E-Paper

বাঙালি হেনস্থা রুখতে পটনায় প্রস্তাব অধীরের

পটনায় বিহার কংগ্রেসের সদর দফতর ‘সদাকত আশ্রমে’ বুধবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা তুলেছেন গৌরব গগৈ।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:১৩
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠক। পটনায় বিহার কংগ্রেসের দফতর ‘সদাকত আশ্রমে’।

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠক। পটনায় বিহার কংগ্রেসের দফতর ‘সদাকত আশ্রমে’। —নিজস্ব চিত্র।

বিহারে বিধানসভা ভোটের মুখে পটনায় দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক নিয়ে গিয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। আর এক রাজ্য বাংলায় ভোটের আগে মেরুকরণের পরিকল্পনাকে কী ভাবে ধারালো করতে চাইছে বিজেপি, সেই প্রসঙ্গ উঠে এল ওই বৈঠকেই। উঠল বাংলাভাষী মানুষকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার ভাষ্যের প্রসঙ্গও।

সূত্রের খবর, পটনায় বিহার কংগ্রেসের সদর দফতর ‘সদাকত আশ্রমে’ বুধবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা তুলেছেন গৌরব গগৈ। তাঁর বক্তব্য ছিল, আগে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) নামে বিজেপি উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে মেরুকরণের জিগির তুলেছিল। এখন নতুন করে সেই চেষ্টা হচ্ছে। সেই সূত্র ধরেই অধীর চৌধুরী ব্যাখ্যা করেছেন, জনবিন্যাস বদলের অভিয‌োগ এনে নতুন মোড়কে মেরুকরণের তত্ত্ব পেশ করতে চাইছে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার। ভোটের আগে বাংলা ও অসমে তারা এই অস্ত্র কাজে লাগাবে। এক দিকে যাবতীয় দুর্দশা, অনাচারের জন্য অনুপ্রবেশকারীদের দোষ দিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকারের ‘ব্যর্থতা’ আড়াল করার চেষ্টা হবে এবং অন্য দিকে একই সঙ্গে মুসলিম-বিদ্বেষ তৈরি করে বিভাজনের রাজনীতিকে পোক্ত করা হবে। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও দলের নেতাদের সতর্ক করে বৈঠকে বলেছেন, কেন্দ্রের মোদী সরকার এবং পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যের বিজেপি সরকারগুলি ক্রমাগত ধর্মীয় মেরুকরণ এবং সাম্প্রদায়িক অনুভূতিকে উস্কে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লার ভাষণ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুপ্রবেশকারীদের কারণে দেশের জনবিন্যাস বদলে যাওয়ার কথা বলতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এই কারণে ‘ডেমোগ্রাফিক মিশন’ প্রকল্পও নিয়েছে।

গত কয়েক মাসে একের পর এক রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ এসেছে। কোথাও তাঁদের পুলিশ দিয়ে আটক করা হয়েছে, কোথাও মারধর করা হয়েছে। আবার কোথাও এ রাজ্য থেকে যাওয়া বাংলাভাষী শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে! এমন অভিযোগ পেয়ে কিছু দিন আগে হরিয়ানার পানিপথে গিয়ে বাঙালি শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ। সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটির বৈঠকে হরিয়ানার কংগ্রেস নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন অধীর। পাশাপাশিই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁর আর্জি, সব রাজ্যে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিকে বার্তা দিয়ে বলা হোক, কোথাও বাঙালিদের নিগ্রহের অভিযোগ এলেই তারা যেন সহায়তায় এগিয়ে যায়। মেরুকরণের লক্ষ্যেই ‘বাংলাভাষী ও বাংলাদেশি’র ভাষ্য নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অধীরের মত। সূত্রের খবর, পটনা যাওয়ার পথে দিল্লি বিমানবন্দরে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও কথা হয়েছে অধীরের।

নিয়োগ-দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি গিয়েছিল বাংলার প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর। তার পরে চাকরি-হারা শিক্ষকদের একাংশের সমস্যার কথা রাহুলের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। সূত্রের খবর, পটনার বৈঠকে অধীর অভিয‌োগ করেছেন, টেট-এর নামে ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের আবার পরীক্ষায় বসিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে ‘অপব্যবহার’ করা হচ্ছে। বাংলায় সীমাবদ্ধ শক্তি নিয়েও কংগ্রেস যে সংগঠন গড়ে তোলার দিকে নজর দিচ্ছে, সে কথা বৈঠকে বলেছেন প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Congress Adhir Ranjan Chowhury Bengali Migrant Worker

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy