Advertisement
E-Paper

Bikaner–Guwahati Express Derailment: আঙুল উঠছে পুরনো রদ্দি কোচের দিকেই

রেলের এক আধিকারিক জানান, আইসিএফ কোচে স্ক্রু-টাইপ কাপলিং ব্যবহার করার ফলে একটি কামরার দুলুনি অন্য কামরায় সঞ্চারিত হয় না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:০৪
লাইনচ্যুত বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। ভিড় স্থানীয়দের। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

লাইনচ্যুত বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। ভিড় স্থানীয়দের। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

চালকের ভুল? আচমকা ব্রেক? ব্রেক ফেল? ব্রেক জ্যাম? লাইনের ত্রুটি? না, অতি পুরনো রদ্দি কোচ?

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে এই সব প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে। এই সব প্রশ্ন ঘিরে আবার আঙুল উঠছে রেল পরিচালন ব্যবস্থার দিকেও। যাত্রী-সুরক্ষায় হরেক পদক্ষেপের গালভরা কথা দফায় দফায় ঢাকঢোল পিটিয়ে জানায় রেল মন্ত্রক। কিন্তু সেই সুরক্ষায় ফাঁকফোকর যে নেহাত কম নয়, এ দিনের দুর্ঘটনায় সেটা আবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা, তা এখনও স্পষ্ট না-হলেও প্রাথমিক ভাবে পুরনো কোচের ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। দুর্ঘটনার পিছনে লাইনের ত্রুটি থাকা অসম্ভব নয় বলেও জানাচ্ছেন রেলকর্তাদের একাংশ। কিন্তু ওই লাইন নতুন, সবে চালু হয়েছে। তা হলে লাইনের ত্রুটিতে দুর্ঘটনা, এ কথা বলা যায় কি না, সংশয় আছে রেলের অন্দরেই। প্রশ্ন উঠছে, নতুন লাইনে যদি ত্রুটি থেকেই থাকে, তার জন্য দায়ী কে বা কারা? তবে দুর্ঘটনার অভিঘাত অনেক বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে পুরনো আইসিএফ কোচ ব্যবহারের দিকেই আঙুল তুলছেন প্রাক্তন এবং বর্তমান রেল অফিসারদের একটি বড় অংশ। আইসিএফ কোচ খুব ভারী হওয়ায় দ্রুত গতিতে বাঁক নেওয়ার সময় কামরাগুলির ছিটকে আসার প্রবণতা তৈরি হয়। তাতেও দুর্ঘটনা ঘটে।

এ দিন নিউ জলপাইগুড়ি ছেড়ে আসার পরে নিউ দোমহনী স্টেশন পেরোনোর সময় ট্রেনটির গতি ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটারের কাছাকাছি ছিল বলে জানিয়েছেন আধিকারিকদের একাংশ। ওই স্টেশন পেরিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ২৪ কোচের ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। প্রাথমিক ভাবে প্রথম ১২টি কোচেই দুর্ঘটনার ধাক্কা লেগেছে। ইঞ্জিনের তেমন ক্ষতি না-হলেও তার ঠিক পরের স্লিপার কামরাগুলি উল্টে যায়। সাত নম্বর কোচের উপরে উঠে যায় ছ’নম্বর কোচ। বলা ভাল, সাত নম্বর কোচের একাংশ ছ’নম্বর কোচের ভিতরে ঢুকে গিয়েছে।

অভিযোগ, এ ভাবে টেলিস্কোপিক এফেক্টে (ভাঁজ করা দূরবিনের মতো একটি খোলের ভিতরে অন্য খোল ঢুকে পড়ার প্রবণতা) একটি কোচের অন্য কোচের ভিতরে ঢুকে যাওয়া আইসিএফ পুরনো কোচের দীর্ঘ কালের ব্যাধি। পঞ্চাশের দশকের সুইস প্রযুক্তিতে তৈরি ওই কোচে দুর্ঘটনার ভয়াবহতার কারণেই ভারতীয় রেলে তার উৎপাদন ২০১৮ সালের পর থেকে বন্ধ। তার বদলে জার্মানির অ্যালস্টম সংস্থার কাছ থেকে প্রযুক্তি নিয়ে দেশের মাটিতে এলএইচবি কোচ তৈরি করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। রেলের আধিকারিকদের একাংশের মতে, পুরনো আইসিএফ কোচে স্ক্রু-নির্ভর কাপলিং এবং ব্যবহৃত সাসপেনশন দ্রুত গতির অনুপযুক্ত। সরকারি ভাবে আইসিএফ কোচ ঘণ্টায় সর্বাধিক ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। কিন্তু লাইন বা কোচ রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি-গাফিলতির কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে গতি কম থাকলেও। বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের চালক আচমকা ব্রেক কষেছিলেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।

রেলের এক আধিকারিক জানান, আইসিএফ কোচে স্ক্রু-টাইপ কাপলিং ব্যবহার করার ফলে একটি কামরার দুলুনি অন্য কামরায় সঞ্চারিত হয় না। ফলে লাইনের কারণে কোনও কোনও কামরায় দুলুনি অস্বাভাবিক হতে পারে। সে-ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে কাপলিং বা বাফারে। গতিশীল অবস্থায় কোনও কামরা বেশি লাফিয়ে উঠলে তার সামনের কামরায় ধাক্কা মারার প্রবণতা তৈরি হয়। বাফার তা প্রতিরোধ করতে না-পারলে পিছনের কামরা সামনের কামরায় ঢুকে যায়।

কিন্তু এলএইচবি কোচের ক্ষেত্রে এইচ আকৃতির সিবিসি বা সেন্ট্রাল বাফার কাপলিং থাকায় তা বাফার এবং দু’টি কামরাকে যুক্ত রাখার কাজ করে একসঙ্গে। তখন কোথাও ঝাঁকুনি লাগলে তা পুরো ট্রেনেই সঞ্চারিত হয়। এর ফলে সব কামরা একই মাত্রায় ওঠানামা করে। এলএইচবি কোচে আর্টিকুলেটেড কন্ট্রোল আর্ম এবং ওয়াই সাসপেনশন থাকায় উপর-নীচের পাশাপাশি আড়াআড়ি দুলুনিও অনেক কম হয়। চার চাকার ফিয়াট বগির উপরে ছোটা এলএইচবি কোচ সব সময় লাইন থেকে উৎপন্ন ঝাঁকুনির সঙ্গে তাল রেখে ওঠানামা করে। তার ফলে দ্রুত গতিতে ট্রেন ছুটলেও চাকার লাইনের উপরে লাফিয়ে ওঠার আশঙ্কা অনেক কমে।

এক রেল আধিকারিক বলেন, ‘‘লাইনের ত্রুটি বা চালকের ভুলেও দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তদন্তের পরে আসল কারণ বলা সম্ভব। তবে ট্রেনটি এলএইচবি কোচের হলে সম্ভবত প্রাণহানি এড়ানো যেত।’’

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক গুনীত কৌর বলেন, ‘‘এলএইচবি কোচ সব ট্রেনেই বসানো হবে। তবে পর্যায়ক্রমে।’’ কবে ওই কাজ সম্পূর্ণ হবে? উত্তর মেলেনি।

Bikaner–Guwahati Express Maynaguri Train accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy