Advertisement
E-Paper

প্যারা-মেডিক্যাল কাউন্সিল গড়তে বিল, সুতো সরকারেই

শিক্ষার সর্বস্তরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগে বারবার বিদ্ধ হয়েছে রাজ্য সরকার। এ বার প্যারা-মেডিক্যাল কাউন্সিল গ়ড়ার জন্য নতুন বিল ঘিরেও সরকারের সেই আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অভিযোগে কোমর বাঁধছে বিরোধীরা।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৯

শিক্ষার সর্বস্তরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগে বারবার বিদ্ধ হয়েছে রাজ্য সরকার। এ বার প্যারা-মেডিক্যাল কাউন্সিল গ়ড়ার জন্য নতুন বিল ঘিরেও সরকারের সেই আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অভিযোগে কোমর বাঁধছে বিরোধীরা।

বিধানসভার চলতি অধিবেশনে আগামী সোমবার পেশ হতে চলেছে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যালায়ে়ড-মেডিক্যাল অ্যান্ড প্যারা-মেডিক্যাল কাউন্সিল বিল, ২০১৫’। বিল পেশ করছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে-থাকা স্বাস্থ্য দফতর। বিলের ঘোষিত লক্ষ্য— ফিজিওলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, অডিওলজিস্টদের মতো প্যারা-মেডিক্যালের নানা শাখাকে চিকিৎসকদের মতোই রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসা। যে সব প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তারাও পড়বে এই নতুন বিলের এক্তিয়ারে। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, প্যারা-মেডিক্যাল পেশাদারদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনেই তাঁদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্যারা-মে়ডিক্যাল কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। ঠিক যে ভাবে মেডিক্যাল কাউন্সিল চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার কাজ করে, প্রস্তাবিত কাউন্সিল প্যারা-মেডিক্যালদের জন্য সেই ভূমিকাই পালন করবে।

ঘোষিত লক্ষ্য নিয়ে বিতর্ক না থাকলেও বিপুলায়তন বিলটি হাতে পেয়ে প্রমাদ গুনছে বিরোধীরা। বিলের ১০ নম্বর অধ্যায়ে বলা হয়েছে, কাউন্সিল যাতে ঘোষিত লক্ষ্যে কাজ করে যেতে পারে, তার জন্য নানা সময়েই রাজ্য সরকার তাদের কাছে নির্দেশিকা পাঠাতে পারবে। নির্দেশিকা মেনে কাজ হচ্ছে কি না, সরকারই দেখবে। বস্তুত, নির্দেশিকা মেনে চলা কাউন্সিলের জন্য বাধ্যতামূলক। এমনকী, প্যারা-মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করতে না পারলে বা ক্ষমতার অপব্যবহার করলে অফিসিয়াল গেজে়ট বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার কিছু সময়ের জন্য কাউন্সিলকে সাসপেন্ড করতে পারবে এবং প্রয়োজনে ভেঙেও দিতে পারবে! কাউন্সিলে নির্বাচন কী ভাবে হবে, তার ব্যাখ্যাও বিলে আছে। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে কোনও জটিলতা দেখা দিলে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। কাউন্সিল গঠনের প্রথম তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন করাও যাবে না।

বিলের এই রকম কিছু বক্তব্য দেখেই বাম বিধায়কদের একাংশের আশঙ্কা, ‘‘স্বাস্থ্য প্রশাসন ও স্বাস্থ্য-শিক্ষার বেশ কিছু ক্ষেত্রে এখন ছড়ি ঘোরাচ্ছেন নির্মল মাজির মতো শাসক দলের নেতারা। এ বার প্যারা-মেডিক্যাল কাউন্সিল গড়ে সেখানেও আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ সেই সরকারি ব্যক্তিত্বদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে!’’ কংগ্রেসের এক প্রবীণ বিধায়কেরও বক্তব্য, ‘‘নানা বিষয়কে এক জায়গায় এনে ফেলে একটা জটিল বিল এবং তার থেকে আইন তৈরি করতে চাইছে সরকার। এ সবের মধ্যে সেই সরকারের হাতে সব কিছু কেন্দ্রীভূত করার ইচ্ছাই প্রবল।’’ বিলটি নিয়ে আলোচনার জন্য দু’ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করা হয়েছে সোমবার। কিন্তু বাম ও কংগ্রেস দুই শিবিরেরই মনোভাব, এমন গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিল আরও বিশদে খতিয়ে দেখার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। বিল নিয়ে আলোচনার সময় বিধানসভাতেই যা বলবেন বলে বিরোধীরা কেউ অবশ্য প্রকাশ্যে আগাম মুখ খুলছেন না।

বিলের ধারা-উপধারা অনুযায়ী, সরাসরি জনপ্রতিনিধিদের কোনও ভূমিকা অবশ্য কাউন্সিলে থাকছে না। সরকার যে সব সদস্যকে কাউন্সিলে মনোনীত করতে পারবে, তাঁদের সকলকেই স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য-শিক্ষা বা সংশ্লিষ্ট প্যারা-মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হবে। রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্যারা-মেডিক্যালে যাঁরা কাজ করেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই নতুন বিল আনা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, যে কোনও ভাল উদ্যোগেই খুঁত ধরা কারও কারও স্বভাব!’’

bill paramedical council Trinamool BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy