দার্জিলিঙে সিআরপির টহল। মঙ্গলবার। ছবি: রবিন রাই।
মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে আমরণ অনশনের হুমকি দিলেন গোর্খা লিগের সভানেত্রী ভারতী তামাঙ্গ। মঙ্গলবার গোর্খা লিগের প্রয়াত নেতা মদন তামাঙ্গের স্ত্রী ভারতীদেবীর ওই সিদ্ধান্তের কথা দলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গোর্খা লিগের তরফে সিবিআই-র ডিরেক্টর এবং জয়েন্ট ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়ে দ্রুত গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকরী করার জন্য বলা হয়েছে। এদিন ভারতীদেবী বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ জারির পর প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল। কেন দেরি হচ্ছে, তা বোঝাই যাচ্ছে না। পাঁচ বছর পর মামলার গুরুত্বপূর্ণ সময় এমন দেরি করাটা বাঞ্ছনীয় নয়। আমরা পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রাখছি। না হলে অনশনে বসব।’’
তবে সিবিআই মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় বিমল গুরুঙ্গ সহ মোর্চার ২৩ জন নেতার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের পরে গুরুঙ্গ-সহ ন’জন হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন সোমবার। মঙ্গলবার ওই মামলায় মোর্চার আরও দু’জন সদস্য আগাম জামিনের আবেদন করলেন হাইকোর্টে। মোর্চার আইনজীবী সায়ন দে জানান, এ দিন যাঁরা আগাম জামিনের আবেদন করেছেন, তাঁরা হলেন দীনেশ থিং ও দেবেন্দ্র শর্মা। ওই আইনজীবী আরও জানান, আজ, বুধবার অভিযুক্তদের আরও কয়েকজন আগাম জামিনের আবেদন করবেন।
গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘এ দিনই আমরা সিবিআইকে চিঠি দিয়েছি। তাতে খুনের মামলার অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। আমাদের আশা, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চিঠিটি সিবিআই অফিসারদের হাতে পৌঁছে যাবে। তার পরে আমরা ২৪ ঘন্টা দেখব, নইলে ভারতীদেবী অনশনে বসবেন।’’ লিগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না কেন দেরি হচ্ছে। হাইকোর্টের তরফে গ্রেফতারি পরোয়না জারি করে দেওয়া হয়েছে। তারপরেই সিবিআই কেন আদালতের নির্দেশ কার্যকারী করছে না, তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই সিবিআইকেই সরাসরি চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
গত ৬ জুন কলকাতায় আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয়। এর আগে সিবিআই-র তরফে আদালতে মামলার চার্জশিট পেশ করা হয়। নির্দেশ জারির দিন থেকে আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্দেশ কার্যকরী করার কথাও আদালত পরিষ্কার বলে দিয়েছে বলে লিগ সূত্রে জানা গিয়েছে।
চার্জশিটে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে কেন দেরি হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন পাহাড়ের তৃণমূলও। দলের পাহাড় কমিটির সভাপতি রাজেন মুখিয়া বলেন, ‘‘কে দোষী আর কে নয়, তা আদালতে প্রমাণ হবে। আপাতত আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, তা কার্যকরী করা দরকার। আমরা সবাই চাই, মদন তামাঙ্গের খুনিরা যেন কড়া শাস্তি পায়।’’
গত রবিবার গোর্খা লিগের তরফে সন্দেহ প্রকাশ করে জানানো হয়েছিল, তামাঙ্গ খুনের মামলায় অভিযুক্তরা উত্তর পূর্বাঞ্চল দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েও যেতে পারে। এই জন্য তাঁদের পাসপোর্টগুলি বাজেয়াপ্ত করাও দরকার। দলের দাবি, ‘‘উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে মোর্চার লোকজনের যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরা সেখানে নিয়মিত যাতায়াতও করেন। অসমের একটি অস্ত্র মামলার জড়িয়ে একজন জিটিএ সদস্য এখনও পলাতক।’’ এদিন কলকাতার আঞ্চলিক পাসপোর্ট দফতরেও লিগের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতাপ খাতি বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের পরে আমরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও চিঠি দিয়েছি। চার্জশিটে নাম রয়েছে, এমন অভিযুক্তদের পাসপোর্টগুলি বাজেয়াপ্ত করতে অনুরোধ করা হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, অভিযুক্তরা ‘বাইরে’ পালিয়ে যেতে পারে।’’
মোর্চার সহকারী সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাইয়ের পাল্টা দাবি, ‘‘আইন তো আইনের পথে চলছে। আমারা আইন, আদালতের উপর ভরসা রেখেছি। সেখানে গোর্খা লিগ চাপের রাজনীতি শুরু করেছে। এটাতে কিছুই মেনে নেওয়া হবে না। আর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার বিষয়টি সত্যিই হাস্যকর।’’
গত সোমবারের মতো এদিনও পাহাড় পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল। পর্যটকেরা স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করেছেন। দোকানপাট, বাজারঘাট খোলা ছিল। তবে বহু পর্যটকই পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন খোঁজখবরও করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy