Advertisement
E-Paper

দেড় ফুট দূরে চুপ করে আছে ভাগীরথী

নদীর গ্রাসে একটু একটু করে ধসে গিয়েছে রাস্তা। পনেরো ফুট চওড়া সেই রাস্তা এখন ফুট দেড়েক মাটি কামড়ে দাঁড়য়ে আছে। ফলে সে সড়কের চলাচল বন্ধ, আশপাশের বাড়িগুলিও পরিত্যক্ত চেহারা নিয়ে ভাগীরথীর গ্রাসের অপেক্ষায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০৩:০৩
এ ভাবে ধসে গিয়েছে রাস্তা।— নিজস্ব চিত্র

এ ভাবে ধসে গিয়েছে রাস্তা।— নিজস্ব চিত্র

নদীর গ্রাসে একটু একটু করে ধসে গিয়েছে রাস্তা। পনেরো ফুট চওড়া সেই রাস্তা এখন ফুট দেড়েক মাটি কামড়ে দাঁড়য়ে আছে। ফলে সে সড়কের চলাচল বন্ধ, আশপাশের বাড়িগুলিও পরিত্যক্ত চেহারা নিয়ে ভাগীরথীর গ্রাসের অপেক্ষায়।

দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে আছে বর্ষা। নদী যে তখন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রঘুনাথগঞ্জ-আজিমগঞ্জ ওই সড়ক তাই মানচিত্র থেকে এই বর্ষায় মুছে যাওয়ার অপেক্ষায়।

মাস পাঁচেক আগে রঘুনাথগঞ্জের বৈকুন্ঠপুরের কাছে ভাগীরথী লাগোয়া রঘুনাথগঞ্জ–আজিমগঞ্জ রাস্তাটির প্রায় দেড়শো মিটার অংশ ভাগীরথীতে ধসতে শুরু করে। তারপর যতদিন দিয়েছে ধস বেড়েই চলেছে। গ্রামবাসীরা জানান, সড়ক পথে রঘুনাথগঞ্জ থেকে আজিমগঞ্জ যেতে হলে এটাই একমাত্র পথ। এমনকী সাগরদিঘি ও রঘুনাথগঞ্জের প্রায় ৩০টিরও বেশি গ্রাম রয়েছে সেখানে যেতে হলে ওই রাস্তাই ভরসা। প্রায় ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পথটি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় একাধিক প্রকল্পে ভাগ করে তৈরি হয়। প্রায় ১৫ ফুট চওড়া ওই রাস্তা এমনিইতেই বেহাল হয়ে পড়েছে। তবু গাড়ি চলত। এ বার তাও বন্ধ।

খোসালপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধ দিল মহম্মদ বলেন, “বছর আটেক আগে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি তৈরি হয়। বছর কয়েক আগে ভাঙনের কবলে পড়ে ওই এলাকা। তখন পাথর দিয়ে স্পার বাঁধা হয়। এ বারে তাও ধসে পড়েছে।”

স্কুলশিক্ষক মইদুল ইসলাম বলছেন, “স্পার বাঁধানো ওই রাস্তা বার বার ধসে পড়ছে। এক বার পঞ্চায়েত মাটি ফেলে সারয়ে দেয়। কিন্তু এ বারে কারওই কোনও হেলদোল নেই।’’

এলাকার বাসিন্দা বদরুদ্দিন শেখ বলছেন, “এখন এই সড়ক পথের যানবাহন এসে থামছে এক পাড়ে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ওই অংশটুকু পায়ে হেঁটে ফের অন্য গাড়িতে চেপে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।’’

কিন্তু পাড় ভাঙছে কেন?

রাজ্য সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ররা অবশ্য জানান, নদীর মাঝখানে একটি বড় চর গজিয়ে উঠেছে। ওই চর থাকায় ভাগীরথীর স্রোত বইছে ডান পাড় ঘেঁসে। তাতেই ভাঙছে রাস্তা। রঘুনাথগঞ্জ ডিভিসনের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগের এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেচ দফতরের নদী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভাগীরথীর ওই পাড়ের জলস্তরের থেকেও আরও গভীরে পুরোনো মাটির স্তরেই গহ্বরের সৃষ্টি হয়েছে। গহ্বর আকারে বড় হলে উপরের পাড় ধসে পড়ছে।” যদিও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ধসপ্রবণ ওই রাস্তায় ইটভাটার মাটি ভর্তি লরি যাতায়াতের কামাই নেই। ভারি যান চলাচলের ফলেই বার বার ধস নামছে।

গ্রামবাসীদের দাবি, যতদিন না রাস্তা সারাই হচ্ছে ততদিন একটি ব্যারিকেড গড়ে দিক প্রশাসন যাতে বিপজ্জনক অংশটুকু পারা হওয়া যায়। ওই ভাঙা অংশের দু’পাশে লাগানো হোক আলো। হয়নি কোনওটাই। ফলে গত পাঁচ মাসে একের পর দুর্ঘটনায় কারও পা কারও হাত ভেঙেছে। অন্ধকারে রাস্তা বুঝতে না পেরে নীচে আছড়ে পড়েছে মোটরবাইক, রিকশা।

এ দিকে, যে বাড়িগুলি বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে সেই পরিবারগুলিকে যাতে পুনর্বাসন দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। গ্রামীণ চিকিৎসক আব্দুল আলিম বলেন, “শুধু ধস সারালেই তো হবে না। অন্তত ২০টি বাড়ি ঝুলে রয়েছে। সেই পরিবারগুলিকে সরিয়ে সরকারি জমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে। তা না হলে আসন্ন বর্ষায় বিপদ বাড়বে।’’

রানিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান অসিত দাস অবশ্য জানান, ওই রাস্তায় মাঝেমধ্যেই ধস নামে। বিকল্প রাস্তা গড়ার জন্য জেলা পরিষদ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রামের মানুষ জমি দিতে চাননি। সরে যাওয়ার জন্য ওই পরিবারগুলিকে ২ শতক করে জমি এবং পাকা বাড়ি তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু কাউকে সরানো যায়নি।

রঘুনাথগঞ্জ ডিভিসনের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগের এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেচ দফতর ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে রাজ্য সেচ দফতরে পাঠিয়েছে। নির্বাচনের জন্য তা আটকে রয়েছে। বরাদ্দ অর্থ মিললেই কাজ শুরু হবে।’’

সেই ভরসায় দিন গুনছে বৈকুন্ঠপুর।

Bhagirathi river Land-collapse Road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy