Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Bhatar OC

সংসার চালাতে স্কুলে না গিয়ে ভিক্ষা! দুই নাবালক ভাইয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন ভাতার থানার ওসি

পুলিশ আধিকারিকের এই আচরণে মুগ্ধ ভাতারের বলগোনা। প্রসেনজিতের প্রশংসা করেছেন জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপও।

দুই নাবালকের বাড়িতে ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত।

দুই নাবালকের বাড়িতে ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ভাতার শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:০৩
Share: Save:

সকালে বাজারে গিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ দত্ত। তিনি ভাতার থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক। গিয়ে দেখেন, ভিক্ষা করছে দুই নাবালক ভাই। স্কুলে যাওয়ার সময় ভিক্ষা করতে দেখে তাদের কাছে গিয়েছিলেন ওই পুলিশ আধিকারিক। দুই নাবালকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, স্কুলে গেলে বাড়িতে কারও পেট চলবে না। তাই ওদের মা ভিক্ষা করতে পাঠিয়েছে! এর পর আর স্থির থাকতে পারেননি প্রসেনজিৎ। দু’জনকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যান। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রসেনজিৎ তাদের জানিয়ে দেন, দুই নাবালকের লেখাপড়ার খরচ এখন থেকে তাঁর! তাই দু’জন এ বার রোজ স্কুলেই যাবে। পুলিশ আধিকারিকের এই আচরণে মুগ্ধ ভাতারের বলগোনা। প্রসেনজিতের প্রশংসা করেছেন জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপও।

পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার ওসি প্রসেনজিৎ। বুধবার সকালে বলগোনা বাজারে ওই দুই নাবালকের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই নাবালককে দেখতে পেয়েই তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে যান তিনি। তাদের নাম-পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। জানতে চান কেন তারা এই কাজ করছে। দুই নাবালক ওসিকে জানায়, তাদের নাম ইসমাইল শেখ ও আশরাফিল শেখ। বাড়ি সন্তোষপুর গ্রামে। বাবা শেখ আশরোফ শারীরিক ভাবে অক্ষম। কাজে নেই তাঁর। ঘরে বসা। মা কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। যা রোজগার হয়, তাতে সংসার চলে না। তার মধ্যে পড়াশোনা! পেট চালাতে তারা বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করছে। এর পরেই পাশের মুদিখানা দোকান থেকে কিছু জিনিসপত্র কিনে দুই নাবালকের বাড়িতে যান প্রসেনজিৎ। তাদের মা চম্পা বিবির সঙ্গে কথাও বলেন। তাঁকে ওসি জানান, ইসমাইল আর আশরাফিলের পড়াশোনার দায়িত্ব তিনি নেবেন। দু’জনকে খাতাপেনও কিনে দিয়েছেন ওসি। পাশাপাশি দুই নাবালকের মা যাতে মাসে বাড়তি কিছু রোজগার করতে পারেন, সেই বিষয়টিও দেখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

চম্পাও জানান, তাঁর স্বামী শারীরিক ভাবে অক্ষম। জমি বিক্রি করে কোনও রকমে ঘর করতে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চম্পার কথায়, ‘‘লোকলজ্জার মাথা খেয়ে ছেলেগুলোকে ওই কাজে নামিয়েছিলাম। বড়বাবু (প্রসেনজিৎ) যে আশ্বাস দিয়ে গেলেন তাতে ওদের আর ওই কাজে পাঠাব না। পড়াশোনা করাব।’’

প্রসেনজিৎ অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। তবে থানা সূত্রে খবর, এই ঘটনা প্রথম নয়। এ কাজ হামেশাই করেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু সবটাই থাকে গোপনে। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এ কাজ শুধু পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে উদ্বুদ্ধ করবে না, সকলকেই উৎসাহিত করবে।’’ ওসির প্রশংসায় পঞ্চমুখ স্থানীয়েরাও। পড়শি আব্দুল সেলিম বলেন, ‘‘পুলিশ যে শুধু থানার কাজে ব্যস্ত থাকেন, তা নয়। তারা যে থানার বাইরেও কাজ করে, তা বড়বাবুকে দেখে জানলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhatar OC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE