মী একই সময়ে বাবা হতে চলেছেন! জেলা নির্বাচন কেন্দ্রের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, আবেদনকারীদের চিকিৎসকের শংসাপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। মাস কাটতে চলল, সেই শংসাপত্র জমা পড়েনি। নির্বাচন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কেউ কেউ তো ভেলোরে ব্লাড-সুগারের চিকিৎসার জন্য তড়িঘড়ি ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছেন। এমনও আবেদন পেয়েছি, যাতে বলা হয়েছে, তাঁদের মা-বাবা বা স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরু থেকে থেকে দিল্লির এইমস পর্যন্ত নাকি যেতে হবে! সব চিকিৎসাই ভোটের মাসে!’’

নাম কাটানোর জন্য কর্মীরা নিজেরা নির্বাচনী দফতরে না এসে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদেরও পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এমনই এক স্ত্রীর কাতর আবেদন, “স্যার, আমার উনি খুবই দুর্বল। পঞ্চায়েত ভোট মানেই তো অশান্তি। ও সামলাতে পারবে না। এ যাত্রায় ছেড়ে দিন।” অনেকটা একই ছবি নদিয়ায়। সেখানে অনেক ভোটকর্মী ডিউটি এড়াতে নির্দল প্রার্থী হিসাবেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে ২২ হাজার ভোটকর্মীর প্রয়োজন। সেই মতো ট্রেজারি অফিস থেকে তালিকা নিয়ে ভোটের চিঠি গিয়েছে। ১৫ হাজার ভোটকর্মীর প্রশিক্ষণও হয়ে গিয়েছে। জেলার এক আধিকারিকের টিপ্পনী, “মনোনয়ন পর্বে গোলমালের ছবি দেখে ভোটকর্মীদেরও বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। ভোটকর্মীদের জন্য বিভিন্ন দফতরের সামনে লিখতে হয়েছে, ‘এখানে নাম কাটানো হয় না’।” নির্বাচন দফতরের আধিকারিক সমরজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় দেখার জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইউনিট খোলা হয়েছে। তাঁদের রিপোর্ট পাওয়ার পরে নাম বাদ দেওয়া হবে।”

ভোটের ডাক পেয়ে টপাটপ বিয়ের তারিখও পড়তে শুরু করেছে। দু’জন বিয়ের জন্য অব্যাহতি চেয়েছেন। কর্তারা বিয়ের কার্ড চেয়ে পাঠিয়েছেন। এখনও পাননি বলেই খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE