বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হতেই বাংলায় আসন্ন বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরের পারদ আরও চড়তে শুরু করল। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বিশেষ সংশোধনের আড়ালে বিজেপির রাজনৈতিক সুবিধা করার জন্য ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে। এসআইআর-এর নামে সাধারণ মানুষের হয়রানি হলে প্রতিবাদ হবেই বলে সরব হয়েছে বাম ও কংগ্রেসও। অন্য দিতে, কেন্দ্রের শাসক তথা এ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির পাল্টা দাবি, ভোট-ব্যাঙ্কের কারণেই বিরোধীরা ভোটার তালিকা পরিচ্ছন্ন করা নিয়ে আপত্তি তুলছে।
তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের মতে, ‘‘ভোটার তালিকায় সংশোধন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এমন নয়, তা প্রথম বা নতুন হচ্ছে। কিন্তু এ বার সেই প্রক্রিয়ার আড়ালে হাজার হাজার ভোটারকে বাদ দিয়ে বিজেপির রাজনৈতিক সুবিধা করতে ষড়যন্ত্র চলছে বলে আমাদের আশঙ্কা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা তা বাস্তবায়িত হতে দেব না। কোনও রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়!’’
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলেছে বলে অভিযোগ সিপিএমেরও। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম শুক্রবার শিলিগুড়িতে বলেছেন, ‘‘এসআইআর রুটিন কাজ হলে আলাদা। এখানে প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে, এত লক্ষ লোককে বাদ দিতে হবে। এটা রাজনৈতিক ‘এজেন্ডা’। নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে করানো হচ্ছে।’’ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের সঙ্কোচন করা হচ্ছে, আরএসএস-বিজেপি ‘ফ্যাসিবাদী ধারা’ তৈরি করছে— এই অভিযোগ তুলে সেলিমের আরও বক্তব্য, ‘‘আধার কার্ড চালু করেছে দেশের সরকার। নির্বাচন কমিশন বলছে বৈধ ভোটারের প্রমাণ হিসেবে এই নথি মানা হবে না! রেশন কার্ড যদি জাল হয়, তার দায় তো রাজ্যের খাদ্য দফতরের। ভোটার হিসেবে বৈধ প্রমাণের নথি থেকে রেশন কার্ড বাদ দিয়ে হেনস্থার মুখে ফেলা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’’
মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার তাগিদে কংগ্রেস কর্মীদের এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী। কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, বুথে বুথে কারও নাম অন্যায় ভাবে কেটে দেওয়া হচ্ছে কি না, সেই দিকে নজর রাখতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে। ভিন্ রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার পাশাপাশি এসআইআর-এরও প্রতিবাদ করেছে আজ, শনিবার রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন যুব কংগ্রেসের নেতৃত্ব কমিটির অর্ঘ্য গণ, কাশিম রেজারা।
এমতাবস্থায় বিরোধীদের তুলোধোনা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাঁকুড়ায় ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’ করতে গিয়ে এই প্রশ্নে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘এসআইআর-এ বিরোধীদের আপত্তির কারণ ভোট-ব্যাঙ্ক। এরা দেশ-বিরোধী! কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় বলছেন, ‘আজাদ কাশ্মীর’। মহুয়া মৈত্র বলছেন, ভারত খারাপ, বাংলাদেশ ভাল!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সিপিএম-ও কম যায় না! যখন ভারত জল বন্ধ (পাকিস্তানের) করল, তখন মৌলালি থেকে ধর্মতলা মিছিল বার করল ওই ‘মাকু’রা। সেখানে সজল ঘোষ, সুরজ সিংহেরা কালি মাখিয়ে ছিল। আমি থাকলে আলকাতরা মাখাতাম!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)