Advertisement
০৪ মে ২০২৪
elephant attack

ফের হাতি তাড়াতে যাবেন বাবা

বিষ্ণু দাস অর্জুন দাসের বাবা। অর্জুন বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলের পথে হাতির হানায় মৃত পরীক্ষার্থী।

Picture of Bishnu Das and Arjun Das.

বাড়ির উঠোনে এখানেই আনা হয় অর্জুনের দেহ। শুক্রবার সেখানে তুলসী গাছে জল ঢালছেন বাবা বিষ্ণু দাস (ইনসেটে অর্জুন)। ছবি: সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪৫
Share: Save:

দেরাজে পটকার বাক্স। টেবিলে নানা আকারের জোরালো টর্চ। এ সব কেন? প্রশ্ন শুনে সাদা থান-কাপড়ের খুঁট চোখে চেপে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন বিষ্ণু দাস। বেঁকে গেল নির্মেদ কালো ছিপছিপে শরীর। খানিক পরে বললেন, ‘‘আশেপাশে কোথাও হাতি এলে আমিই তাড়াতে যেতাম! হাতিই ছেলেটাকে নিয়ে গেল!’’ চোখে জোরালো আলো ফেললে ভয় পেয়ে হাতি পালিয়ে যায়, পটকার শব্দে ভয় পায়। তাই সে সব হাতের কাছেই রাখতেন বিষ্ণু দাস। বললেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, আলো ফেলা আর পটকা ফাটানো ছাড়া হাতি তাড়াতে গিয়ে কখনও ইট-পাথরও ছুড়িনি!’’

বিষ্ণু দাস অর্জুন দাসের বাবা। অর্জুন বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলের পথে হাতির হানায় মৃত পরীক্ষার্থী। জলপাইগুড়ি শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে মান্তান্দরি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহারাজঘাট, মিলনপল্লি, টাকিমারা এলাকার কোথাও হাতি ঢুকলে বিষ্ণু দাসের ডাক পড়াই নিয়ম। আশাকর্মী আশালতা সরকারের কথায়, ‘‘বিষ্ণু দাসের দারুণ সাহস। বুনো হাতির সামনে গিয়েও চোখে আলো ফেলতে ভয় পান না!’’ এই সাহসের কথা জানে বন দফতরও। বেলাকোবা বন বিভাগ থেকেই তাঁকে সরঞ্জাম দেওয়া হত।

শুক্রবার দুপুর। উঠোনে বসে বিষ্ণু বললেন, ‘‘কাল রাতেও পাশের গ্রামে হাতি এসেছে। আমার কাছে ফোনও এসেছে। ওঁরা বোধ হয় জানতেন না, কয়েক ঘণ্টা আগেই আমার কত বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর বাড়িতেই গত বছর এক রাতে হাতি ঢুকেছিল। তিনি তখন পাশের পুকুরে মাছ ধরছেন। খবর পেয়ে হুড়মুড়িয়ে এসে দেখেন, উঠোন থেকে একটি বড় হাতি বেরিয়ে আসছে। বিষ্ণু বলেন, ‘‘পিছন পিছন আলো-পটকা নিয়ে তাড়া করেছিলাম, যাতে অন্য কারও বাড়িতে ক্ষতি করতে না পারে।’’

মাটির দাওয়ায় বসে পড়শি মহিলারা। তাঁদের মধ্যে যমুনা দাসের বাড়িতেও মাসকয়েক আগে হাতি ঢুকেছিল। দেওয়াল ভেঙে ধান খেতে শুরু করেছিল। তিনি বললেন, ‘‘ঘরে আমি আটকা, কোলে নাতি। ঠকঠক করে কাঁপছি। খবর পেয়ে বিষ্ণু এসে হাতির চোখে আলো ফেলল! পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়িয়ে আমাদের উদ্ধার করল! সে দিন বিষ্ণু না থাকলে মরেই যেতাম!’’

যমুনার মুখে ‘মরেই যেতাম’ শুনে বিষ্ণু ঘুরে তাকান। আবারও চোখে জোয়ার। অস্ফূট শব্দে বললেন— ‘‘ছেলেটাকে তো বাঁচাতে পারলাম না, মাসি!’’

ফের যদি হাতি তাড়ানোর ডাক আসে, যাবেন? বিষ্ণুর উত্তর— ‘‘আমার ছেলেটার মতো অবস্থা আর যেন কারও না হয়! অবশ্যই যাব।’’ কিছুটা থেমে ফের বললেন, ‘‘ছেলেটাকে তো বাঁচাতে পারলাম না! আগের মতো সাহস পাব কি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elephant attack Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE